বহু বর্ণ ভালোবাসার এই পাঠ

sarwar_chowdhury
Published : 29 Oct 2013, 12:23 PM
Updated : 29 Oct 2013, 12:23 PM

ঈ.
সহস্র প্রকার Law বা নিয়ম জগতমণ্ডলের বহুমাত্রিক অর্থময়তার ভাঁজে ভাঁজে। তার মাঝে Law of the heart বিস্ময়কর ফোকাস দিয়ে আসছে মানবজাতিকে। এই ল ফ্রাংক-স্টারলিং-য়ের বায়োলজিক্যাল ম্যাকানিজম বিষয়ক নয়। এই ল-এর বিকিরণ সোজা কথায় ভালোবাসা। জীবনের আদি অন্তে বহু বর্ণ ভালোবাসা গ্রন্থিত হবার কারণ এই ল । কেউ জানে না- Deepness of passion-এর দ্যুতি দেখা দিলে মানুষের যুক্তিজ্ঞান কোথায় কোন বনে গিয়ে লুকায়।

ই.

সমুদ্রের কাছে গিয়ে সমুদ্রের বিশালতার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকলে কিংবা বিস্তারিত জলরাশিতে যেমন খুশি তেমন সাঁতার কাটলে, অথবা সমুদ্রের পানিতে খেলতে থাকলে প্রতিদিন, কিংবা অমন জলাধারের প্রশংসা করতে থাকলেই সমুদ্রের গর্ভে থাকা মূল্যবান মুক্তার নাগাল পাওয়া যায় না। ব্যতিক্রম বাদে, মুক্তা পেতে হ'লে বিশেষ জ্ঞানের আলোকে অবগাহন করতে হয়। তবু অবগাহনকারী সবাই মুক্তা পাবেন–এমন গ্যারান্টি নাই। আর সমুদ্রের কিনারে রাতের অন্ধকারে দাঁড়ালে সমুদ্রের শান্ত জলে প্রতিবিম্বিত হয় আকাশের নক্ষত্রেরা। সমুদ্রে নয় নক্ষত্রগুলো, আকাশে। আকাশ কেবলই অধরা আকাশময়তা। তাতে নক্ষত্র ধরে অথবা রাত্রিকালে জাগে আর ওরা কেবল দূরে দূরে থাকে। পৃথিবীটাও আকাশের শরীরের এক দর্শনীয় শোভা। আমরা আকাশ থেকে আকাশ দেখি। মঙ্গল বা চাঁদ থেকে পৃথিবীর দিকে তাকালে সে-ও ওই আকাশের একটি গ্রহ। সমুদ্র জলে প্রতিবিম্বিত হয় নক্ষত্রেরা বিশেষ সময়ে, মানে, রাতের বেলা। মানুষের চোখে ধরা দ্যায় না দিবসের আলোতে চন্দ্রকিরণ আর নক্ষত্রের মায়া।
এবং আয়নার ভেতর থেকে প্রতিফলিত আলোতে নির্দিষ্ট স্থানের অন্ধকারে আলো দেয়া যায়। তখন আয়নার ভেতরে সূর্য আছে এবং নাই দুই-ই সত্য যদিও, গাঢ়তর সত্য হলো আয়না মাধ্যম মাত্র। আয়নার মাধ্যমে সূর্যের মেনিফেস্টেশন।

আ.
এইখানে, এই পৃথিবীতে মানুষের জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট সত্য মিথ্যার বিশেষ রূপ আছে। সূর্য়ের পরিচয় সূর্য, চন্দ্রের পরিচয় চন্দ্র। সূর্যকে চন্দ্র বলা হলে মিথ্যা বলা হয়। চুরি করে তা অস্বীকার করা মিথ্যা। মিথ্যাগুলো এক প্রকার সত্য। উপস্থিতির সত্য। মানে, উপস্থিত আছে সত্য এবং মিথ্যা। গোলাপ বংশের সন্তান যদিও আপেল, তবু আপেল খেয়ে যদি কেউ বলে গোলাপ খেয়েছে, তাইলে মিথ্যা বলা হবে। রূপভেদের এই জাগতিক আয়োজনে সকল রূপের সত্য মিথ্যার মূর্ত বিমূর্ত অর্থ পাওয়া যায়। এবং এই ধরা মাঝে উপর নীচ দুটি দিকও আছে। বৃক্ষের মগডাল থেকে যতো দূর দেখা যায়, বৃক্ষতলের ছায়া থেকে অতোটা দেখা যায় না। এই ধরা মাঝে কাঁচা পাকা অবস্থা আছে। তাজা ও নষ্ট অবস্থাও প্রকাশ পায়। এখানে রাত্রির অন্ধকারে সূর্যমূখীর সাথে সাক্ষাত হয় না সূর্যের। অনিবার্য বিরহসুখ যাপন করে দিবসে তারা চেয়ে থেকে পরস্পরের দিকে। সালোকসংশ্লেষণের দৌলতে পুষ্পের মর্ম থেকে অদৃশ্য ইলেক্ট্রমেগন্যাটিক বিকিরণ হতে থাকে।

