প্রয়াত শিল্পী আমিনুল ইসলামের কালো রঙে আকাঁ রেখাচিত্রের প্রদর্শনী শুরু হয়েছে রাজধানীতে, যেখানে এই শিল্পীর তিনদশক ধরে আঁকা ড্রয়ইগুলো স্থান পেয়েছে।
বেঙ্গল শিল্পালয়ে ‘অর্গানিসিটি’ শিরোনামের প্রদর্শনীটি মঙ্গলবার উদ্বোধন করেছেন লেখক হাসনাত আবদুল হাই।
এক বিজ্ঞপ্তিতে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ১৯৭০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে আমিনুল ইসলাম যত কাজ করেছেন সেগুলো নিয়েই এ প্রদর্শনী। যা শিল্প-সংগ্রাহক আবুল খায়েরের সংগ্রহে ছিল।
নতুন প্রজন্মের কাছে পথিকৃৎ শিল্পী আমিনুল ইসলামকে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন।
প্রদর্শনীর সার্বিক বিন্যাস (কিউরেট) করেছেন চিত্রশিল্পী ওয়াকিলুর রহমান। উদ্বোধনী দিনে উপস্থিত ছিলেন লুভা নাহিদ চৌধুরী। প্রদর্শনীটি চলবে ৮ জুলাই পর্যন্ত, প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
দেশের প্রথম প্রজন্মের শিল্পী এবং আধুনিক শিল্প-আন্দোলনের পুরোধাদের একজন আমিনুল ইসলাম। ১৯৪৮ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত গভার্নমেন্ট আর্ট কলেজে (বর্তমান চারুকলা অনুষদ) যে-কজন হাতেগোনা শিল্পী ভর্তি হন, তিনি তাদের অন্যতম। শিল্প-সমালোচনার পথিকৃৎ হিসেবে আমিনুল ইসলাম এদেশে অগ্রগণ্য হিসেবে বিবেচিত।
বেঙ্গলের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বিগত শতাব্দীর পঞ্চাশ থেকে আশির দশক বাংলাদেশের শিল্পকলা আন্দোলনের গতি প্রকৃতি নির্মাণ ও সাংস্কৃতিক বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এ সময়ের অন্যতম পুরোধা শিল্পী আমিনুল ইসলাম (১৯৩১-২০১১)। তিনি চিত্রকলার নানাবিধ মাধ্যমে কাজ করেছেন। নিরীক্ষামূলক কাজের জন্য প্রথা ভেঙে নতুন ভাষা নির্মাণে সচেষ্ট ছিলেন।”
শিল্পী আমিনুস ইসলাম ফ্লোরেন্স থেকে উচ্চ শিক্ষা শেষে ফিরে আসার পর পাশ্চাত্যের নানা নিরীক্ষার ছাপ তার ছবিতে পড়লেও বিমূর্ত শিল্পের নন্দনবিশ্ব খুব সহজেই তার করায়ত্ত হয়।
বেঙ্গল লিখেছে, “বাম রাজনৈতিক আদর্শ থেকে উৎসারিত সামাজিক দায়বদ্ধতা ও অঙ্গীকারের চেতনা দ্বারা তার শিল্পীসত্তা চালিত হয়েছিল। সেজন্য পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের কাজে এদেশের মানুষের দুঃখকষ্ট, মর্মযাতনা, অন্তর্দহন ও সংকটকে তিনি দায়িত্বের সঙ্গে অঙ্কন করেছেন।“
তেলরঙ ও জলরঙ ছাড়াও মোজাইক, ম্যুরাল, কোলাজ ও অন্যান্য মাধ্যমে আমিনুল ইসলাম ‘সিদ্ধি’ অর্জন করেন। কলম, কালি, ব্রাশ, কঞ্চি দিয়ে তৈরি কলম (খাগ কলম) ইত্যাদি সরঞ্জাম দিয়ে নিরীক্ষার মূল ক্ষেত্র হিসেবে রেখাচিত্রকে বেছে নেন। ক্রমে নিজস্ব চরিত্রসৃষ্টির গুণে, বৈশিষ্ট্যে ও প্রকাশে তার ছবি হয়ে ওঠে বাংলাদেশের কলারসিকদের কাছে আধুনিক শিল্পের অভিব্যক্তি।
দীর্ঘ তিন দশক চারুকলা ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন এই শিল্পী। জীবদ্দশায় তিনি নয়টি একক ও দেশে-বিদেশে ৪৩টি দলীয় প্রদর্শনী করেছেন।
আমিনুল ইসলাম পঞ্চম তেহরান বিয়েনালে গ্র্যান্ড ইম্পেরিয়াল প্রাইজ (১৯৬৬), একুশে পদক (১৯৮১), স্বাধীনতা পদক (১৯৮৮) সহ নানা মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৩১ সালের ৭ নভেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন, মৃত্যু ২০১১ সালের ৮ জুলাই।