নিতুন কুণ্ডু: সৃজন ও বোধের উত্থান

admin
Published : 6 Dec 2007, 05:08 PM
Updated : 6 Dec 2007, 05:08 PM


Weaving Shadow, 2006

ধানমণ্ডির 'বেঙ্গল গ্যালারি অব্ ফাইন আর্টস্‌'-এ ৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে 'নিতুন কুণ্ডু: সৃজন ও বোধের উত্থান' (Nitun Kundu: The Creative Mind) চিত্রপ্রদর্শনীর। প্রদর্শনীটি চলবে ডিসেম্বরের ১৭ তারিখ পর্যন্ত।

………
নিতুন কুণ্ডু (১৯৩৫-২০০৬) ছবি: সাজাহান আহমেদ বিকাশ

দিনাজপুরে ১৯৩৫ সালে জন্ম শিল্পী নিতুন কুণ্ডুর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে ১৯৫৯ সালে স্নাতক ডিগ্রি পান তিনি। ৪টি একক চিত্রপ্রদর্শনী হয়েছে তাঁর। ১৯৬৫ সালে 'জাতীয় চিত্রকলা পুরস্কার' পান। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পোস্টার ডিজাইন করেন শিল্পী নিতুন কুণ্ডু। ১৯৯৩ সালে ঢাকায় 'সার্ক ফোয়ারা' নির্মাণ করেন। ২০০৬ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দীর্ঘ তিন দশক দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান অটবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। প্রদর্শনীতে শিল্পীর ৬৩টি পেইন্টিং প্রদর্শিত হচ্ছে। বেঙ্গল শিল্পালয়-এর সৌজন্যে আর্টস-এর ওয়েব গ্যালারিতে সমুদয় চিত্র উপস্থাপন করা হলো। প্রদর্শনীর পরেও আর্টস-এর আর্কাইভে ছবিগুলি দেখা যাবে।

নিচে প্রদর্শনী বিষয়ে বেঙ্গল গ্যালারি অব্ ফাইন আর্টস্‌-এর ভাষ্য তুলে দেয়া হলো। প্রদর্শিত চিত্রকর্মের ছবি তুলেছেন সিউতি সবুর।

বেঙ্গল গ্যালারি অব্ ফাইন আর্টস্‌-এর ভাষ্য

চিত্রকর নিতুন কুণ্ডু বাংলাদেশের সংস্কৃতির অন্তর্ভুবনকে নানা ধরনের কর্মপ্রবাহ, উদ্ভাবনী শক্তি, সৃজন-তৎপরতা দ্বারা সমৃদ্ধ ও উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি করেছেন। ভাস্কর্য, ফোয়ারা, মঞ্চ ও তোরণ নির্মাণেও তিনি নতুন মাত্রা সঞ্চার করেছেন। শিল্পের সকল শাখায় তাঁর সহজ বিচরণ ছিল। অটবির ব্যবহারিক বস্তুসমূহে তিনি শিল্পগুণ ও সৃষ্টিশীলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। এতদ্সত্ত্বেও নিতুন কুণ্ডু ছিলেন মুখ্যত চিত্রশিল্পী। ষাটের ও সত্তরের দশকে করা তাঁর চিত্রসমূহে সৃজনী উৎকর্ষের স্বাক্ষর আছে। তিনি ছিলেন আর্ট ইনস্টিটিউটের মেধাবী ও উজ্জ্বল ছাত্র। তাঁর ড্রইং ছিল শক্তিশালী ও তেলরঙের কাজে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। ষাটের দশকের শেষ পর্যায়ে ইউসিসে তিনি ছাপাই ছবির যে-প্রদর্শনী করেছিলেন নান্দনিক বৈভব ও চিত্রশৈলীতে তা অভিনব বলে বিবেচিত হয়েছিল।

সত্তরের দশকের প্রাথমিক পর্যায়ে অটবি প্রতিষ্ঠার পর সাময়িকভাবে তাঁর চিত্রচর্চায় ছেদ পড়েছিল। পরবর্তীকালে বৃহৎ পরিসরের স্টুডিও নির্মাণ করে তিনি নিয়মিত চিত্রের চর্চা করেছেন। এই চিত্রসমূহের একটি প্রদর্শনী করবার অনুরোধ ও তাগিদ বেঙ্গল গ্যালারি তাঁর কাছে রেখেছিল। কিন্তু নিতুন কুণ্ডুর আকস্মিক প্রয়াণের ফলে তাঁর জীবদ্দশায় এ-প্রদর্শনী আর হতে পারেনি। এখানে উল্লেখ করা যায়, মৃত্যুর কিছুদিন আগে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত আর্ট ক্যাম্পে তেলরঙের শেষ চিত্রটি সাভারের বংশীবাড়িতে তিনি করেছিলেন। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল সখ্যের।

তাঁর দ্বিসপ্ততিতম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর পরিবারের সহযোগিতায় এই প্রদর্শনী করা সম্ভব হলো। এই প্রদর্শনীর অধিকাংশ চিত্রে নিতুন কুণ্ডুর শক্তিমত্তা, সৃজনী উৎকর্ষ এবং তিনি যে এদেশের অন্যতম অগ্রগণ্য শিল্পী ছিলেন তা আর একবার ধরা পড়েছে। তিনি জ্যামিতির ভেতর সৌন্দর্যের সন্ধান করেছেন। এই অন্বেষণে নিতুন কুণ্ডু আবিষ্কার করেছেন বিষয়ের পরিবর্তনশীল আর্তি, গতি ও রূপান্তর। এই অনুষঙ্গই তাঁকে ফর্ম ভাঙার খেলায় প্রণোদনা জুগিয়েছে। জ্যামিতি ও ফর্ম তাঁর ছবিকে বিশিষ্ট করেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তাঁর চিত্রভাষা। আবার বিষয়কে নিয়েও নানা পরীক্ষা করেছেন। তাঁর শিল্পতৃষ্ণা, জীবনতৃষ্ণা ও চিত্রতৃষ্ণা যে কত তীব্র এবং সূক্ষ্ম ও সংবেদনশীল – প্রদর্শনীর চিত্রগুচ্ছে তা ধরা পড়েছে। এই সৃষ্টি হয়ে উঠেছে নদীর জলের মতো প্রশান্ত। নিতুন কুণ্ডু বিশুদ্ধ বিমূর্ত রীতিতে ছবি অঙ্কন করেছেন। তবুও চারপাশের চেনা-অচেনা জগৎ তাঁর সৃষ্টিগুচ্ছে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। বিষয়ের গুণে ও পরিশীলিত শৈলীতে এ যেন হয়ে উঠলো আনন্দ-বেদনার সুষমামণ্ডিত কাব্য।