অ.
একেশ্বরবাদী পরিচিত তিন ধর্ম- ইয়াহুদ, মসিহী, ইসলাম। এই তিন ধর্মের ধর্মগ্রন্থগুলোতে নবী ইউসুফ আঃ-এর জীবন কাহিনী বেশ গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও তিন কিতাবের বয়ানে কিছু ব্যবধান আছে এবং যথেষ্ট মিলও আছে কিয়দংশে। ওল্ড টেস্টামেন্ট এবং বাইবেলে জোসেফের জন্যে পোটিফারের স্ত্রীর বেকারার ভালোবাসার কথা আছে। (ইরানের ফারাযুল্লাহ সালাহশুর পরিচালিত নবী ইউসুফ ও জুলেখার কিচ্ছাভিত্তিক টিভি সিরিয়াল 'পেগাম্বর-ই ইউসুফ' ৪৫ পর্বের। এটি ইসলামিক ট্রেডিশন মোতাবেক এবং এতে প্রাচীন মিশরের আমারনা যুগের ঐতিহাসিক কনটেক্সটও স্থান পায়। সেখানে ইউসুফ নবীর নাম উচ্চারণ করা হয় কখনো ইউজারসিফ আর জুলেখার নাম কখনো জুলায়হা।) কোরআন-এ একমাত্র একটি সুরাতে একটি সম্পূর্ণ গল্প বলা হয়েছে অতীতের ইতিহাসভিত্তিক, সেই সূরাটির নাম সূরা ইউসূফ। এবং সেখানে বলা হয়েছে তথনকার মিশরের প্রধানমন্ত্রী আজীজের স্ত্রীর গাঢ়তর ভালোবাসা ক্রীতদাস ইউসুফের প্রতি। তখন মিশরের প্রধানমন্ত্রী যাকে বানানো হতো তার পদবীর পরিচয় 'আজীজ মিসর'। এই পদবীর পরিচয় পরে ইউসুফ নবীও প্রাপ্ত হন। সুরা ইউসুফ অবতীর্ণ হওয়ার কারণও ছিল মদীনার ইহুদীগণ ইসলামের নবীর যথার্থতা ধরবার জন্যে জানতে চেয়েছিল, মানে, তিনি যদি সত্যি নবী হয়ে থাকেন, তাইলে বনি ইসরাইলের মিশরে যাওয়া এবং জোসেফ সম্পর্কে কিছু যেনো জানান। এই সূরাতে তা জানানো হয়েছে। সূরা ইউসূফ শীর্ষক গল্পটির ভেতরে মানুষের মানবিক দুর্বলতা- হিংসা, ঘৃণা, অহংকার, প্রতারণা, নিষ্ঠুরতা, ভয় এবং মহতৎ গুণ ধৈর্য আনুগত্য সাহস ভালোবাসা বিস্ময়কর শিল্পরস সহযোগে প্রকাশ করা হয়েছে।

ক.
গল্পটির সারসংক্ষেপ বলা যাক আগে।
পিতা ইয়াকুব আঃ-এর কাছে স্বপ্ন প্রকাশের মধ্য দিয়ে গল্পটির শুরু। আর স্বপ্নটির ব্যাখ্যা প্রকাশ পেতে পেতে শেষ হয় সুরা। বিস্ময়কর বহু রঙ ভালোবাসা গল্পটির আদি অন্তে নানা ডাইমেনশনে স্ফুট। বালক ইউসুফ স্বপ্নটি তাঁর বাবাকে বলেন- 'পিতা, আমি স্বপ্নে দেখেছি এগারটি নক্ষত্রকে। সুর্যকে এবং চন্দ্রকে। আমি তাদেরকে আমার উদ্দেশে সেজদা করতে দেখেছি।' পিতা জবাব দিলেন- 'পুত্র, তোমার ভাইদের সামনে এ স্বপ্ন বর্ণনা করো না। তাহলে তারা তোমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে।' (কোরআন ১২:৪-৫)

