দেখি পৃথিবী আমার ঘরে চুপ করে বসে আছে আজ দেখি সে রূপের ঢলে মত্ত হয় গৃহিনীর সাজ
Published : 22 Nov 2023, 07:16 PM
বিদেশে গেলেই তার পা লম্বা হয়ে ওঠে
একটি নক্ষত্র ঢাকে লম্ফমান পায়ের তালুতে
ঈপ্সার দীর্ঘ বড়শিতে গেঁথে নেয় মঙ্গোলীয় মাছ
জাভার গম্ভীর সমুদ্র ঢেকে রাখে হাতের ডিবায়
সুনামী জেনেও নেমে পড়ে বালির সাগরে
অনন্ত সুঢৌল সারি খরবাণ যৌবনের তেজ
সমস্ত তুলে রাখে স্মৃতিময় চোখের ডিবায়
চঞ্চল পা ঘোরে সোমত্ত পাড়া ও ঘোড়ায়।
দূরে যে প্রদীপ আছে ম্রিয়মান মুখ
সুদূরে বেদনাহত পথ চাওয়া সুখ
আপন বুকের পাখি ওম নিয়ে বাঁচে
বলে, বাবা তুমি নিরাপদে ফিরে এসো কাছে
তোমাকে প্রলুব্ধ করে মঙ্গোলীয় রূপ
গ্রীবা খাঁজে ঢেলে দেয়া বালির স্বরূপ
নিভন্ত জালে কত রূপালী রোহিত
খরবান সে রৌদ্র বুঝি প্রাণঘাতী খুব।
ফিরে যে পৃথিবী দেখি একান্ত আমার
কেবল পুস্তক নয়, ছাত্র আছে হাজার হাজার
তারা তো শিক্ষা নিতে আগ্রহী মনোযোগী খুব
সারি বেধে বসে থাকা নতমুখী ছাত্রীর রূপ
চুিপচুপি বলে আমাদের চোখ চীনাদের চেয়ে আয়ত
আমাদের প্রাণে প্রাণে ভারতীয় বিধুর সানাই
বাঁশি সুর সরে গেছে, বন্ধুর তবু দেখা নেই।
দেখি পৃথিবী আমার ঘরে চুপ করে বসে আছে আজ
দেখি সে রূপের ঢলে মত্ত হয় গৃহিনীর সাজ
আমার পর্বত সুশ্রী খুব উপরন্তু গাছেরা সবুজ
বাংলার আকাশে ভাসে অতি আশ্চর্য মেঘের গম্বুজ।
ওরাও নম্র চোখে গভীর তাকায়, কৌতুকের স্বর ছুঁড়ে দেয়
আমরা ভিন্ন জাতি, প্রমোদের ভিন্ন কলা জানি
তোমাদের উড়ন্ত লোভে হই ঘূর্ণিরত অবিরল ছবি
উপুড় রয়েছি দেখ কলসির মত্ত রূপে জলে
পান করো, সিঞ্চিত হও, কেন ওরা ছুটে ছুটে আসে
সাদার জগৎ ছেড়ে জাভার পর্বতে আর বালির সাগরে?
