এর মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে থানায় অবস্থানের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।
Published : 26 Oct 2024, 10:05 PM
রোজকার চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি এবং হতাহতের ঘটনায় অতিষ্ঠ হয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরে একদল মানুষ থানায় গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে ৭২ ঘণ্টার সময় বেধে দিয়েছে।
এর মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে থানায় অবস্থানের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।
শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে ৬০ জনের মতো একটি দল থানায় গিয়ে নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে পাঁচ দফা দাবি জানান।
পুলিশের কাছে দাবি উত্থাপনকারীদের একজন পারভেজ হাসান সুমন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “৫ অগাস্টের পর পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণে ছিনতাইকারী ও কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বেড়ে গেছে। আমরা এই অবস্থা থেকে মুক্তি চেয়ে মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে এডিসি ও ওসির কাছে আমাদের দাবির কথা তুলে ধরেছি।”
মোহাম্মদপুরের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে করণীয় নির্ধারণ করতে ও বাসিন্দাদের সহায়তা চেয়ে রোববার স্থানীয়দের সঙ্গে পুলিশ বৈঠক করতে চেয়েছে বলেও জানান তিনি।
পারভেজ হাসান বলেন, “একটা সময় নির্ধারণ করে পুলিশের সঙ্গে বসব। আর তারা বলেছে তিন দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবে।”
কী দাবি
মোহাম্মদপুরবাসীর পক্ষ থেকে থানার কাছে মোট পাঁচটি দাবি তুলে ধরা হয়।
এগুলো হল:
# ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মোহাম্মদপুর সংশ্লিষ্ট এলাকায় ছিনতাই ও ডাকাতি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
# মোহাম্মদপুরের সন্ত্রাসপ্রবণ এলাকায় পুলিশের টহল বাড়াতে হবে ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
# গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্তদের ব্যাপারে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ ও নিশ্চিত করতে হবে।
# কিশোর গ্যাং, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ‘অপতৎপরতা’, চাঁদাবাজি ও সহিংসতা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে:
এবং
# জনসাধারণের নিরাপত্তা আইনি সহায়তা নিশ্চিত করা ও তাদের হয়রানি বন্ধ নিশ্চিত করতে হবে।
‘দাবি যৌক্তিক’
এই দাবিগুলোকে ‘অত্যন্ত যৌক্তিক’ মন্তব্য করে ঢাকা মহানগর পুলিশ- ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ জিয়াউল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মোহাম্মদপুরের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আমরা স্থানীয়দেরও সহায়তা চেয়েছি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় বাড়তি ফোর্স মোতায়েনসহ টহল কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে।
মোহাম্মদপুরে ব্যাংক থেকে গ্রাহকের লাখ টাকা চুরি
“তাদের প্রত্যেকটা দাবির সঙ্গেই আমরা একমত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা স্থানীয়দের সহায়তা চেয়েছি। স্থানীয়দের সঙ্গে কীভাবে কী করা যায় এসব আলোচনার জন্য আমরা বসব।”
যা যা ঘটছে
গত ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর পুলিশের উধাও হয়ে যাওয়ার পর ঢাকা শহরের আনাচে কানাচে দেখা দিয়েছিল ডাকাত আতঙ্ক। মোহাম্মদপুর তার বাইরে ছিল না। সে সময় রাত জেগে বা দিনের বেলায় স্থানীয়রা পাহারা দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
এরপর ধীরে সুস্থে ফিরেছে পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেটি পাওয়া সেনাবাহিনীও নিরাপত্তার দিক দিয়ে অবদান রাখছে। তবে মোহাম্মদপুরের কোনো উন্নতি নেই, বরং দিনকে দিন পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো বেশ কিছু ভিডিও তুমুল আলোচনা তৈরি করেছে, সেই সঙ্গে ছড়িয়েছে আতঙ্ক।
দিনের বেলায় চাপাতি-ছুরি ঠেকিয়ে ছিনিয়ে নিল ১২ লাখ টাকা
মোহাম্মদপুরে বাজার কমিটির দ্বন্দ্বে ২ ভাইকে গুলি
এমনকি মোহাম্মদপুর ছেড়ে নগরীর অন্য এলাকায় বাড়ি ভাড়া করার চেষ্টাও করছেন অনেকে, মোহাম্মদপুরে কাজ শেষ হওয়ার পরেও ফাঁকা বাড়িগুলো ভাড়া হচ্ছে না, এমন তথ্যও মিলছে।
শুক্রবার রাতে বসিলায় একটি মিনি সুপারশপে অস্ত্রধারীদের ঢুকে ডাকাতির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
একই রাতে ঢাকা উদ্যান এলাকায় ‘গণ ছিনতাই’ তার দুই দলের মধ্যে সশস্ত্র মহড়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুরে শাহীন ও রিয়াজ নামে ওয়ার্ড বিএনপির দুই নেতাকে কুপিয়ে আহত করা হয়।
মধ্যবিত্তের মোহাম্মদপুর অপরাধীদের তীর্থক্ষেত্র হয়ে উঠল কেন?
২০ অক্টোবর মোহাম্মদদীয়া হাউজিং লিমিটেড এলাকার সড়কে ‘নেসলে’ কোম্পানির একটি গাড়ি থামিয়ে ছুরি-চাপাতির মুখে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ও ১৭ হাজার টাকার চেক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
আগের রাতে শিয়া মসজিদ এলাকায় বাজার কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বে আবুল হোসেন ও মাহবুব হোসেন নামের দুইভাইকে গুলি করা হয়।
জেনিভা ক্যাম্পে ফের গুলি, নিহত ১
জেনিভা ক্যাম্প: শতকোটির মাদক সাম্রাজ্য নিয়ে প্রাণক্ষয়ী সংঘাত
১৭ অক্টোবর মোহাম্মদপুরের বেড়ীবাঁধ সংলগ্ন গ্রিন ভিউ হাউজিংয়ের সড়কে শাহাদত হোসেন নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এর দুদিন পরেই একই এলাকায় নাসির বিশ্বাস ও মুন্না নামে দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
১৬ অক্টোবর বসিলায় শাহরিয়ার আশিক নামে এক অটোরিকশার চালককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
এছাড়া ফাঁকা সড়কে কখনও সকালে, কখনও সন্ধ্যা বা রাতে এমনকি ভর দুপুরেও ছিনতাইয়ের ভিডিও ছড়িয়েছে। দোকানে বসে থাকা মানুষদেরকে কুপিয়ে একদল মানুষের অবলীলায় চলে যাওয়ার দৃশ্যও দেখা গেছে।
মধ্যবিত্তের মোহাম্মদপুর অপরাধীদের তীর্থক্ষেত্র হয়ে উঠল কেন?
এসব ঘটনায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকের কাছে নিজেদের অসহায়ত্বের কথাই প্রকাশ করেছেন একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা।