তুরীয় আনন্দে তুরস্কে

কামরুল হাসানকামরুল হাসান
Published : 2 June 2022, 09:11 PM
Updated : 2 June 2022, 09:11 PM


দুবাই বিমানবন্দরের ডিপারচার টার্মিনাল থ্রির এ১০ গেটে আরও চারশ-ছুঁই যাত্রীর সাথে বসে আছি ইস্তাম্বুল উড়ে যাব বলে। আমার পাশে যিনি বসেছেন তিনি পোলান্ডের নাগরিক। ইনি একজন ভূপর্যটক। বাংলাদেশের নাম জানেন, কিন্তু কখনো আসেননি। তবে ভারতে এসেছেন। বাংলাদেশে খাঁটি পর্যটক আর কজনই বা আসে, বেশিরভাগ বিদেশি আসে ব্যবসার কাজে। আমরা আমাদের পর্যটন শিল্প গড়ে তুলতে পারিনি, বিদেশি পর্যটক টানতে পারিনি। আমাদের অবকাঠামো, মানসিকতা পর্যটনবান্ধব নয়। সমুখে যে তিন চীনা চেহারার মালয়েশীয় যুবতী ক্রমাগত দলবদ্ধ সেলফি তুলছে তারা তুরস্কে যাচ্ছে বেড়াতে। ওদের নামগুলো ওয়েস্টার্ন। লিন্ডা, কলিন ও ইভানা হাসিখুশি তিন বান্ধবী। ইভানার সাথে কথা বলে বুঝলাম ওরা তুরস্কের ম্যাপ দেখেছে, ইজমির বলার সময় নিচের দিকে আঙুল দেখাচ্ছিল।

বিমানবন্দরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হলেও সবাই মাস্ক পরে নেই, কিন্তু প্লেনে ওঠার সময়, সুড়ঙ্গে যখন লোকেরা দাঁড়ায় বা প্লেনের আইলে গিয়ে সিট খোঁজে তখন সামাজিক দূরত্ব হয় তত্ত্বীয় বিষয়। যাত্রীদের ডাকা হচ্ছিল সিটিং জোন ধরে ধরে। বিজনেস ক্লাসের পরই A জোনের যাত্রীদের ডাকায় আমি একটু অবাক হলাম। বোতলে পানি ভরার সময় তলা থেকেই তো ভরা হয় (অন্য উপায় নেই) আর প্লেনের দেহটি (fugelage) তো একটি বোতলই। তবে কেন লেজের দিক থেকে ভরে ভরে মাথার দিকে আসা নয়? তাকিয়ে দেখি তিন লম্বা এয়ারটানেল প্লেনের তিন দরোজায় গিয়ে লেগেছে। এ প্লেনটি ডাবলডেকার, ফার্স্ট ক্লাস ও বিজনেস ক্লাসের যাত্রীরা সব আপার ডেকে, সেখানে একটি, লোয়ার ডেকের সমুখভাগে একটি আর প্লেনের মধ্যভাগে ইকোনমি জোনে আরেকটি টানেল লাগানো। সমাজে শ্রেণিবিভেদের মতোই প্লেনেও শ্রেণিবিভেদ রয়েছে। পেটমোটা প্লেনগুলোকে আমার তিমি মাছ মনে হয়, যাত্রীরূপী ছোটো মাছ অকাতরে গিলে ফেলে, এ প্লেন গিলছে প্রায় চারশ যাত্রী। গিলে কিন্তু চর্বন করে না, অবিকৃত উগড়ে দেয় আরেক বিমানবন্দরে।

