Published : 29 Apr 2023, 07:35 PM
সুপারসনিক
চীৎকার পিছু পিছু ধায়
সে যায় বাড়িয়ে গ্রীবা, লম্বালম্বি পায়।
বিস্তার পিছনে ফেলে উৎস শুধু ধায়।
এমনি হঠাৎই আসে, ভীষণ চমকায়,
অনুদের তনুতে এসে পড়ে
হতশ্চল, ওরা আর পারে না পালাতে।
ঘাগড়া উঁচিয়ে বলতে পারে না
‘যাও,
সরাসরি মধ্যে গিয়ে ঢোকো।’
অসমাপ্ত জীবনের আগে
কাল পূর্ণ উপচানো কান্না এসেছে।
কবরখানার কাব্যপাঠ
গ্রেভইয়ার্ডগুলো প্রতিভাবান মানুষে ভরে গেল।
তারা মগজে করে নিয়ে গেল কত উজ্জ্বল চিন্তার রেণু
অত্যুজ্জ্বল সূর্যের সন্ত চাদরে মুড়ে
অযুত পথের দৃশ্য, প্রকৃতিমুখ, সন্তানের আলোহাস্য ভরে,
পৃথিবীর পথে পথে জ্ঞানের আলোককণা তারা তো কুড়াল,
অতঃপর বিতরণহীন, নির্দেশনাহীন ঢুকে গেল কবরের খোপে।
তাদেরই সামান্য কিছু কালো হরফের বুননে ঠাসা আছে পুস্তকের পাতায়,
আর কিছু শ্রেণিকক্ষে ছাত্রদের মগজের মেধাবী খোপে খোপে
সন্তানের মর্মচেতনার ভেতর অন্তর্যামী চুপ
বাকি সব ছাইভস্ম, ক্রমশ পচনশীল জৈব সার, বস্তুর অবিনাশী রূপ!
জীবনের মিছিলে মৃত্যুর কারাভান
পাশ ফিরলেই গলা জড়িয়ে ধরে।
মৃত্যু জীবনের এত কাছে শুয়ে থাকে?
শৈশবে দেখেছি দূর আকাশের গায়ে
মৃত্যুদূতকে বিদ্যুতের চাবুক হাকাতে।
ভেবেছি মৃত্যু বুঝি ঐ গরগর গরিলামেঘ
ঈষাণ কোনে জমে থাকা পুঞ্জীভূত রাগ;
প্রমত্ত মোষের মত আগুনের শিঙের ঝলকে
উল্টে দেয়া নড়বড়ে টিলা, বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি।
কখনো মৃত্যু সুদূরের দূত, আজ্ঞাবহ, কেননা
গৃহের চাল উড়ে গেলেও গৃহস্থ বেঁচে থাকে;
কিন্তু এখন দেখছি সে অত্যন্ত নিকটে দাঁড়ানো
শ্বাস ফেলে ঘাড়ে, না দেখা দৈত্য ঐ নিম্নচাপ
বঙ্গোপসাগরের জানু ঘেঁষে ধেয়ে আসা সিডরের রূপে।
আবার কখনো ভীষণ প্রেমের চোখে তাকায়
প্রেমিকার মূর্তি ধরে আসে, নিয়ে যায় বিবাহ
বা মৃত্যুবাসরে, পরক্ষণেই তাকিয়ে দেখি
হাটি হাটি জীবনের শিশুটি এসেছে;
এবং শিশুর মিছিল জীবনকে কলহাস্যে ভরে।
তখন মৃত্যুকে পালাতে দেখি উর্ধশ্বাসে
কাঞ্চনজঙ্ঘা থেকে একলাফে সে নেমে আসে
মানস সরোবরে, আর
পলির প্রদেশে তার প্রবাহিত জলে
অবিরত জীবনের নন্দন নৌকা বেয়ে চলে।
ফ্লাইওভার
তোমার কাঁখের কাছে পৌঁছে দেখা গেল শহরের
দুর্দান্ত ফ্লাইওভার!
তার ধনুকের মত বাঁকানো প্রহ্লাদে চড়া গেল বেশ;
তবে দ্রুতই ফুরোল সে খেলা, দ্রুতই নেমে যেতে হল।
কিছুক্ষণ তো পড়েছিলাম উঁচু মাথা উষ্ণীষের তাজ
সেই তো গর্ব আমার, বৃক্ষের উপরে যত সাজ
তুমি বা তোমার শহরের অপরূপ আনচান প্রাণ
ঐ অপরূপ বক্রতা ধরে আছে এন্তার গান!
এখন তার বাঁকানো পিঠের উপর শুয়ে আছে জল থৈ থৈ
সমগ্র স্বদেশ
বন্যার হামাগুড়ি দিয়ে চলা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির সাথে
উন্নয়নের জোয়ার দেখে নিতে হল তার কংক্রিট মেটালিক কাঁধে চড়ে
কোথায় পৌছাল বাংলাদেশ, কতদূর বিস্তৃত পানির প্রদেশ,
চালচুলোহীন সাম্রাজ্য মানুষের;
বিপুল ভয়ার্ত সারি, নিচে জল উপরে আকাশ, মধ্যিখানে প্রাণঘাতী মনোরম
মানুষের সহিষ্ণু জগৎ; কোমল কোমরের কাছে জলের বিছাটির মুগ্ধ কামড়।
গলাজলে দাঁড়ানো ঐ মানুষরা তবুও হাসে, জল যে জীবন আর জলই মরণ
এই সত্য জেনে
অশেষ স্থৈর্য ঐ বকসারি উড়ে যায়, তুলে নিয়ে যায় সভ্যতার শুদ্ধ পারাপার;
ফ্লাইওভারে বিকীর্ণ নতুন স্বদেশে!
কবিতার ভীরু পিছু
পিছু পিছু যাই, দেখি কোথায় চলেছে আজ আমার কবিতা।
মানুষের সন্তপ্ত বন্দরের সীমা ঘেঁষে
বাজার বসতি আর ঊর্ণনাভ লোকালয় ছেড়ে
দেখি লোকায়ত বাংলার প্রান্তর অভিমুখে চলেছে সে
কাদামাখা কৃষকের মত, এক ধ্যানী সন্তের বেশে
শব্দের ব্যর্থ চাষাবাদ ছেড়ে বীজ বপনের যাদুতে
প্রকৃত নিমগ্ন সে হতে চায়, ফলাতে চায় সেই শস্য
যা আহার জোগায় আর মানুষ বাঁচিয়ে রাখে।
জটাধারী সন্ন্যাসীর মত ঐ ধ্যানমৌন পাহাড়ের
চূড়া থেকে নেমে গৃহের নিভৃতির দিকে দেখি তার
দৃঢ় পদক্ষেপ, চিত্ত বিক্ষিপ্ত হতে হতে ঐ শূন্য দর্শনের
দিক হতে মুখ ফিরিয়ে এনে সংসারের আশ্চর্য বাগানে
সে ফোটাতে চায় ফুল কলকাকলীময় শিশুদের ঘর
যেখানে প্রিয়ার একান্ত স্বর মেদুরতা ঘন বর্ষনে বাজে।
প্রসাধিত সকল মুখের মেকি ভালবাসা ছেড়ে
আলোঝলোমল নগরীর উছলে ওঠা যুবতী সকাশে
ঐ পানীয়ের নিয়নের গূঢ় অভিক্ষেপে তখনো বিভ্রান্ত
মাতাল প্রেমিকের সাজসজ্জা খুলে, শিরস্ত্রাণ নামিয়ে
এক ভীরু প্রেমিকার গোপন প্রতীক্ষার দিকে স্থির পায়ে
চলেছে আমার কবিতা নিগূঢ় প্রার্থনার মত প্রাণপন হয়ে।
মৌলিক হতে চেয়ে আমার কবিতা হল ঈশ্বরের প্রাণময় গৃহী।