এর পর বৈমাত্রেয় বড় ভাইয়েরা সবাই মিলে হিংসা করে বাবার ছায়া থেকে সরিয়ে দেবার জন্যে নিয়ে যায় বাড়ি থেকে দূরে এবং ফেলে আসে এক অন্ধকূপে তাঁকে। কুয়োর ভেতরে কুদরতি হেফাজতে থাকেন তিনি। কয়েক দিন পর মরু বণিক কাফেলা, যারা মিশরের পথে, তারা কুয়ো থেকে পানি তোলার সময় পেয়ে যায় আশ্চর্য সুন্দর এক বালক। বয়স নয়। এই বালককে তারা মিশরে নিয়ে দাস খরিদ-বিক্রির বাজারে বিক্রয় করে। কিনে নেন মিশরের প্রধানমন্ত্রী আজীজ। কিনে নিয়ে দিলেন পত্নীকে এবং বললেন- 'একে সম্মানে রাখ। সম্ভবতঃ সে আমাদের কাজে আসবে অথবা আমরা তাকে পুত্ররূপে গ্রহণ করে নেব। (কোরআন ১২:২১)

খুব সুন্দর এই বালক ইউসুফ। আজীজ-পত্নী বালকটিকে ক্রীতদাস হিসাবে দেখলেন না। খেলাধুলাও করতেন তাঁর সাথে। সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখতেন। নয় বছর পার হলো এভাবে। সেই বালক হয়ে উঠলেন একজন অসাধারণ দীপ্তির অধিকারী এক যুবক ইউসুফ। তাঁর চোখেমুখে আশ্চর্য প্রশান্তি। এমন নিখুঁত পৌরুষদীপ্ত পুরুষ কেউ দেখেনি আগে। সমগ্র রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে যুবকটির সৌন্দর্য়ের সুনাম। তাঁর কথার ধ্বনিব্যঞ্জনা, বাকভঙ্গি সব মিলিয়ে কথার ডেকোরাম মুগ্ধ করে শ্রোতাদের। ইসলামের নবী বলেন সব সৌন্দর্যের অর্ধেক তাঁর মধ্যে আছে।(মুসলিম)।

আজীজ-পত্নীর হৃদয়ে এই ক্রীতদাস যুবকটি পরম আরাধ্য পুরুষ আকারে বিরাজ করতে থাকেন। যুবকটির সততা ন্যায়নিষ্ঠতাও অসাধারণ। এক পর্যায়ে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায় আজীজ পত্নির। প্রধানমন্ত্রী আজীজ প্রাসাদে নাই। কোথাও গেছেন। সেজেগুজে প্রাসাদের শোবার ঘরে ডাকেন যুবকটিকে এবং দরজায় তালা দিয়ে বলেন- 'শোনো! তোমাকে বলছি, এদিকে আসো, তিনি (ইউসুফ) বললেন আল্লাহ রক্ষা করুন; তোমার স্বামী আমার মালিক। তিনি আমাকে সযত্নে থাকতে দিয়েছেন। নিশ্চয় সীমা লংঘনকারীগণ সফল হয় না। (কোরআন ১২:২৩)।

উল্লেখ্য, 'শোনো! তোমাকে বলছি, এদিকে আসো'- এই কথাটি কোরআনে এসেছে এভাবে- 'হায়তা লাকা'। এই শব্দদ্বয় আরামায়িক ভাষার। (আরবী ভাষার আগে বর্তমান আরব অঞ্চলে আরামায়িক ভাষা লিংগুয়া ফ্রাংকার মতো ছিলো।) এই শব্দদ্বয়ের আরেকটি অর্থ 'আমি তোমার জন্যে প্রস্তুত'। (তফসীর ইবনে কছির)

আজীজ-পত্নীর ডাকে সাড়া না-দিয়ে যুবক ইউসুফ দৌড়ে যান দরজার দিকে আর পেছন থেকে দৌড়ে গিয়ে যুবকটির জামায় টান দেন আজীজ-পত্নী আর জামা ছিড়ে যায়। ছেঁড়া টুকরা প্রধানমন্ত্রীর বউয়ের হাতে। তালাবদ্ধ দরজা অটোমেটিক খুলতেই সামনে পড়েন ফিরে আসা প্রধানমন্ত্রী আজীজ। পত্নী দোষ দিলেন যুবকটির উপর। অনুসন্ধান শেষে আজীজ নিশ্চিত হলেন যুবক ইউসুফ নির্দোষ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তার সুন্দরী স্ত্রীকে খুব ভালোবাসতেন। ওদিকে 'নগরের (এলিট) মহিলারা বলাবলি করতে লাগল যে, আজীজের স্ত্রী স্বীয় গোলামকে কুমতলব চরিতার্থ করার জন্য ফুসলায়। সে তার প্রেমে উম্মত্ত হয়ে গেছে। আমরা তো তাকে প্রকাশ্য ভ্রান্তিতে দেখতে পাচ্ছি'। (কোরআন ১২:৩০)