আমার সিট বিজনেস ক্লাস ছাড়িয়ে প্রথম ইকোনমি জোনে, ১১ সারির শেষ সিট K (K for Kamrul) অর্থাৎ এটা হলো জানালার সিট। হাতের ল্যাপটপ ব্যাগটি হেডরেকে রেখে বসি। আমার পাশে অর্থাৎ
I (I for Indubala) ও J (J for Jamaibabu) সিটে বসেছে এক ইন্দোনেশীয় মধ্যবয়সী দম্পতি। ভদ্রলোকের ইলেকট্রিকাল পার্টসের দোকান আছে জাকার্তায়। ভদ্রমহিলা বেশ সুশ্রী দেখতে। আমার ফোনের চার্জ তো সেই রাত থেকেই শেষ, দেখি ভদ্রলোক প্লেনের চার্জিং পয়েন্টে মোবাইল চার্জ দিচ্ছেন আর কী সৌভাগ্য তার ফোনের পিন আমার ফোনের পিনের হুবহু ( সি টাইপ)। আমি বলতেই নিজের ফোন চার্জ না দিয়ে আমার ফোনে চার্জার লাগিয়ে দিলেন। এটাও কি দৈব যোগাযোগ? এমিরেটস ফ্লাইট ইকে১২৩ ছাড়ল যথাসময়েই। এটাও মুসলিম প্রধান দেশের এয়ারলাইন্স, কিন্তু কোরান তেলওয়াত দিয়ে শুরু হলো না। যে তিন ভাষায় ঘোষণা এলো সে তিনটি ভাষা অনুমিত – তুর্কী, ইংরেজি ও আরবি। ঘোষণার মাঝে সাউন্ড সিস্টেমে ইংরেজি গান বাজছিল। এখানে দুটি রানওয়ে, একটি উড্ডয়নের, অপরটি অবতরণের। আমাদের পেটমোটা উড়তে উড়তে দুটি সরু কোমর নেমে এলো আকাশের কুহক কাটিয়ে মাটির মায়ায়। দুবাই হলো এমিরেটসের হাব, যেদিকে তাকাই সেদিকে এমিরেটসের হংসবলাকা। ভাবি, একটি এয়ারপোর্টে যদি এত বিমান থাকে, তবে সমগ্র দুনিয়ার বিমানের ইনভেন্টরি কত বিপুল। রোদে ডানা শুকাতে দেওয়া হংসবলাকাদের দেখি আর মনে পড়ে অতীতের বিপুল বিলুপ্ত সময়ের কোনো এক পর্বে আমি উড়োজাহাজবিদ্যা পড়েছিলাম।


দুবাই ছাড়াতেই পারস্য উপসাগরের নীলসবুজ জল, জেগে ওঠা সমুদ্রভূমির ক্যাকটাস আকৃতির স্ট্রিপগুলো চোখে এলো। এরপর মেঘ এসে পুরো প্লেনটিকে ঢেকে দিলে পার্সিয়ান গালফ দৃশ্যপট থেকে উধাও হয়ে গেল। ইন্দোনেশিয় দম্পতি ঘুমিয়ে পড়েছে। সামনের সিটের জিম্বাবুইয়ান লোকটি ঘুমাবার তোড়জোড় করছে। সে দেখি তিন সিট নিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে আছে আর চাচ্ছে আমি যেন জানালাটি বন্ধ করে দেই। আমি রাজি হলাম না, এখানে বসেছি তো ভূগোল দেখব বলে। 'তুমি কি অসুস্থ?' আমি জিজ্ঞেস করি। সে অসুস্থ নয়, তিন সিট পেয়েছে ভাগ্যগুণে। প্রায় সকল যাত্রী ঘুমিয়ে পড়লে প্লেনের অভ্যন্তরভাগ হয়ে উঠল নিদ্রালয়। বুঝলাম যাদের ভূমিতে ঘুম হয় না, তারা আকাশে চড়ে ঘুমায়। ম্যাপ দেখাচ্ছে প্লেনের নাক কুয়েত বরাবর। সাদ্দাম হোসেনের মতো কোন হঠকারিতা করবে কি না, সকৌতুকে ভাবি। জানালার বাইরে একটাই দৃশ্য- সাদা মেঘের জাজিম মিশেছে নীল মশারির প্রান্তে। তখন বোরড হয়ে 'দ্য ম্যাট্রিক্স' সিনেমাটি দেখতে শুরু করি। সেটি এতো আজগুবি মারামারিতে ভরা যে এর কাছে বলিউডও শিশু, সেখানে অন্তত গায়ে গুলি লাগে, এখানে তাও লাগে না। এরা সব ফেরেশতা না কি?

লাঞ্চ এলো বারোটায়। সকাল থেকে অভুক্ত ছিলাম তাই লাঞ্চ খুব তৃপ্তিকর ঠেকে। দুটি সস জাতীয় খাবারকে বিস্কিট ভেবে রেখে দিয়েছিলাম, চায়ের সাথে খাব বলে। পরে আবিস্কার করি যেসব খাবারের সাথে ওই সস খাওয়া যায়, সেসব খেয়ে ফেলেছি। কাতার, বাহরাইন ও কুয়েতকে বাম পাশে রেখে বিমান এখন ইরাকের উপর দিয়ে উড়ছে। মেঘের আস্তরণ সরে যাওয়ায় ইরাকের ভূমি, পাহাড়, জলাশয় দেখতে পাচ্ছি। ৩৫ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে মানুষের নির্মাণ চোখে পড়ে না, পরে প্রকৃতির নিজস্ব নির্মাণ, বিশ্বাসীরা যাকে সৃষ্টিকর্তার নির্মাণ বলে বিশ্বাস করেন। বসরার পাশ দিয়ে এখন উড়ছে বাগদাদের দিকে। একটি দীর্ঘ সবুজ জলের নদী দেখতে পাচ্ছি। গুগল ম্যাপ বলছে ওটাই টাইগ্রিস নদী, পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদী, সভ্যতার জননীকূলের একজন। সে নদীর রেখা ধরে উত্তরে মসুল, পশ্চিমে কিরকিক, উত্তর-পূর্বে এরবিল শহর। পারস্য উপসাগরে ইরানের দীর্ঘ সমুদ্রতীর, তুলনায় ইরাকের অংশটুকু কম। তবু ওই অল্প সমুদ্রখোলা জায়গা দিয়েই ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস নদী সাগরে পড়েছে। সভ্যতার এই দুই আদি জননীর উৎপত্তিস্থল হলো তুরস্ক, যে দেশে যাচ্ছি আমি।

