ফাহিমের লায়লা এখন আমাদের কাছে

সালেহ উদ্দিন আহমদ
Published : 4 Sept 2021, 07:58 AM
Updated : 4 Sept 2021, 07:58 AM

ফাহিমের বয়স হয়তো তখন দু'বছর। আমাদের দাহরান (সৌদি আরব) বাসার মর্নিংরুমের কাচের দেয়ালের এপাশে বসে ফাহিম একটা বিড়ালের অপেক্ষা করত। বিড়ালটি যখন বাইরে দিয়ে কাচের ওপাশে বসত, ওরা দুজন বসে বসে খেলত। ফাহিম কাচের উপর হাত দিয়ে ওর সাথে নানান কথা বলত, বিড়ালটিও মিউ মিউ শব্দ করে পা নেড়ে জবাব দিত। কাচের দেয়ালটিকে ওরা দুজনেই দারুন ভাবে অগ্রাহ্য করত। দিনের পর দিন আমরা এই সুন্দর দৃশ্যটা দেখেছি।


ছোট্ট ফাহিম এবং তার বন্ধু একটা বিড়াল। দাহরান, সৌদি আরব

ফাহিম যখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে তখন আমরা নিউইয়র্কের রচেস্টার শহরে থাকি। ফাহিম ওর মায়ের কাছে আবদার করলো ও একটা পোষা কুকুর রাখতে চায়। আমি জানতাম এটার পরিণাম কি হবে! সংক্ষেপে বলতে গেলে, এক কথায় নাকচ।

ফাহিমের মা রায়হানাকে যারা জানেন, তারা সবাই বলবেন, আমাদের বাড়িতে পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতার খুব কড়া নিয়ম কানুন রয়েছে। এর পক্ষে বিপক্ষে আমরা অনেক বাদানুবাদ করেছি, কিন্তু নিয়েমের কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমি হাল ছেড়ে ব্যাপারটা ওকে ছেড়ে দিয়েছি। ফাহিম অনেকভাবে চেষ্টা করলো, কিন্তু কোনো লাভ হলো না। আমিও ওর মাকে, অনেকভাবে বোঝালাম, কুকুর নিয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার ব্যপারগুলো আমি দেখব। কিন্তু ফাহিমের মায়ের মতের কোনো পরিবর্তন হলনা। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, এই ব্যাপারটায় রায়হানা আমার উপর কখনো ভরসা করতে পারেনি। কিছুদিন পর ফাহিমের দাবী কুকুর থেকে বিড়ালে নেমে এল। এরপর একটা পোষা পাখিতে। কিন্তু ওর মায়ের অনুমতি মিলল না। ফাহিম দারুণ মন খারাপ করল। আমিও দারুণভাবে আহত হলাম। একটা টার্বো গ্রাফিক্স ভিডিও গেম ছাড়া ফাহিমকে খুশী করার তেমন কিছু খুঁজে পেলাম না।

কয়েকদিন পর, আমি ও ফাহিম একটা ছোট্ট মাছের এ্যাকুরিয়াম কিনে আনলাম। ভিতরে চার পাঁচটা রং বেরঙের টুকটুকি মাছ। সাথে কিছু মাছের খাবারও আনলাম। ফাহিমের আনন্দের শেষ নেই! মনে হলো ফাহিম ভুলে গেছে পোষা কুকুর বিড়ালের কথা। পোষা মাছ নিয়ে ও দারুণ খুশি। মাছগুলোকে সময়মতো খাবার খেতে দেয়। মাঝে মাঝে পানি বদলায়। দু'দিন পর একটা মাছ মরে গেলো। ফাহিমকে নিয়ে ওর পছন্দের আর একটা মাছ কিনে আনলাম। কয়দিন পর আমরা বাপ-ছেলে বুঝলাম, সম্ভবত: মাছ পোষা কুকুর বেড়ালের চেয়েও কঠিন। হয়তোবা ছোট্ট ফহিমের অতিরিক্ত উৎসাহ ওরা পছন্দ করেনি। অথবা অতিরিক্ত খাবার দুর্ভাগ্য ডেকে আনলো। একে একে সব মাছ মরে গেলো। ফাহিম খুব দুঃখ পেলো। যেদিন শেষ মাছটা মরে যায়, সে দারুণভাবে কান্না করছিলো।