আজীজ-পত্নীর নাম জুলেখা। তিনি শহরের গল্প-গুজব শুনে বিমর্ষ হলেন। এক সান্ধ্যভোজের আয়োজন করে এলিট সব মহিলাদের আমন্ত্রণ জানালেন এই হিব্রু মানুষটার মধ্যে কি আছে তা দেখানোর জন্যে। ঐতিহ্য মোতাবেক ফলের ঝুড়ি এবং একটি করে চাকু তাদের সামনে দেয়া হলো এবং বলা হলো তারা যেনো ফল কাটা শুরু করে। আজীজ পত্নি ইউসুফকে মজলিশ ঘরে আসার কথা বলেন। সামনে আসা মাত্র মহিলারা অসাধারণ সুন্দর মানুষটির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তাঁর সৌন্দর্যে আত্মহারা হয়ে সবাই ফল না-কেটে প্রত্যেকে তাদের হাতের আঙুল কেটে ফেলে এবং কাটার ব্যথাও টের পায় নি। (They exclaimed in astonishment while continuing to cut the fruit. All their eyes were on Joseph. So it was that the women began to cut their palms absent mindly without feeling that they had cut them. -ইবনে কছির) (ওয়াহিদ উদ্দীন রিচার্ড লিখেন, এর কারণ- 'Beauty takes away from the lover the consciousness of self.')

আজীজ-পত্নী জুলেখা আগত মহিলাদের জানালেন, 'এ ঐ ব্যক্তি, যার জন্যে তোমরা আমাকে ভর্ৎসনা করছিলে। আমি ওরই মন জয় করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছে'। (কোরআন ১২:৩২) জুলেখার আহবান প্রত্যাখ্যান করেন খোদার ভালোবাসার কারণে ইউসুফ এবং কারা বরণ করতে রাজী হন। তাঁকে কারাগারে রাখা হয় দু'বছর (মতান্তরে বারো বছর)। জুলেখা তার স্বামীকে বোঝান যে, ইউসুফকে কারাগারে না-রাখলে তিনি নিজকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।

২৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- 'ওয়ালাক্বাদ হাম্মাত বিহি ওয়া হাম্মা বিহা' মানে, 'নিশ্চয় মহিলা তার বিষয়ে চিন্তা করেছিল এবং সেও মহিলার বিষয়ে চিন্তা করত'। (তারা দু'জন পরস্পরের প্রতি মজে গিয়েছিলেন তা এই আয়াতাংশে ইশারা দেয়া হয়েছে। এর বেশি বলা হয় নি। 'হাফত আওরাঙ'-এ তারা দু'জনের মায়া এবং অবশেষে মিল ইত্যাদি বিভিন্ন সূত্র থেকে সংযোজিত।)


অতঃপর ফারাও বাদশার স্বপ্নের ব্যাখ্যা যথাযথভাবে দেয়ায় জেল থেকে মুক্তি পান। মুক্তির পর 'আজীজ-পত্নী বললেন এখন সত্য কথা প্রকাশ হয়ে গেছে। আমিই তাকে আত্মসংবরণ থেকে ফুসলিয়েছিলাম এবং সে সত্যবাদী'। (কোরআন ১২:৫১) এখানে উল্লেখ্য, 'Reflecting on these verses suggests that she had turned to Joseph's religion, monotheism. His imprisonment was a great turning point in her life'.(ইবনে কছির)

রাজ্যের আইন দ্বারা জুলেখার কোনো শাস্তি হোক তা চান নি সুন্দর চরিত্রের পুরুষ ইউসুফ। এরপর পর্যায়ক্রমে ওই ক্রীতদাস ইউসূফকে আঃ মিশরের শাসক বানান ফারাও বাদশাহ। সুশাসনের দ্বারা রাজ্যে শান্তি আনেন। দেশের জনগণের ভালোবাসার দাবী পুরণ করেন। মানুষের অর্থনৈতিক দুর্দশা দূর করেন। তাঁর বাবা নবী ইয়াকুবের (আঃ) দেশ কেনান (বর্তমান ফিলিস্তিনের একটি জায়গা) থেকে আপন ভাই বিন ইয়ামিন ও বৈমাত্রেয় ভাইয়েরা আসে পর্যায়ক্রমে। বাবাও আসেন পরে। বাবা ইয়াকুব (সঃ) পুত্র বিরহে কাঁদতে কাঁদতে অন্ধ হয়ে যান। পিতা ও আপন ভাই বিন ইয়ামিনকে আনার সুকৌশলটি খুবই চমকপ্রদ।