ইরাকের ভূগোল আগ্রহ নিয়ে দেখছি, ভাগ্য সুপ্রসন্ন যে মেঘ কেটে গিয়ে ভূমিদৃশ্যকে করে তুলেছে স্বচ্ছকাচ। ঈশ্বরের মতো অতসীকাচ থাকলে বড়ো ভালো হত, বা স্যাটেলাইটের মতো ঈগলচোখ। সবুজ অঞ্চল যেমন আছে, তেমনি আছে মরুভূমির মতো সবুজশূন্য বালুর অঞ্চল। নগ্নগাত্র বালুর পাহাড় দেখতে পেলাম বিরাট অঞ্চল জুড়ে। এরপর এক অভাবিতপূর্ব দৃশ্য উপহার দিল বরফঢাকা পর্বতসারি। আকাশ থেকে বরফ আচ্ছাদিত পর্বত দেখা বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা। মনে হয় ভূগোল বইয়ের পৃষ্ঠাগুলো এই পর্বতশ্রেণি, উপত্যকায় লেপ্টে আছে। প্লেন উড়ছে আঙ্কারার পাশ দিয়ে, ম্যাপ কাছাকাছি যে জায়গাগুলো দেখাচ্ছে সেগুলো হলো কেরশির, এলাজিগ ও মালাতরিয়া। বাইরের তাপমাত্রা, পড়েই শীত লাগল, শূন্যের নিচে ৫৮ ডিগ্রি। এয়ারবাস গন্তব্য থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরে থাকতেই নামতে শুরু করলো। সেটাই স্বাভাবিক, কারণ এটা হলো প্যাসেঞ্জার প্লেন, ফাইটার জেট নয়। বড়ো একটা লেক ও বেশ কিছু জলাশয় দেখতে পেলাম। ইস্তাম্বুলের কাছাকাছি বসফরাস প্রণালীর তটরেখা, জল ও ভূমির পার্থক্য সুস্পষ্ট দেখা গেল।

দুপুর দুটো নাগাদ বিরাট ঈগলপাখি ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে নয়, সীগালের মতো স্থির পাখায় নেমে এলো নিচে। বসফরাসকে ডান ডানার নিচে রেখে সে উড়ে এলো মারমারা সমুদ্রের উপর, এরপর বাঁক নিয়ে ভূমির উপরে যে বিমানবন্দর আর তার রানওয়ে রয়েছে সেখানে। অতপর তার ভূমিসন্ধানী পা প্রবল গতিতে রাখল পৃথিবীর সুন্দরতম নগরীসমূহের শীর্ষের একটি- ইস্তাম্বুলে, নেপোলিয়ন যে নগরীকে বলেছিলেন দুনিয়ার রাজধানী।