কিন্তু ছেড়ে দেয়ার পাত্র ফাহিম সালেহ নয়। এরমধ্যে ফাহিম প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চলে এসেছে। পোষা প্রাণী রাখার নতুন বুদ্ধি ওর মাথায় এলো। এবার ইলেকট্রনিক পোষা কুকুর। এসব ভার্চুয়াল প্রাণীদের নিয়ে ঝামেলা কিছুটা কম, তবে ওদেরকেও নিয়মিত খাওয়াতে হবে, সময়মতো ঘুম পাড়াতে হবে। ওদের যেন আর এক জগৎ, ফাহিমই এই ভার্চুয়াল প্রাণীদের সাথে আমাকে পরিচয় করালো, ওদের সাথে ওর প্রথম পরিচয় ভিডিও গেমসের মাধ্যমে। এখন ওদেরকে নিয়ে এলো ওর নিজের ঘরে। ভার্চুয়াল কুকুরের নাম রাখা হলো 'ট্যাকনো'। ট্যাকনো নিয়ে ফাহিমের কতদিন উৎসাহ ছিলো এখন মনে নেই, সম্ভবত খুব বেশী দিনের নয়। ফাহিম এর মধ্যে ভিডিও গেমস, কম্পিউটার গেমস ও নানান রকম কম্পিউটার প্রোগ্রাম নিয়ে সময় কাটাতে শুরু করেছে।

কিন্তু পোষা কুকুর ও বিড়াল নিয়ে ওর উৎসাহ কখনো কমেনি। কোনো বাড়িতে এদেরকে পেলেই সে ওদের সাথে অনেক সময় কাটাত। মাঝে মাঝে আশা বেঁধে ওর মায়ের কাছে আবার আবদার জানাত। কিন্তু কোনভাবেই মাকে রাজি করাতে পারেনি। সব ছেলেমেয়েরা সম্ভবত: বাপ মা যে ইচ্ছেগুলো পূরণ করেনি, আশা করে থাকে, বড় হলে তারা নিজেরাই এক সময়ে সেগুলো পূরণ করবে। ফাহিমের ক্ষেত্রেও তাই, তবে তাকে বেশ অপেক্ষা করতে হলো।

২০১৭ সালে ম্যানহাটনের মিড টাউনে ফাহিম একটা বড় এ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিল। তখনই ওর মনে হলো, একটা পোষা কুকুর ঘরে আনার। ফাহিমের ছোটকালের উৎসাহ দ্বিগুণ হয়ে ভর করলো। শুরু হলো কুকুর বাছাই করার পালা। ফাহিম কেনাকাটা করে সব ইন্টারনেট থেকে। দোকানপাটে ঘোড়ার অভ্যেস ওর খুব ছিল না। ইন্টারনেট থেকে কিছু অর্ডার দেয়ার আগে ও বেশ যাচাই বাছাই করে নিত। কুকুরের ব্যাপারে বেশিরভাগ আলাপ আলোচনা ও ওর আদরের ছোট বোন রিফুর সাথেই করলো। ও জানে এ ব্যাপারে আমাদের অভিজ্ঞতা ও উৎসাহ অনেকটা শূন্যের পর্যায়ে।