জুলেখার ভালোবাসার অন্তিম পর্যায়ের ব্যাপারে আহলে কিতাবের নানা কথা আছে। ইবনে কছির লিখেন, ইংরেজি তর্জমা- 'Yet still, there are legends about her. It has been said that after her husband died she married Joseph, and, behold she was a virgin. She confessed that her husband had been old and had never touched women'. একেবারে বার্ধক্যে উপনীত জ্বরাগ্রস্ত জুলেখা সর্বক্ষণ ইউসুফকে স্মরণ করতেন। স্বামী আজীজ মারা গেছেন। রাজ্যের এক বিন্দু ক্ষমতা নাই জুলেখার হাতে। ফারাযুল্লাহ সালাহশুর পরিচালিত টিভি সিরিয়ালটির ৩৯ পর্ব মোতাবেক- কেবল ইউসুফ বিরহে কাঁদতে থাকেন। চোখে দেখেন না বৃদ্ধা জুলেখা। একদিন বিপর্যস্থ তৃষ্ণাকাতর জুলেখাকে দেখে প্রাসাদে নিয়ে আসেন হযরত ইউসুফের প্রথম স্ত্রী বানু হাসনাত। কথায় কথায় জানতে পারেন তিরিশ বছর ধরে তাঁর ইউসুফ বিরহ। রাজ্যের ক্ষমতাধর অথচ ভালোবাসার নবী ইউসুফ (আঃ) ফারাও বাদশাসহ সভাসদে তখন। একটি বিরোধী গোষ্ঠীর বিচার নিয়ে এ বৈঠক। নবী ইউসুফ রাষ্ট্র পরিচালনায় এতোই মশগুল ছিলেন যে, তিনি জুলেখার কথা ভুলেই গিয়েছিলেন এমন মনে হয়েছে বানু হাসনাতের। রাজ দরবারে অনুমতি নিয়ে আসেন বানু হাসনাত। হযরত ইউসুফ বিস্মিত হন এভাবে তার স্ত্রীকে আসতে দেখে। বানু হাসনাত স্বামীর বিরুদ্ধে অভিমানমাখা অভিযোগ আনেন এই মর্মে যে, যিনি দেশের মানুষের এতো খেদমত করেন তিনি কিভাবে তাঁর ইশকে পাগলপারা জুলেখার খবর রাখেন না? জুলেখা ত্রিশ বছর ধরে সম্মানিত ইউসুফের মহব্বতে বেকারার অবস্থা। জনাব ইউসুফ বেখবর কেন? নবী ইউসুফ আসলে ভুলেন নি। তিনি মুলত জনগণের ভালোবাসার দায়িত্ব পালন করছিলেন গভীর মনোযোগে। পরে খোদার ইশারা পান নবীয়ে খোদা। তিনি জানান, জুলেখার বয়স সার্বিক অবস্থা যা-ই হোক তাকে তিনি স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে গ্রহণ করবেন। ফারাও বাদশাসহ উপস্থিত সভাসদ হাসতে হাসতে টিটকারি মারেন। আনা হয় জুলেখাকে ধরাধরি করে দরবারে। সিংহাসনের সামনে আসা মাত্র দরদে ইশকের প্রভাবে রাণী এবং নবী ইউসুফ (আঃ) প্রথম স্ত্রী বানু হাসনাত উঠে গিয়ে ধরাধরি করে উপরে এনে আসনে বসান। বিপর্যস্ত অবস্থা। দৃষ্টিশক্তি নাই। এমন অবস্থা দেখে বিমর্ষ হন ইউসুফ। চোখ বেয়ে অশ্রুধারা নামে তাঁর। কিছু কথা হয় আবেগঘন। জুলেখাকে নবীয়ে খোদা বলেন 'যদি আল্লাহর ইচ্ছা হয় তোমার চোখ ভালো হয়ে যাবে, তুমিও দোয়া করো আমিও করছি'। প্রার্থনারত থাকা অবস্থায়ই জুলেখার চোখ ভালো হয়ে যায়। নবীয়ানা মোজেজা প্রকাশ পায়। চোখ ভালো হওয়ার পর জুলেখা বলেন- আমি চারদিকে কেবল ইউসুফই দেখতে পাচ্ছি। এবার উপস্থিত সকলের সামনে জুলেখাকে নবযৌবনা বানানোর কুদরতি। বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা বলেন 'এমন কুদরতি অসম্ভব। শুরু করেন দীর্ঘতর এক ঐকান্তিক প্রার্থনা আল্লাহর কাছে নবী ইউসুফ। নিজের চাদর দিয়ে জুলেখাকে ঢাকেন। মাথার তাজ খোলেন। বাদশা সিংহাসন থেকে নেমে নীচে বসেন। বাদশাও তাজ খুলে রাখেন। বাদশার বিশ্বাস আছে নবী মোজেজা দেখাতে পারেন। ইশকের ক্রন্দনে ফানা ফানা ইউসুফের দীর্ঘ প্রার্থনা কবুল হয়। চাদর টান দিয়ে নামান জুলেখা। নব যৌবন ফিরে এসেছে। (টিভি সিরিয়ালটির ৩৯তম পর্বে এই লিংকে – http://www.youtube.com/watch?v=BnQeZeH7iik) ওয়াহিদ উদ্দিন রিচার্ড লিখেন, ইউসুফ আঃ বলেন- 'From this day thou becomest my beloved queen.'। জুলেখা হয়ে যান খোশনসীবঅলা 'বিজয়ী লক্ষী নারী'(কাজী নজরুল ইসলাম)।