ইস্তাম্বুলে দ্বিতীয়বার পদার্পণ ঘটল আমার। যেনতেন পা রাখা নয়, একেবারে পদার্পণ? পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শহরে পদযুগলকে অর্পণই করতে হয়। বিমানের সামনের গেট দিয়ে নামা প্রথম যাত্রী আমি। কিছুটা উৎকণ্ঠিত, কেননা আমাকে ডোমেস্টিক ফ্লাইট ধরে আঙ্কারা যেতে হবে। খুব দ্রুত সরু টানেল দিয়ে বেরিয়ে আসি। বেরুতেই উঁচু ছাদের এক পাশ দিয়ে রোদপোহানো বিমানগুলো চোখে পড়ে। দোতালার সমান উঁচু একটি এলিভেটর বেয়ে যেখানে নেমে আসি সেটা পাসপোর্ট কন্ট্রোল। ফর্সারঙ যুবতী, তার চোখে মায়াবী টান, আমার পাসপোর্টে সিল মেরে দেয় অর্থাৎ আমি এখন তুরস্কে পা রাখার উপযুক্ততা অর্জন করেছি। আমি ছুটি ব্যাগেজ ক্লেইম জোনে। গিয়েই স্থাপত্যসৌন্দর্যময় এক অনিন্দ্য জগতে গিয়ে পড়ি। সে অর্থে এই বিশাল উঁচু ইস্পাত আর এলুমিনিয়ামের রূপারঙ ছাদ, তার স্তম্ভসারি, ছাদের জ্যামিতি ও আলোকমালা দুবাইয়ের সদৃশ্য হলেও, মনে হলো দুটি বিমানবন্দরের মধ্যে তুলনায় ইস্তাম্বুলই বোধকরি সুন্দরতর ও সহজতর। প্রথমবার এ বিমানবন্দরে এসেছিলাম ২০১৫ সালে যুক্তরাজ্য যাওয়ার পথে, কয়েক ঘণ্টার ট্রানজিট ছিল ইস্তাম্বুল। এডিনবরা থেকে তিন মাস পরে যখন ঢাকা ফিরছিলাম আমার দুই সহকর্মী আসিফ ও মিসকাতসহ তখন ট্রানজিট ভিসা নিয়ে পুরো একটি দিন টার্কিস এয়ারওয়েজের আতিথ্যে ছিলাম বিমানবন্দরের নিকটস্থ একটি চারতারকা হোটেলে। স্মৃতির ভেতর রয়েছে নীল মসজিদ দেখা আর টপকাপি প্রাসাদ না দেখে বসফরাস তীরে গিয়ে জলযানে চড়া এবং বিস্মরণঅযোগ্য এক নৌভ্রমণের অভিজ্ঞতা।

১১ নম্বর বেল্টে এমিরেটস ফ্লাইটের লাগেজ ঘুরছে, আমার দুটো লাল লাগেজের দেখা নেই। কী জানি কাল ফ্লাইট মিস করা বাংলাদেশ থেকে আসা একমাত্র যাত্রীর লাগেজ ওরা সামলে রেখেছে কি না। একটা লাগেজ ট্রলি আনতে গিয়ে দেখি তালা লাগানো, ট্রলির এক ঠ্যাঙ আঁটকে রেখেছে তালা। দশ দিনার দিলে খুলবে। দুবাই এয়ারপোর্টে ট্রলি ও ওয়াইফাই ফ্রি ছিল, কিন্তু এখানে কোনটাই ফ্রি নয়। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও তুরস্কের অর্থনীতির একটা আভাস মিলে এ তুলনায়। পর্যটন নীতিরও। অবশেষে দেখা মেলে দুই লাগেজের, এখন ট্রলি ছাড়া তিন লাগেজ নিয়ে আমি ছুটি কী প্রকারে? ভাগ্যিস লাল লাগেজ দুটির পায়ে চাকা লাগানো আছে। ল্যাপটপের ব্যাগটি নেই কাঁধে। বাইরে দ্রুত বেরিয়ে এসে ডোমেস্টিক টার্মিনাল খুঁজি। একজন বল্ল, একেবারে শেষ প্রান্তে। তবু ভাগ্য ভালো একই দালানে। বিমানবন্দরটি এত বড়ো যে পথ আর ফুরোয় না, আর আমার যা স্বভাব, মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে পড়ে ছবি তোলা। তবে আঙ্কারা যাবার ফ্লাইট ধরার এত তাড়না ছিল যে আমি ছবি তোলার বাসনাকে দমিয়ে রাখি।

শেষ প্রান্তে এসে বড়ো লিফট বেয়ে উপরে উঠে আসি। দোতলায় এগুতেই টার্কিস এয়ারওয়েজের টিকেট বিক্রয় হাব। সেখানে মুখোমুখি ১৯টি টিকেট ঘর, অনেকটা বাস টার্মিনালের টিকেট ঘরের মতো। আমি একটি কাউন্টার ফাঁকা দেখে আর কাউন্টারের তুর্কী সুন্দরীর রূপ দেখে টিকেটক্রয় ও রূপদর্শনের অভিপ্রায়ে (এখানে রূপ বিক্রি হয় না) এগিয়ে গিয়েছিলাম। ওখানকার একজন কর্মী দূর থেকে বুঝল এ বাঙাল নিয়ম জানে না। সে এসে একটি মেসিন থেকে টিকেট বের করে দিল। আমাকে সিরিয়াল ধরে আসতে হবে। আমার সিরিয়াল ৫৪০, ভাগ্যিস সে সময়ে ৫৩৬ সেবা পাচ্ছিল। দৈবের কী ইশারা আমি যখন ১৭ নম্বর কাউন্টারে গিয়ে পাণিপ্রার্থী নয়, পানিপ্রার্থীও নয়, টিকেটপ্রার্থী হয়ে দাঁড়ালাম, দেখি এ তো সেই তুর্কী সুন্দরী। তখন বিকেল ৩ টা, ৬টার আগে আঙ্কারা যাবার কোনো ফ্লাইট নেই। কী আর করা? তুর্কী সুন্দরী জিজ্ঞেস করল, আমার লাগেজের ওজন কত? লাগেজ ১৫ কেজি হলে বিমানভাড়া ৪৬ ইউএস ডলার, ২০ কেজি হলে ৫২ ডলার। আমি ১৫ কেজির টিকেট কিনি, পরে চেক-ইন কাউন্টারে এসে দেখি লাগেজের ওজন ১৮ কেজি, ব্যাগ থেকে ৩ কেজি ওজনের কয়েকটি বই বের করে হাতে নিয়ে নেই।

