প্যারিস রোডের জায়গা: মাঠের পক্ষে ডিএনসিসি, গৃহায়ণের চাওয়া প্লট

চার দিনের মধ্যে সংস্থা দুটি পুলিশের মিরপুর বিভাগ ও পল্লবী থানায় অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরি করেছে; দেওয়া হয়েছে আইনি নোটিসও।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Oct 2022, 04:48 PM
Updated : 7 Oct 2022, 04:48 PM

খেলার মাঠ না কি প্লট হিসেবে ঢাকার মিরপুরের প্যারিস রোডের খালি জায়গায় আবাসিক স্থাপনা গড়ে তোলা হবে তা নিয়ে স্থানীয়দের আন্দোলনের মধ্যে বিষয়টি থানা পুলিশে গড়িয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষও এ নিয়ে বিপরীত অবস্থান নিয়েছে। চার দিনের মধ্যে সংস্থা দুটি পুলিশের মিরপুর বিভাগ ও পল্লবী থানায় অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে।

অপরদিকে থানায় জিডি করেছেন একজন প্লট মালিকও। আর সাতজন মালিকের পক্ষে ডিএনসিসির মেয়র ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে আইনি নোটিশও দেওয়া হয়েছে।

উত্তর সিটির ৩ নং ওয়ার্ডের প্যারিস রোড সংলগ্ন ৭৭ কাঠার জায়গাটিকে মাঠ হিসেবে খালি রাখার দাবিতে আন্দোলন করছেন স্থানীয়রা, অনশনেও বসেন তারা। তাদের একটি অংশ সেটিকে মাঠ ঘোষণা দিয়ে সাইনবোর্ডও টানিয়ে দেয়। এরমধ্যেই ঘটে পুলিশে অভিযোগ ও জিডি এবং আইনি নোটিসের ঘটনা।

ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলামও চান খালি জায়গাটি মাঠ হিসেবে ব্যবহার করা হোক।

দীর্ঘদিন থেকে খালি পড়ে থাকা এ জায়গা নিয়ে টানাটানির বিষয়টি সামনে আসে গত ১৮ সেপ্টেম্বর; যখন সেখানে আবাসনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া ৩২ প্লটের দখল নিতে হাজির হয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। তারা স্থানীয় ও বস্তিবাসীদের বাধার মুখে পড়ে। গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের দাবি, প্লটগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৯৯৬ সালে।

আর গত বৃহস্পতিবার পল্লবী থানায় এ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃপক্ষ। জায়গাটিকে মাঠ হিসেবে দাবি করে করপোরেশনের সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদ ফারজানা ববি ডায়েরিতে ওই স্থানকে ‘যারা প্লট হিসেবে ব্যবহার করতে চান বা দখল নেওয়ার চেষ্টা করছেন’ তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান।

আইনি নোটিস এখনও পাননি জানিয়ে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ড্যাপে জায়গাটিকে উন্মুক্ত স্থান হিসেবে দেখানো হয়েছে।

অপরদিকে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের দাবি, ১৯৯৬ সালে এ জায়গা প্লট হিসেবে ৩২ জনের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। প্রতিটি প্লটের আকার পৌনে দুই কাঠা। সব মিলিয়ে জমির পরিমাণ ৭৭ কাঠা। দীর্ঘদিন ওই প্লটে যেতে পারেননি প্লট গ্রহীতারা। সেখানে বস্তি গড়ে উঠেছিল। সবশেষ গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্লটের দখল নিতে সেখানে গেলে স্থানীয় ও বস্তিবাসীরা বাধা দেয়।

আর গত ২৯ সেপ্টেম্বর জায়গাটিকে খেলার মাঠ দাবি করে তা পুনরুদ্ধারের দাবিতে কয়েকটি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা অনশন কর্মসূচি পালন করেন। মেয়র আতিক সেখানে উপস্থিত হয়ে অনশনকারীদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে মাঠটি উদ্ধারের ঘোষণা দেন।

এরপর গত সোমবার ৩ অক্টোবর সেখানে কে বা কারা বালু ও মাটি ফেলে ভরাট করে ‘শেখ ফজলুল হক মনি মাঠ’ নামে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়। মাঠের বাস্তবায়নকারী মেয়র আতিকুল ইসলাম, প্রস্তাবকারী সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ এবং সার্বিক তত্ত্বাবধানে কাউন্সিলর জহিরুল ইসলামের নাম লেখা।

ওইদিনই গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী (মিরপুর গৃহসংস্থান ২) কাওসার মোর্শেদ পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়ে ‘৩২টি প্লটের জায়গা মাটি ভরাট করে দখলের পায়তাঁরা করছে’ জানিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন।

ওইদিন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. ইসমাঈল খান প্লট বরাদ্দ পাওয়া সাত জন মালিকের পক্ষে আইনি নোটিস দেন। এতে প্লটের জায়গায় মাটি ভরাট করে ‘জোরপূর্বক খেলার মাঠ তৈরি’ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।

এর আগের দিন ২ অক্টোবর গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী সালওয়া জামান পল্লবী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এতে দাবি করা হয়, প্যারিস রোড সংলগ্ন ৩২টি ‘ডুইপ আবাসিক প্লট’ বরাদ্দ দিয়ে দখল হস্তান্তরসহ লিজ দলিলও করা হয়েছে।

জিডিতে মাটি ভরাট করে ‘দখলের পায়তাঁরা’কে বেআইনি উল্লেখ করে সরকারি সম্পত্তি সম্পত্তি রক্ষায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়।

আর সবশেষ বৃহস্পতিবার ডিএনসিসির করা সাধারণ ডায়েরিতে দাবি করা হয়, ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) জায়গাটিকে উন্মুক্ত স্থান হিসেবে দেখানো হয়েছে। এছাড়া সেকশন ১১ এর ১৯৮৭ সালের লে আউট প্ল্যানে ওই স্থানকে উন্মুক্ত হিসেবে দেখানো হয়েছিল।

ওই স্থানটি এলাকাবাসীর নাগরিক পরিষেবার অংশ হিসেবে শিশু কিশোরদের খেলাধূলা ও মানসিক মেধা বিকাশের জন্য খেলার মাঠ হিসেবে উন্নয়ন করা প্রয়োজন বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়। উন্মুক্ত স্থানটি ‘দখলকারীদের’ বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়।

শুক্রবার এ বিষয়ে মেয়র আতিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ড্যাপে জমিটি উন্মুক্ত জায়গা হিসেবে দেখানো হয়েছে। এ কারণে জায়গাটিকে মাঠ হিসেবে তৈরি করতে চান তিনি।

তিনি বলেন, “মাস্টারপ্লানে জায়গাটি উন্মুক্ত স্থান হিসেবে দেখানো হয়েছে। সবশেষ ড্যাপেও জায়গায়টি উন্মুক্ত স্থান হিসেবে বলা হয়েছে। খালি জায়গা গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ কয়েকজনকে প্লট বানিয়ে বরাদ্দ দিয়ে ফেলেছিল। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি মানছে না।

“এখানে আমার কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নেই। ঢাকায় এমনিতেই মাঠ নেই দম ফেলার জায়গা নেই। মানুষ যাবে কোথায়? এখানে খেলার মাঠ, পার্ক হলে সাধারণ মানুষের বিনোদনের জায়গা হবে।”

এ বিষয়ে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কারও বক্তব্য জানা যায়নি। সংস্থার নির্বাহী প্রকৌশলী (মিরপুর গৃহসংস্থান বিভাগ-২) কাওসার মোর্শেদকে মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।