কোরআনে সুরাটির সর্বশেষ আয়াত- 'তাদের কাহিনীতে বুদ্ধিমানদের জন্য রয়েছে প্রচুর শিক্ষার বিষয়, এটা কোনো মনগড়া কথা নয়, কিন্তু যারা বিশ্বাস স্থাপন করে তাদের জন্যে পূর্বেকার কালামের সমর্থন এবং প্রত্যেক বস্তুর বিবরণ রহমত ও হেদায়েত'। (কোরআন ১২:১১১)

খৃষ্টীয় পঞ্চদশ শতকে ইরানের কবি নূর উদ্দিন আবদুর রহমান জামী লিখেন ইউসুফ জুলেখার কিচ্ছা মাছনাওয়ী আঙ্গিকে সাত খণ্ডে। মাছনাওয়ী'র মানে হলো ছন্দোবদ্ধ দুই পংক্তির অন্তমিল সহকারে বিশেষ কবিতার গঠন। জামী'র কাব্যগ্রন্থের নাম হাফত আওরাঙ। ইংরেজি অনুবাদ Seven Thrones। এই হাফত আওরাঙ অনুসরণেই সম্ভবত চতুর্দশ শতকে বাংলার সুলতান গিয়াস উদ্দিন আজম শাহের আমলে, শাহ মোহাম্মদ সগীর বাংলায় ইউসুফ-জুলেখা কিচ্ছা সাহিত্যরসসমৃদ্ধ করে লিখেন। হাফত আওরাঙ এর আগে জুলেখার ভালোবাসার প্রতীকী ব্যঞ্জনা আসে দ্বাদশ শতকে সূফি কবি জালালউদ্দিন রুমীর মাছনাওয়ী-ই-মা নাওয়ী-তে।


খ.
এবার দেখা যাক মিস্টিক মেটাফরে জুলেখার ভালোবাসার নিগূঢ় অর্থ।
সূফি কবি জালালউদ্দীন রূমী দেখেন, আজীজ-পত্নী জুলেখার ভালোবাসা ইউসুফের জন্যে মুলত এক রূপক প্রকাশ (soul wailing for God)। কার্নাল ডিজায়ার ওখানে নাই। (উল্লেখিত টিভি সিরিয়ালটির ৩৯ পর্বের শেষাংশ ও ৪০ পর্বের শুরুর দিকের চিত্রায়ন দ্রষ্টব্য) অমন পাগলপারা হওয়ার মর্ম- সমর্পিত আত্মার আহাজারি পরমের সান্নিধ্য পাওয়ার আশায়। রুমী কে? সুন্নী তরিকায় দ্বীন-ধর্ম চর্চা করে আউলিয়ার মর্যাদায় উন্নীত। আউলিয়া কে? যিনি ইলহামের মাধ্যমে গোপন তথ্য-মর্ম পেয়ে যান। ইলহাম শব্দটি আরাবী ফারসী ও তুর্ক ভাষায় আছে। অর্থ প্রেরণা। ইংরেজিতে অর্থ ইন্সপাইরেশন, ইনটুইশান। ইসলামী পরিভাষার অর্থ খোদায়ী বিশেষ প্রেরণা, মানে, যুক্তির সাহায্য ছাড়া জ্ঞানপ্রাপ্ত হওয়া। (quick insight without relying on reason)। কোরআনে বর্ণিত নাফসুল মোতমাইন্না বা কনটেনডেড সৌল বা প্রশান্ত আত্মা বা পরিশুদ্ধ আত্মা অর্জন করলে মানুষটি খোদার অনুগ্রহ প্রাপ্ত হন, সত্যের নিকটবর্তী হন। নবী মোহাম্মদ সঃ এর একটি হাদিসের ইংরেজি তর্জমা- 'The more truthfull a man, the more prophetic his dreams.' এই প্রফেটিক ড্রিমের মধ্যে ইলহাম থাকে। বিশেষ কাজের প্রেরণা আসে স্বপ্নে।
রুমী লিখেন-
"Zuleikha let everything be the name of Joseph,
from celery seed to aloes wood. She loved him
so much she concealed his name in many phrases,
the inner meanings known only to her.
When she said,
The wax is softening near the fire, she meant,
My love is wanting me.
If she said, Look, the moon is up,
or The willow has new leaves, or The coriander seeds
have caught fire, or The king is in a good mood today,
or Isn't that lucky, or The furniture needs dusting, or
The water carrier is here, or This bread needs more salt,
or The clouds seem to be moving against the wind,
or My head hurts, or My headache's better,
anything she praises it's Joseph's touch she means." ( Coleman Barks. From Rumi: The Book of Love, chapter-Zuleikha. From Rumi's Mathnawi)