ডিপারচার জেনে এসে সিকিউরিটি চেক করে এপাশে স্টারবাক, ওপাশে গে এন্ড সাটি দুটো চমৎকার মুখোমুখি কফি ও স্ন্যাকস শপের স্টারবাক অঞ্চলে বসে থাকি। হেঁটে চলা পথের পাশে কাঠের বসার বেঞ্চ, ভেতরের ছোট্ট এলাকাটি ভরে আছে মনোলোভা সব ইউরোপীয় ললনায়। দুজন ললনাকে দেখি পরস্পরের দিকে এমন প্রেমময় চোখে তাকিয়ে আছে, তাদের দেহভাষা কি ওই বিপরীত কফিশপটির বিপ্রতীপ কিছুর ইঙ্গিত দিল? আমার ঠিক পাশে, বাড়ানো কাঠের আলসেতে একটি যুগল বসে আছে, মেয়েটি কাছে, ছেলেটি দূরে, স্থানিক ও মানসিক – দুই বিচারে। মেয়েটিকে দেখলাম, মন দিয়ে আমার সিলেক্টেড পোয়েম বইটির প্রচ্ছদ দেখছে। তাকে বইটি দেখতে দেই। আমি একজন কবি এবং বইটি আমার লেখা শুনে সোফিয়া ভাসিলোপৌলভ নামের রাশান সুন্দরী অবাক ও আনন্দিত। সে ইংরেজি জানে। আগ্রহ নিয়ে কবিতা পড়ল কয়েকটি আর প্রশংসা করল। তার আগ্রহ আর কবিতা নিয়ে উচ্ছ্বাস দেখে বইটি উপহার দেই। সে এটা বিশ্বাস করতে পারে না। খুশিমনে বই নিয়ে আমার সাথে ছবি তোলে। ছবি তুলে দেয় ওর সঙ্গী- স্বামী বা প্রেমিক- যার নাম সৌজন্যবশত আমি বইয়ে লিখে দেই ভুবনখ্যাত সোফিয়া নামটির সাথে।

আমি ওই শুভ্রপরীদলে এমন একটা ভাব নিয়ে বসে থাকি যে আঙ্কারার প্লেন কি আমাকে না নিয়ে ছাড়বে?ঢিলেঢালাভাবেই এগুচ্ছিলাম, পরে কিছু যাত্রীকে ছুটতে দেখে আর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারি আমাকেও ছুটতে হবে। একটা লম্বা এলিভেটর বেয়ে দ্বিতলের বেশি উচ্চতা থেকে গ্রাউন্ড লেভেলে নেমে আসি। একজন চীনা চেহারার মেয়ে ছুটছিল, বুঝলাম ওরও ওই একই ফ্লাইট। এ১ গেট দিয়ে যখন চীনা যুবতী ও আমি অপেক্ষমান বাসে উঠলাম, তখুনি বাস ছেড়ে দিল। টকটকে গায়ের রঙের যুবতীদের মতো ছিল পড়ন্ত বিকেলের রোদ, হঠাৎই মনে হলো বাস যে যাচ্ছে টার্মিনাল গ্রাউন্ডের উপর দিয়ে, কেবলি ভেসে উঠছে প্লেনের হংসবলাকা শুভ্র শরীর, একটা ভিডিও তুললে কেমন হয়? আড়াই মিনিটের এক চমৎকার ভিডিও তৈরি হলো যাতে কেবলি দেখা যায় প্লেনের পর প্লেন, আস্তাবলের আরবি ঘোড়াসারির মত দণ্ডায়মান। বাস থেকে নেমেও ছবি তুলি কয়েকটি, প্লেনে ওঠার সিঁড়ি থেকে যখন ছবি তুলছিলাম তখন গেটের কাছে যাত্রী' অভ্যর্থনায় অপেক্ষমান দুজন তুর্কী বিমানবালা মুচকি মুচকি হাসছিল। এক বয়স্ক বালকের বিমানপ্রীতি দেখে আমোদিত তারা। প্লেনে ওঠা শেষ যাত্রীটিকে ভেতরে টেনে তারা দরোজা বন্ধ করে দেয়।

এয়ারবাস এ৩৫০ যাত্রী ভরপুর, প্লেনটিকে মনে হলো প্রেক্ষাগৃহের মতন হাউজফুল। ইস্তাম্বুল আঙ্কারা চলচ্চিত্রটি দেখার জন্য লোকেরা উদগ্রীব! ভাগ্যিস কাউন্টারেই টিকেট পেয়েছিলাম, ব্লাকারদের কাছ থেকে টিকেট কিনতে হয়নি!