একদিন হঠাৎ ফাহিমের ফেইসটাইম ভিডিও কল পেলাম, সাথে সোফার পাশে বসে রয়েছে তুলতুলে ছোট্ট একটা কুকুর। দারুণ আদুরে চেহারা। ফাহিম জানালো এটা ইন্টারনেট থেকে নিয়েছে। দুই মাস বয়স, এটা 'পমস্কি' জাতের মেয়ে কুকুর, নাম রেখেছে 'লায়লা'। ফাহিম লায়লাকে নিয়ে দু'একটা লাফ-ঝাপ দেওয়াবার চেষ্টা করলো, ‍কিন্তু ছোট্ট লায়লা তখনো কোনো খেলা শিখেনি। চুপ করে বসে রইল। আমরা ফাহিমকে ‍খুশি করার জন্যে খুব করে লায়লার প্রসংশা করলাম। ফোন ছাড়ার পর দেখলাম ফাহিমের মায়ের চিন্তা বেশ বেড়ে গেলো। এরপর ফাহিমের বাসায় কিভাবে যাবে? গেলেও নামাজ পড়তে পারবে কিনা? লায়লা ফাহিমের বাসার কার্পেটগুলোকে নিশ্চয় খুব নোংড়া করে ফেলবে, বা কমড়ে টুটোফুটো করবে ইত্যাদি।

আমরা একদিন ফাহিমের বাড়িতে গেলাম। ফাহিম খুব উত্তেজিত—লায়লার সাথে বাবা মায়ের পরিচয় হবে! কুকুর বিড়ালকে কিভাবে পোষ মানিয়ে আপন করে নিতে হয় এ নিয়ে আমাদের কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। সুতরাং আমরা বেশ আড়ষ্ঠ বোধ করলাম। ফাহিমের এ্যাপার্টমেন্টের দরজা দিয়ে ঢুকেই বিপদ ঘটলো, লায়লা লাফিয়ে পড়ল রায়হানার গায়ের উপর। ফাহিম যতোই সরিয়ে নিতে চায় লায়লা ততোই বড় লাফ দিয়ে রায়হানার কোলে উঠতে চায়। কি যে বিপদ! মায়ের দুর্গতি ফাহিমও খুব উপভোগ করছে, হো হো করে হাসছে, আর মাকে অভয় দিচ্ছে। অবশেষে লায়লাকে অন্য রুমে বন্দি করে পরিস্থিতি শান্ত করা হলো। আমাদের সময় থেকে লায়লা ফাহিমের বেশ কিছু সময় কেড়ে নিলো—লায়লাকে খাবার দেওয়া, বাইরে নেওয়া, মাঝে মাঝে চিয়ার আপ করে আসা ইত্যাদি।

আস্তে আস্তে লায়লা ফাহিমের খুব প্রিয় হয়ে উঠলো। ফাহিম কম্পিউটারে কাজ করে, লায়লা পায়ের কাছে বসে থাকে। ছোট্ট লায়লাও নতুন ঘরে দারুণ খুশি। ফাহিম ওকে আদর করে ডাকে—লায়লা বেগম। লায়লার নতুন জীবনে কিছুটা বিপত্তি দেখা গেলো। ব্যবসার কাজে ফাহিমকে ঘন ঘন দেশ বিদেশে সফরে যেতে হয়। বিশেষত গোকাডার কাজে ওকে দীর্ঘদিন নাইজেরিয়ায় থাকতে হয়। ফাহিম লায়লাকে নিউইয়র্কে কুকুরদের হোস্টেলে রেখে যায়। দিন হিসেবে ভাড়া গুনতে হয়, বেশ খরচের ব্যাপার। ফাহিম নিউইয়র্কে ফিরে আসলে লায়লাও ঘরে ফিরে আসে।

এর মধ্যে ফাহিম নিজস্ব এপার্টমেন্ট কিনে লোয়ার ইস্ট সাইড ম্যানহাটনে মুভ করে। এখানে লায়লার জন্যে করা হলো যত সব বিশেষ আয়োজন। জানালার লম্বা কাচের পাশে বসানো হলো সুন্দর উচু আসন, লায়লা যেন বসে ম্যানহাটনের দৃশ্য ‍উপভোগ করতে পারে। একদিন ফাহিমের নতুন বাড়িতে ঢুকে তো আমি তাজ্জব, দেখি কুকুরের একটা বিশেষ ট্রেডমিলে (দৌড়াবার মেশিন) চড়ে লায়লা ব্যায়াম করছে।