সার্বক্ষণিক অমন প্রবল আকুলতা (ইনটেন্স ইয়ার্নিং) শুধুমাত্র ফিজিক্যাল ডিজায়ারের হয় কেমনে? এই ডিজায়ার অন্য কিছু। সীমার মাঝে অসীমের ডিজায়ার। অমন গাঢ়তর ব্যাকুলতা (প্রফাউন্ড লংগিং) এক 'কুলহারা কলঙ্কিনি'র মেটাফরে প্রকাশ পাওয়া শুধু তার মূলে ফিরবার ব্যাকুলতা। রূপের এই জগতে এর ধরণ 'ইশক-ই-মিজাজি' বা দেহের ভালোবাসা থেকে ইশক-ই-হাক্কিক্কি'তে উত্তরণের ধারাক্রম। প্রসঙ্গত ভিক্টর হুগোর লা মিজারেবল-এর উদ্ধৃতি আনা যায়। হুগো বলেন, "To love another person is to see the face of God." অমন ভালোবাসা অবশ্যই উচ্চমার্গীয়। গড এর ফেইস মানে কী? গড এর কোনো আকার নাই। এ এক অনির্বচনীয় বোধের বিভা। এই মুখ দেখার প্রয়াস ব্যাপারটা কী হতে পারে? আন্দালুসিয়ার সাধক মহিউদ্দীন ইবনে আরাবী তাঁর বই নকশাল ফুসুস-এ লিখেছেন, 'God manifests Himself to the heart of the Perfect Man, who is His vicegerent. And the reflection of the lights of His self-manifestation overflows into the world, which remains in existence by receiving this effusion (fayd)'.
গড মেনিফেস্টস অর্থ গড মানুষ আকারে প্রকাশ পাওয়া নয়। গড-এর গুণাবলীর মেনিফেস্টেশান আয়নাতে প্রতিবিম্বিত হওয়ার মতোন। এবং সেটা মানুষের মাধ্যমে, যিনি 'পারফেক্ট ম্যান'-এ উন্নীত সাধনার দৌলতে। সাধক-আউলিয়া-দরবেশ-সূফী-প্রিয় বান্দাহ ইত্যাকার পরিচয়ের যারা, তারাও মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ ক'রে এই জগত থে'কে চলে যান। আল্লাহ বলেন, "What is with you passes away, but what is with God remains (forever)…." (কোরআন১৬:৯৬; কিতাব আল নসীহা, ইবনেআরাবীসোসাইটিডটঅর্গ)।

প্রাসঙ্গিক বিবেচনা
কোরআনের কথাগুলো কাব্যময় এবং অনেক জায়গায় ইংগিতবহ। তফসীর (ব্যাখ্যা) পাঠ করলে ইংগিতগুলো পরিষ্কার হয়। তফসীর যারা করেন তারা বিশেষজ্ঞ আলেম। তাদেরকে মোফাসসের বলা হয়। কোরআন ব্যাখ্যার সুনির্দিষ্ট শর্ত আছে। তবু মৌলিক আকাইদ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বাদে মোফাসসিরিনের (ব্যাখ্যাতাগণের) মধ্যে কিছু বিষয়ের আলোচনাতে মতভেদ হয়েছে, হচ্ছে, হবে। আলেমদের মধ্যকার এখতেলাফের (মতভেদ) ফজিলতও আছে। এই মতভেদ নিয়ে অতি মাত্রায় বাড়াবাড়ি করলে বিপর্যয় আসে।

ইসলাম-কোরআন-হাদীস মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপনের তাগিদ দিয়ে আসছে। সকল প্রকার ইবাদতের গূঢ়তর অর্থ 'হুব্বাল্লাহ' বা আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়া। মানুষকে দেয়া বুদ্ধি নেয়ামত দ্বারা মানুষ জগতে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করুক, আল্লাহ সেটা চান। ধর্ম নিয়ে ভিতরে বাহিরে বাড়াবাড়ি করার সুযোগ নেই ইসলামে। বাড়াবাড়ি প্রবণতা থেকেই দেখা যায় একেক দেশে একেক সমাজে নানা প্রকার 'ইসলাম' বসে আছে পরস্পর বিরোধী অবস্থানে। ইসলাম তো একটি।