টার্মিনাল ভবন থেকে দূরে নোঙড় করা বিমানে পৌঁছে দেওয়া বাসে যে বয়স্কা নারীর পাশে গিয়ে বসেছিলাম, প্লেনে তার পাশেই আমার আসন। এও কি দৈব? চেক-ইনের সময় আমার অপসন ছিল চারটি সিট, চারটিই স্যান্ডউইচের মাংস, অর্থাৎ ভেতরের চার সিট। আমার ওই দুর্ভাগ্যের, অর্থাৎ রুটি অংশে গিয়ে বসবার সুযোগ হারানোর জন্য আমিই দায়ী। টিকেট কিনেই এত পরিতৃপ্ত ছিলাম যে চেক-ইন করার কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম। প্রতিটি সিটের পেছনের রঙীন টিভিপর্দাগুলো তৈরি করেছে চমৎকার এক পরিবেশ। আভ্যন্তরীণ এই ফ্লাইটের সিংহভাগ যাত্রী তুরস্কের। প্রত্যেকেই মাস্ক পরে আছে। যেরকম ভীড় এই বিমানে তাতে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। পাইলটের ঘোষণা থেকে জানালাম এই প্লেনে তুর্কী, আরবি, ইংরেজি, স্প্যানিশ, চীনা, জাপানি, ফরাসি- এই সাতটি ভাষা জানা কেবিন ক্রু আছে। এতে বোঝা গেল এই প্রধানত তুর্কি যাত্রীঠাসা বিমানেও বিভিন্ন দেশ ও ভাষার মানুষ রয়েছে। বিমানবন্দরে এলে বা বিমানে চড়লে কত যে বিভিন্ন চেহারা আর গড়ণের মানুষ দেখা যায়! তারা বহন করছে তাদের পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ, মাতা, মাতামহ, মহামাতামহের জিন, অবয়বে, ত্বকাভায়, গড়ণে তাদেরই ছাপ। পৃথিবী থেকে আসলে কেউ হারায় না, তারা তাদের পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্রের মাঝে রয়ে যায়, টিকে থাকে সহস্র বছর ধরে। মানুষের অমরত্ব লাভের বাসনা সৃষ্টি করেছে অনন্তকাল স্থায়ী এক পরকালকে।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮২৩২ মিটার উচ্চতা দিয়ে এয়ারবাস এ৩৫০-৯০০ বিমানটি প্রায় টইটুম্বুর হয়ে ঘণ্টায় ৮২২ কিলোমিটার বেগে ছুটছে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার দিকে। তুরস্ক দেশটি পশ্চিম থেকে পুবে প্রসারিত। প্লেন যাচ্ছেও পশ্চিম থেকে পুবে। ইস্তাম্বুল থেকে আঙ্কারা এক ঘণ্টার আকাশপথ। যা আমাকে খুশি করল তা হলো ওই এক ঘণ্টার আকাশভ্রমণে দারুণ এক খাবার প্যাক সার্ভ করল তুর্কি বিমানবালারা, যাদের রূপ এত প্রখর যে খাবার ট্রে নিতে গিয়ে খাবারের দিকে না তাকিয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে যাত্রীরা। পনিরভরা বার্গার ছিল সুস্বাদু, সঙ্গে ফ্রুট জুস, পানি, একটি খেঁজুর, তিনটি জাইতুন ফল, একটি মিষ্টি। খেঁজুর দেখে মনে পড়লো এটা রোজার মাস, একটু পরেই ইফতার। আকাশে দিগন্তজুড়ে সূর্যের লালচে হলুদ সাম্রাজ্য। স্যান্ডউইচের ভেতর থেকেও তা দেখতে পেলাম। আমাকে আরও যা অবাক করল তা হলো সূর্য ডোবার আগেই প্লেনের বেশিরভাগ যাত্রীর আহার গ্রহণ। এরা কি তবে রোজা রাখেনি? আমার বয়স্কা সহযাত্রী, প্লেনের অপরাপর বয়স্ক যাত্রীগণ, যাদের বেশভূষা বলে দেয় তারাও মুসলিম, সূর্য ডোবার আগেই খাবার খাচ্ছেন। তবে কি আজান পড়ে গেছে?

