কর্মসূচি ঘিরে ওই এলাকায় বিপুল পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবে পরিস্থিতি সকাল থেকে শান্ত আছে।
Published : 03 Aug 2024, 05:39 PM
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে সংঘাতে প্রাণহানির বিচার ও গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীদের মুক্তিসহ নানা দাবিতে ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামেও বড় জমায়েত হয়েছে।
শনিবার চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট মোড়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেছে আন্দোলনকারীরা। সেখানে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষও যোগ দিয়েছে।
বেলা ৩টার আগে থেকেই নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নিউ মার্কেট মোড়ের শহীদ কামাল উদ্দির চত্বরে এসে ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। বিকাল ৫টা পর্যন্ত নিউ মার্কেট মোড় এলাকা এবং এর আশেপাশের এলাকায় পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের অংশগ্রহণ দেখা গেছে।
আন্দোলনকারীদের অবস্থানের কারণে নিউ মার্কেট মোড়ের চারদিকের সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। অবশ্য সাপ্তাহিক ছুটির দ্বিতীয় দিন সকাল থেকে নগরীতে যান চলাচল এমনিতেই বন্ধ। শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির কারণে টানটান উত্তেজনাও ছিল।
আগের কর্মসূচিগুলোতে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন থাকলেও শনিবারের কর্মসূচি ঘিরে ওই এলাকায় কোনো পুলিশের দেখা মেলেনি। আন্দোলনকারীরা জিপিও মোড়, আমতল, স্টেশন রোড এলাকার দিকে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। একপর্যায়ে সদরঘাট কালীবাড়ি মোড়ের দিকে পুলিশের একটি দল অবস্থান নিলেও পরে তারাও সরে যায়।
চট্টগ্রামের কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীরা 'ভুয়া ভুয়া’, ‘বোত দিন হাইয়ো, আর নঅ হাইয়ো’ (অনেক দিন খেয়েছ, আরও খেও না), ‘চেয়েছিলাম অধিকার হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’সহ নানা স্লোগান দেন।
ঘটনাস্থলে আন্দোলকারীরা কোনো সাংবাদিককে দাঁড়াতে দেননি। বেলা সোয়া ৫টার দিকে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ স্টেশন রোড হয়ে টাইগার পাসের দিকে চলে যায়। ২০ মিনিটের মত টাইগার পাস মোড়ে অবস্থান নিয়ে তারা সন্ধ্যা সোয়া ৬টার পর ওয়াসার দিকে চলে যায়।
এসময় টাইগার পাস সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেলে অফিস ফেরত লোকজন ভোগান্তিতে পড়েন। অনেকেই গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে ছোটেন।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি জোন) অতনু চক্রবর্ত্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আন্দোলনকারীরা নিউ মার্কেট মোড়ে বসে বিক্ষোভ করেছে। পরে সেখান থেকে তাদের একটি অংশ টাইগার পাস মোড়ের দিকে চলে যায়। নিউ মার্কেট মোড়ে বসে তারা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিলেও শান্তিপূর্ণ অবস্থানে ছিল।”
শিক্ষার্থীদের কোটা নিয়ে আন্দোলনে গত ১৮ জুলাই থেকে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। সেদিন সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় একযোগে হামলা হয়, সেদিন থেকে টানা চারদিন সংঘর্ষে সরকারি হিসাবেই দেড়শ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
সংঘাত থামার পর পুলিশি অভিযানে কয়েক হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়, তাদের একটি বড় অংশই শিক্ষার্থী।
এরপর থেকে শিক্ষার্থীরা হত্যার বিচার দাবি, গ্রেপ্তার অভিযান বন্ধ, মামলা প্রত্যাহার গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি সামনে নিয়ে এসেছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনও যোগ দিয়েছে, অভিভাবকরাও।
শুক্রবার ঢাকায় একটি কর্মসূচিতে বামপন্থি অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ সরকারকে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগের আহ্বান জানান। এরপর শিক্ষার্থীদের সংগঠন বৈষম্যমূলক ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে শনিবার বিক্ষোভ ও রোববার থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক এসেছে।
এই আন্দোলনের ব্যাখ্যায় বিদ্যুৎ-গ্যাস বিল বন্ধ ও সরকার পতনের কথা বলেছেন একজন সমন্বয়ক।
শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদেরকে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তবে সমন্বয়কদের একজন নাহিদ ইসলাম ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন, “খুনি সরকারের কাছে বিচার চাওয়া বা সংলাপে বসারও সুযোগ আর নেই। ক্ষমা চাওয়ার সময়ও পার হয়ে গেছে। যখন সময় ছিল তখন সরকার ব্লক রেইড দিয়ে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করেছে, নির্যাতন করেছে। আখতার হোসেন, আরিফ সোহেলসহ রাজবন্দিদের কারাগারে রেখে আমরা কোনো ধরনের সমঝোতায় যাব না।”