দেখা যায়, মুসলিম, ইয়াহুদী এবং খৃষ্টান, এই তিনি দ্বীনঅলাদের মধ্যে মডারেট ধারা এবং কট্টর ধারা প্রায় সব দেশে বিরাজমান। এশিয়া এবং আফ্রিকাতে মুসলমানদের মধ্যে এই দুই চিন্তাধারা প্রবল। পূর্ব ইউরোপের দেশসমূহে কট্টর খৃষ্টান বেশি(বিবিসি প্রতিবেদন)।

ইলমে তাছাউফ বা সূফী দর্শন-জ্ঞান ইসলামের ভেতরের গুপ্ত রহস্য বুঝবার শিক্ষা ও চর্চা। ইমাম গাজ্জালী এই গূঢ় পাঠ নিয়ে সারগর্ভ কিতাব এহিয়া উলুমুদ্দীন, তাহাফুতুল ফালাসিফা ইত্যাদি লিখেন। এই বইগুলো ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ হওয়ার পর পশ্চিমে বেশ সমাদৃত হয়। তাছাউফ চর্চার গন্তব্য ওই হুব্বাল্লাহ বা আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়া। কোরআনে বলা হয়েছে- 'আতিউল্লাহা ওয়া আতিউর রাসুল ওয়া উলিল আমরি মিনকুম' অর্থাত আল্লাহকে আর রসুলকে অনুসরন করো এবং তোমাদের মধ্য থেকে যারা জ্ঞানী (ইসলামিক স্কলার)। সূফী কবি জালালউদ্দীন রুমী 'উলিল আমর'-এর অন্তর্ভূক্ত। তিনি থিওলজির অধ্যাপক ছিলেন। সুন্নী মাজহাবের দ্বীন আমল করেছেন। তাঁর 'মাছনাওয়ী-ই-মা নাওয়ী' কোরআনেরই ব্যাখ্যা। তিনি সর্বমানিবক ভালোবাসার পাঠ রেখে গেছেন। ওখানে ফ্যাসাদের কোনো পাঠ নাই। 'মাছনাওয়ী'-তে রুমী বলেছেন- She (woman) is a ray of beauty of God.- নারী খোদার সৌন্দর্যের একটি রশ্মি। এখানে বুঝবার আছে এই রশ্মি কে। 'মাছনাওয়ী'র এই খন্ডেরই ২৪৩৪ নম্বর পংক্তিতে রসুল সঃ এর উদ্ধৃতি দিয়েছেন- 'মূর্খ লোকেরা নারীর উপর খবরদারী করে'। নারীকে সম্মানিত করেছেন তিনি। এবং মুসা (আঃ) আর ফেরাউন বাদশাহর দ্বন্ধকে উচ্চমার্গীয় অন্তদৃষ্টির দ্বারা ব্যাখ্যা করেছেন রুমী। এমন ব্যাখ্যা উপমহাদেশের বহু 'বড় মাওলানা'র কাছেও পাওয়া যায় না। সুরা ইউসুফ'র অন্যতম প্রধান পাঠ এই যে, ভালোবাসার দৌলতেই যথাযথ মুক্তির স্বাদ আসে। এও উল্লেখ করা যায়, ওস্তাদ রুমী'র 'ফিহি মা ফিহি' বা এর তর্জমা 'ডিসকোর্সেস অব রুমী' অথবা এই বইটির ইংরেজী অন্য অনুবাদ 'Signs Of The Unseen' ডব্লিউ এম থেকস্টোন কর্তৃক, এমন গভীরতর প্রজ্ঞা নিঃসৃত ডিসকোর্স বুঝে নিলে, একজন মানুষ অন্য যাকে শত্রু মনে করে, তার ব্যাপারে রিথিংক/পুনর্বিবেচনা করতে প্রেরণা পায়। দেখা যায়, 'শত্রু' লোকটির ভেতরেও অনবদ্য 'The Mysterion' বিদ্যমান। বিষ শুধু ক্ষতিকারক না। ভেনমের মধ্যে এন্টিডোট দেখতে পারতে হয়। বিষাক্ত সাপ কল্যাণও দিয়ে যায়। শত্রুতাও উপকারী। ভালোবাসা চর্চার পাঠ এভাবেই বিষয় বুঝিয়ে দেয়। রুমী'র পংক্তিসমূহ থে'কে সানন্দে পাঠ নিয়ে প্রভাবশালী দার্শনিক হেগেল তাঁর ফিলোসফি অব রিয়েলিটি বুঝাবুঝি করেন। (দ্রষ্টব্য- হেগেল আর রূমীর খোদা/ সারওয়ার চৌধুরী, বিডিনিউজ২৪-আনন্দপাঠ-২০১৩)। এবং উত্তরাধুনিক চিন্তার হিমালয় সদৃশ্য চিন্তাবিদগণ বিস্ময়ভরে দেখছেন জালালু্দ্দীন রুমী'র চিন্তাসমূহের দিকে। ভালোবাসা চর্চার প্রভাব এমনই।