ইস্তাম্বুল, ইয়ালোভা, ডেরিন্স, ইজমিত শহরগুলো একই সরলরেখা বরাবর, হয় সরলরেখার একটু উপরে বা একটু নিচে। এরপরে বিমান টার্ন নিল দক্ষিণ-পুবে বলু শহরের দিকে। আঙ্কারার পাশে অনেক পাহাড় দেখলাম। পশ্চিমাকাশ লাল হয়ে আছে, প্রদীপ্ত লাল। সেই লালআভায় তুরস্কের রাজধানীকে দেখাল রক্তিম। আলোরই প্রভাব কি না, প্রতিটি বাড়ির ছাদের রঙ লাল। চারপাশে পাহাড়ঘেরা আঙ্কারা বিমানবন্দরটিকে দেখে আমার অনিবার্য মনে পড়ল কাঠমান্ডুর কথা, তবে সেখানে হলো পর্বত আর এখানে পাহাড়। প্লেন তার প্রবল আকাশগতিকে কমিয়ে এনে, তবু প্রচণ্ড গতিতে ভূমি স্পর্শ করে, রানওয়েতে জোরে দৌঁড়ে, গতি কমিয়ে, হেলেদুলে অবশেষে স্থির হলো। দেখি যাত্রীরা বড়ো বড়ো সব লাগেজ নামাচ্ছে হেডরেক থেকে। আভ্যন্তরীণ এয়ারলাইন্সগুলো লাগেজ নিয়ে যে বাড়াবাড়ি করে তার প্রতি ওই হলো যাত্রী প্রতিক্রিয়া, তাকে প্রতিবাদ বা অভিযোজনও বলা যায়। আমার লাগেজ নামাতে সাহায্য করলেন এরসেন নামের এক তুর্কী পুরুষ, হেডরেক থেকে হাতড়ে হাতড়ে বইগুলোও বের করে দিলেন। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ এরসেনকে একটি বই উপহার দিলে সে অবাক ও খুশি হয়। জিজ্ঞেস করলেন, এগুলো তোমার লেখা? আমি একধরণের আত্মতৃপ্তি মাখানো হাসি দিয়ে ঘাড় নাড়ি।


আমরা যখন আঙ্কারা এয়ারপোর্টে নেমেছি, সূর্য পশ্চিমাকাশকে সোনার পাত বানিয়েছে, ইস্পাত চকচকে বীমগুলোর গায়ে স্বর্ণপ্রভ দ্যুতি, মনে হয় স্বর্ণমোড়ানো বীম। মুগ্ধ হয়ে দৃশ্যটি দেখি। লাগেজ ট্রাকে অপেক্ষা করছি, নিচ থেকে একটি একটি করে লাগেজ উঠে আসে, এসে ঘুরতে থাকে কনভেয়ার বেল্টে, সব রঙের লাগেজ আসে, আমার লাগেজ আসে না। সবচেয়ে মর্মন্তুদ ঘটনাটি তখনই ঘটল, কনভেয়ার বেল্ট থেমে গেল, তার মানে আর কোনো লাগেজ নেই! হায়, হায়, আমার দুটিধন নীলমনি কোথায় গেল? আমার মতোই হতবুদ্ধি দীর্ঘকায়া এক নারী, তার লাগেজও আসেনি। থেমে যাওয়া কনভেয়ার বেল্ট কৌতূহল নিয়ে আমাদের বিপদ দেখছে । আমরা চললাম ব্যাগেজ কমপ্লেইন অফিসে। কাউন্টারের মহিলা বললেন, লাগেজ আছে ডোমেস্টিক সেকশনে। গিয়ে দেখি আমার লাল সুটকেস, আমার লাল ব্যাগ এতিমের মতো পড়ে আছে। পিতাকে দেখে তাদের চোখ উজ্জ্বল হলো। পুরো সেকশনটি নিঃঝুম, বাতিমালাও নির্বাপিত। ছানা দুটিকে আশ্রয়শিবির থেকে তুলে বাইরে আসি। একই ফ্লাইটের ব্যাগেজও যে ডোমেস্টিক ও ইন্টারন্যাশনালে বিভক্ত হয়, আমি এই প্রথম জানলাম।