সকল পর্যটনপ্রিয় মানুষেরা ফিরে যায় ঘরে
সুদানিজ মেয়েদের রূপরঙ নিঙড়ে নিঙড়ে চেখে
প্রাচীন ঘরে কৈবর্তের রূপালী ইলিশ চেনা খুব
তবু তারা চকচকে চোখে পাখির আগ্রহ জ্বেলে রাখে।
দেখে সকল শিশুর মাঝে প্রিয়তর আপন আত্মজ
আত্মজার টান ঐ রূপশালী ধানভানা রমনীর চেয়ে
তীব্র খুব, দেখে তার নিজস্ব জগৎ হঠাৎ ঝুঁকির মুখে
পড়ে যেতে পারে, সমুদ্র উঠেছিল ফুঁসে সুমাত্রার কুলে।
বিদেশে চোখের মর্ম, সুরমার কাজল গড়ায়
বিদেশে দিগন্তের হ্রদে অপরূপ ব্রিজ টাঙ্গায়
অথচ আপন দেশে বিদেশের কত মূর্তি ঘোরে
এবং সকল বৃক্ষেরা অনবদ্য সবুজে দোলে
আকাশ একই নীল জলে আছে মাছের সাঁতার
বাঙালী ললনা ধরে সুমাত্রীয় বোনের বাহার।
পাহাড়া ডিঙ্গিয়ে তারা চলে যায় পাহাড় চূড়োয়
স্তনচূড়ায় প্রদীপ জ্বেলে ঊরুদের ভেলা চড়ে যায়
কেননা অর্থকরী কিনে আনে প্রমোদের রানী
ছড়াও রূপময় মুদ্রা রূপেরা গড়াবে এক্ষুণি।
তক্ষুণি জেনে যাবে দেশে-বিদেশে নেই কোন ভেদ
জনে জনে পৃথিবীতে বৈচিত্রের অযুত সম্ভার
তাদের সামন্ত ভিন্ন কলা নেই আার্তস্বর নেই
চীৎকারে শীৎকারে ভরে দেয় গোপন তল্লাট
ওরাও তো বেধেছে চুল সুগৌলের খোপা বেধে
ওরাও তো বসাল পথ উঁচু করে দৃশ্যমান ফ্লাইওভারে
নান্দনিক উঁচুঘড়া জাকার্তার উঁচু দালানেরা
গর্বিত আর দৃষ্টির মুগ্ধতা কেড়ে নেয়
দ্বীপে দ্বীপে উড়ে যায় আকাশ বাহন
দ্বীপে দ্বীপে মূর্তিমান মনুষ্যপ্রবণ
জলে ঢলে কোমরের সমান প্রলয়
প্রণয়ে পীড়িত ওরা জানে গভীর প্রণয়
সেখানে যন্ত্রের মত মেলে রাখে উড়ালের পথ
সেখানে পাহাড় যেন উদ্বেলিত সুউচ্চ স্তন
সেখানে মীমাংসা খুব জনে জনে পানীয়ের রঙে
তোমাকে শায়িত করে আকাশের ধ্রুবতারা ঢালে
কত যে ইঙ্গিতময় হাসি, কত ফেননিভ শয্যা পাতা
মধুর চতুর ফাঁদ পেতে আছে গড়াগড়ি
দ্রাক্ষারসের চেয়ে মধুর মদ্যে
তোমাকে ভেজাতে আছে দুগ্ধ সরোবর।
পর্যটনপ্রিয় ঐ দেশে দলে দলে এসেছে নাবিক
ডোডো পাখীদের মত মেয়েমানুষের মাংশ ভালবেসে
এখন শিকারী নব সুনামীয় ভীষণ তালুতে
প্রমত্ত থাবায় তুলে উগড়ে দেবে লীলাহীন খাটে।
বালির সৈকত জুড়ে পৃষ্ঠাময় নীলের স্বরূপ
অন্ধকারে কবরে যায় তারা ঐ সুন্দনিজ রূপ
সমুদ্র গর্জন আনে কক্ষের নিভন্ত আলোয়
যদিও সোমত্ত খুব প্রমত্তের প্রমোদ বিলোয়।
ঐ গণিকাদের রক্ষা করো প্রভু, ওরা পরীদের বোন
জড়িয়ে মৃত্যুর বীজ ঘরে তোলে দ্রোণ
জীবন ঐ মৃত্যুর গলা ধরে শুয়ে থাকে
নম্র আর আমোদের নরোম শয্যায়
ওদের ভিন্ন ক্ষুধা পর্যটকের চেয়েও মৌলিক
মুদ্রা কত নর্তকীর মুদ্রা খুলে দেয়
কড়ির দুরন্ত রথে নিয়ে যাবে ক্ষুদ্র পরিসর
প্রেমিক জড়াবে আর ঢেলে দেবে বিষ।
দ্বীপসারি থেমে গেলে উড়ে চলা মেঘেরা ..