আমরা থাকি ম্যানহাটন থেকে সত্তর মাইল উত্তরে, ছো্ট শহর হোপওয়েল জংশনে। একদিন দুপুরে ফাহিম বাড়িতে হাজির, লায়লাকে নিয়ে। রায়হানাতো দরজা খুলেই অবাক এবং অপ্রস্তুত। মা কিছু বলার আগেই ফাহিম অভয় দিলো—আম্মু লায়লাকে ঘরে ঢুকাবো না, তুমি ভয় পেয়োনা। রায়হানা আশ্বস্ত হলো। ফাহিম লায়লাকে রশি দিয়ে সমনের বাগানের একটা গাছের সাথে বেঁধে রাখলো। বেচারা লায়লা, দিনের অর্ধেক কাটিয়ে দিলো গাছের নীচে, ঘাসের উপর শুয়ে বসে। সন্ধ্যায় ফাহিম লায়লাকে নিয়ে ম্যানহাটনে চলে গেল।

আমাদের জীবনের সবচেয়ে একটা ভালো সকাল কেটেছে ২০২০ সালে জানুয়ারী মাসের ৩ তারিখ। আমরা নতুন বছর উপলক্ষে ফাহিমের বাড়িতে গেলাম, ফাহিম আমাদেরকে রাতে ওর বাড়িতে রেখে দিল। সকালে উঠে আমরা প্রতরাশ সেরে হেঁটে বেড়াতে বের হলাম, ইস্ট হাউস্টন রোডের ফুটপাত ধরে। ফাহিম, আমি ও রায়হানা, সাথে লায়লা। কাছে ইস্ট রিভার, আমরা নদীর পাড়ে একটা বেঞ্চিতে গিয়ে বসলাম, অনেকটা পার্কের মতো। সুন্দর রোদ ঝলমল পরিবেশ, একটু


ফাহিমের লায়লা। ইস্ট রিভার পার্ক , জানুয়ারি ৩, ২০২০

শীতের ছোঁয়া। লায়লার লিশটা (কুকুরের রশি) ফাহিমের হাতে। আমরা বসে বসে অনেক গল্প করলাম। ফাহিমের সাথে কথা বলার আমাদের কোনো লাগাম ছিলো না। ফাহিমের ব্যবসা, বন্ধুবান্ধব, নতুন এ্যাপার্টমেন্ট সাজাবার পরিকল্পনা, আমাদের পারিবারিক সুখ দুঃখ —যে কোনো কিছুই্।

ইস্ট রিভার পার্কের কি সুন্দর পরিবেশ, লোকজন দৌঁড়াচ্ছে সূর্যমাখা সকালে। অদূরেই উইলিয়ামসবার্গ ব্রিজের স্টিলের নান্দনিক কাঠামো এবং জ্যামিতিক আকারে ঝোলানো রশিগুলো বক্ররেখা হয়ে নীল আকাশটার নীচে মাথা তুলে আছে। কী যে অপূর্ব! হাঠাৎ ফাহিম আমার হাতে লায়লার রশিটা দিয়ে দৌঁড়ানো শুরু করল। আর যায় কোথায়? লায়লাও তীব্র গতিতে ফাহিমের পিছনে দৌঁড়াতে শরু করলো। আগত্যা চিৎকার করতে করতে আমিও দৌঁড়াতে শুরু করলাম, ফাহিম ফাহিম…। ফাহিম হাসতে হাসতে ফিরে এলো। লায়লাও শান্ত হলো। আমি বেঞ্চিতে বসে কোমরটাকে বিশ্রাম দিলাম। আমাকে অপ্রস্তুত করতে ফাহিম কত রকমের কৌশল যে বের করত!