আমি যখন লাগেজ উদ্ধারে যাচ্ছিলাম, তখন মাইকে আমার নামে ঘোঘণা শুনলাম। ইস্তাম্বুল ফ্লাইটের সব যাত্রী বেরিয়ে গেছে, আমার দেখা না পেয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের গাড়ির চালক সাকিবও হতবুদ্ধি। আমাকে পেয়ে তার স্বস্তি, তাকে দেখে আমারও স্বস্তি। সূর্য ততক্ষণে ডুবে গেছে, আঙ্কারায় নেমে এসেছে সন্ধ্যারাত। আমাকে পাজেরো জীপটিতে তুলে সাকিব সেই যে ছুটতে আরম্ভ করেছে, ছুটছে তো ছুটছেই। আকাশ থেকে যে পাহাড়গুলোকে দেখেছিলাম সেগুলো প্রথমে দূরে ডানে, অতঃপর সমুখে এবং অবশেষে কাছে চলে এলো। গাড়ি গিয়ে চড়লো পাহাড়ের কোলে। কতদূর তবে বাংলাদেশ দূতাবাস? সাকিব জানাল, বিমানবন্দর থেকে দূতাবাস পাড়া ৪৫ কিলোমিটার। ৪৫ কিলোমিটার? শুনে টাসকা লাগে। এই ৪৫ কিলোমিটার প্রায় কোথাও না থেমে এক দ্রুতগতির ট্রেনের স্বভাবে গাড়ি আমাকে নিয়ে চলল আর আমি তুরস্কের রাজধানীর একাংশের সান্ধ্যরূপ দেখে চললাম। চোখে পড়লো আলোকিত শপিংমল, রেস্তোরাঁ, ভবনসমূহ। পাহাড়ের ঢালে উপত্যকায় ছড়ানো অঞ্চলে আশাতিরিক্ত সংখ্যার উঁচু ভবনসমূহের কোনটি সরকারি অফিস, কোনটি বেসরকারি বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান। কোথাও একই স্থাপত্য নকশার অনেকগুলো উঁচু আবাসিক ভবন। কোথাও কোথাও এই ভবনগুলোর গায়েও আলোর মালা পরানো। মাঝে মাঝে ভেসে উঠছিল মসজিদের বৃত্তাকার ডোম ও রকেটের মতো সরু ও তীক্ষ্ণ মিনারসমূহ। কিছু প্রবেশদ্বার পেরিয়ে গেল গাড়ি। সড়কের মসৃণতা মুগ্ধ করার মতই। সাকিব বল্ল, এসকল সড়ক পাথর দিয়ে তৈরি। তুরস্কে প্রচুর পাথর পাওয়া যায়, সে পাথর দিয়ে তুর্কিরা বানিয়েছে প্রাসাদ, ঘরবাড়ি, দুর্গ ও সড়ক।

বাংলাদেশ দূতাবাস যে অঞ্চলে অবস্থিত সে অঞ্চলটিকে ডিপ্লোম্যাটিক জোন বলা যায়, কেননা এখানে অনেকগুলো দেশের দূতাবাস রয়েছে। কোনো ভাড়া করা বাড়িতে নয়, তুরস্কের ভূমিতে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ দূতাবাস, তার শীর্ষে পতপত করে ওড়া লালসবুজের পতাকার মতো স্বাধীন একটুকরো বাংলাদেশ। সামনে দূতাবাস, পেছনে রাষ্ট্রদূতের আবাসস্থল 'বাংলাদেশ হাউজ'। ভেতরে পা দিয়ে আমি এর রূপজৌলুষ দেখে মুগ্ধ হই। টার্কিশ কার্পেটে মোড়ানো করিডোর পেরিয়ে এক বড়ো হলঘরে এসে পৌঁছুই যার চারিপাশ জুড়ে বাদশাহী নকশার কারুকাজকরা সোনালী সোফাসেট, ছাদ থেকে নেমে এসেছে বড়ো ঝাড়বাতি, মেঝের কার্পেট, দেয়ালের ছবি আর জানালার পর্দা সবকিছু গর্জিয়াস, অভিজাত। সমৃদ্ধ বাংলাদেশের এক প্রতীকি ভবিষ্যৎ ছবি এই বাংলাদেশ হাউজ। দেখি সংলগ্ন ডাইনিং হলে আরও ১৬টি দেশের দূত কিংবা দূতের প্রতিনিধি নিয়ে রাষ্ট্রদূত মসয়ূদ মান্নান ডিনারে মগ্ন। সে টেবিলে আমারও একটি চেয়ার ছিল, কিন্তু আমার দেরি হয়ে গেছে। মনে পড়লো আবুল হাসানের কবিতার চরণ,

'আমার হয়তো দেরি হয়ে গেছে ফুল তুলতে,
শিশু কোলে তুলে নিতে, দেরি হয়ে গেছে।'

এখানে হবে রাষ্ট্রদূতদের ভোজসভায় যোগ দিতে দেরি হয়ে গেছে। আমি প্রাসাদের দর্শনার্থীর মতো হলঘরটির রূপ দেখতে থাকি!