সেদিনের ছবিগুলো আমি ও রায়হানা এখনো প্রায়ই দেখি—ফহিমকে নিয়ে সেদিনের স্মৃতি।
উইলিয়ামসবার্গের ব্রিজটা এখনো তেমনি দাঁড়িয়ে। ইস্ট রিভার নদীর পারের সেই বেঞ্চটা ঠিক তেমনি পড়ে আছে। নদীর শান্ত পানিগুলো সূর্যের আলোতে ঝিকমিক করে তেমনটাই বয়ে যাচ্ছে। পাশেই এফ. ডি. আর (F.D.R) হাইওয়ের ব্যস্ত ট্রাফিক— তেমনি করেই গাড়িগুলো দুদিকে পথ চলছে। শুধু আমাদের যাত্রা থমকে গেল! যাকে নিয়ে ম্যানহাটনের ব্যস্ত পথে আমার ঘুরে বেড়াতাম, শান্ত নদীর ধারে বসে সকালে রোদ উপভোগ করতাম, সে-ই আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেলো।

আমার শুধু মনে হয়, আমি যদি সারাটা জীবন ইস্ট রিভার পাড়ের সেই বেঞ্চটাতে ফাহিমের পাশে বসে থাকতে পারতাম, শুধু আমার ফাহিমের পাশে! ফাহিমের নিঃশ্বাসের উষ্ণতা দিয়ে আমার হৃদয়কে ঠান্ডা করার কেনো সুযোগই আমি আর কোনোদিন পাবো না। চোখের পানি বুকে নেমে আসে, মনের মাঝে আরো আগুন জ্বলে উঠে!

লায়লার রশি এখন আমার হাতে। লায়লা এখন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। আমাদের নীচের তালায় লায়লার অবাধ বিচরণ। ফাহিমের মা রান্না ঘরে কাজ করে, লায়লা তার পায়ের কাছে শুয়ে থাকে। ফাহিমের রেখে যাওয়া খেলনাগুলো দিয়ে লায়লা এখনো খেলে। মাঝে মাঝে আমাদের বড় বারান্দায় (deck) গিয়ে লায়লা দূরের একটা গাছের উপর বসা নীল রংয়ের একটা পাখির দিকে তাকিয়ে থাকে, আমিও ওর দৃষ্টিকে অনুসরণ করি। মানুষ বোধহয় দূরের আকাশের দিকে তাকিয়ে খোঁজে নিজের হারানো দিনগুলোকে কিংবা হারানো প্রিয় মানুষটাকে!


ফাহিম, মা ও লায়লাকে নিয়ে। ইস্ট রিভার পার্ক , জানুয়ারি ৩, ২০২০

আমার ও রায়হানার মাঝে সম্ভবত: একটা প্রতিযোগিতা আছে—কে লায়লাকে বেশী স্নেহ করে? লায়লার পাল্লা রায়হানার দিকেই ভারি। সকালে ও দোতালার সিঁড়ির নীচে বসে থাকে, একটা ছোট্ট খেলনা নিয়ে। রায়হানা উপর থেকে নামলে দারুণ উৎফুল্ল হয়ে নাচতে থাকে। ছোট্ট খেলনাটা মুখে চেপে ধরে শব্দ বের করে, আর রায়হানাকে ঘিরে লাফাতে থাকে। ফহিমের মায়ের প্রতি আদর দেখাবার অদ্ভূত সব রীতি লায়লার। উপর থেকে নামতে কিছুটা দেরি হলে, লায়লা কান্না শুরু করে। আর মাঝে মাঝে রায়হানার সামনে বসে গলাটা এগিয়ে দেয়, হাত বুলাবার জন্য।

এক সময় ফাহিম লায়লাকে আমাদের কাছে রাখতে চেয়েছিলো, আমরা রাখতে পারিনি। এখন আমাদের দিনের অনেকটা সময় কাটে লায়লাকে ঘিরে।

লায়লার সাথে আমি অনেক কথা বলি। ফাহিম আমাদের মাঝে থাকলে প্রতিদিন যে কথাগুলো ওকে বলতাম, আমি ফাহিমের ছবির নীচে বসে তা লায়লাকে শোনাই। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বচনের ফলাফল, ফাহিমের জন্য বাংলাদেশের লোকদের ভালোবাসা, গোকাডার এগিয়ে যাওয়ার কাহিনী, পাঠাও থেকে ফাহিমের অবদানকে মুছে ফেলার প্রচেষ্টা—আমার যতো প্রতিক্রিয়া আমি লায়লাকে শোনাই। কি করবো, আমার যে আর কেউ নেই, ফাহিমের মতো করে শোনার!