বলে সে অন্য দেশে ভিন্নরূপ পায়ের সরাই
কেবল বর্ধিত হয় অন্য ঘড়া প্রাণের ঘড়াই
বুঝি স্বপ্ন এক বহুনিম্নে জাহাজের দীপ।
নিজের ভুবনে ফিরে দেখে তার সকলি অটুট
কেবল ভেঙ্গেছে সে রূপভর্তি দেহের
আর তার বহুগামী মন পৃথিবীর দেশে দেশে ঘোরে
বেঘোর মনের মত আশাতীত দর্পনের ছবি
জাভার পর্বত জুড়ে পুবের অজস্র মোমবাতি।
প্রজাপতি চিত্রিত কত উড়ে উড়ে আসে
ঠাঁসবুননের গাঢ় সূঁচরীতি অনুপঙ্খ কত নকশায়
পৃথিবীর যত রঙের দ্যুতিময় রঙে রঙ মিশে গেলে
ফুটে ওঠে যত ছায়ারঙ আর অভিনব ছায়াপথ
সেসব পথের অন্তর্ধানে মোহনীয় সব পথ
উত্তপ্ত সব উরুর ভেলায় চড়ে দেখিতেছি পর্বত।
তারা দেখে দেশে দেশে আফ্রোদেশীয় উদ্ধত হারিকিরি
ঝুলন্ত সেতুর উপরে টানটান আরো কত সার্কাস
পরম দোলানো মাটে ছুটেছে হর্ষরেণু
ঐ শর্করা ভরা বায়ু টানে ক্ষীপ্র সকল গাছ।
জোর করে লেখা এসকল পর্যটনপ্রিয় কলমের নিবে
স্বপ্নআকাঙ্ক্ষারা কল্পনায় ফিরে আসে
সবিতার কবিতা গাখানি উদোম চিত্ত জুড়ে
পায়ের কোন খানাখন্দে পড়ে থাকে পড়ন্ত দঙ্গল
দেখি তো পদ্ম জাভার মেয়েটির হাসি ধরে ফোটে
নামে নম্র জলে গুটিগুটি ছুটিতেছি মেঘের কিনারে
ভুলে যাই দূরে অনাথ চোখের ভাষাহীন মুখ
মলিন নয়নে চেয়ে আছে পথ পিতার ভাষ্যসুখ
দিনে রাদে কত তুমুল প্রমোদে এন দিল সেই শমী
পুনরাবৃত্তির ফাঁদে পড়ে নেই দূরাহত আর বাস
পরে তাকে সোচা হতে হল বিদেশের বিদ্যুতে
চাবুকে সোজা করে পিঠ ভয় জুড়ে দিয়ে রথে
অশ্বারোহীর মধ্যরাতের ভয়ধরানো প্রেত স্রোতে
জ্যোৎস্নাদীর্ণ তামাদিসা যত রূপতীর রূপস্তোত্রে
তারা বীক্ষণে বিজ্ঞাপনে তীর্যক ইশারায়
ডাকে আর দেখায় স্ফীতি নরোম পদ্মভারে
মাইল মাইল হলুদের সর্ষেক্ষেত মুঠো ছুঁয়ে থাকে
এখানেও রবিশস্য বাঙলার বসন্তে ফোটে
আন্দামানে যেত অতীতে কত পাপী ও বিপ্লবী
সন্ন্যাসী শত বড়বুদুরের মঠে মঠে ঘোরে কালো সহিসের সাথে
চপলা যোনির মৌনসঙ্কেতে ডেকে ওঠা যত পাখি
প্রভাতে ছুটেছি হাওয়া শনশন প্ররো দ্বীপ এসে পড়ে।
নাকছাবি তার বগলের ঘ্রাণ চেপে ধরে হাঁসফাঁস
হাঁসের নম্র পৃথিবীর জলে ভাসিতেছে বারোমাস
ফিরে এসে দেখে বাংলান জলে এখনো নাভিঃশ্বাস
কত যে আদর গাত্রে চমকায় বারোমাস।
এখাসে নগদ মূল্যের হারিকিরি বেছে নিও পরকাল
সমস্ত ধরে সোমত্ত বলে দুনিয়াটা গোলগাল
সমকালে কত উদার মহান শরীরবৃত্তে চুরি
ঘনঘোর রাতে দর্শন বলে কবিতার সাথে আড়ি।
তখন আকাশে উঠেছে বিলাপ পড়ে থাকে নিচে
এ্যালুমিনিয়ম ডানা নিয়ে আসে নিজস্ব পৃথিবীতে
নম্র সহচরী শিশুদের মুখ সবচেয়ে প্রিয়
বিদেশের ভ্রমে স্বদেশ ভুলিয়া কত কাদা মাখি মুখে
ভালবাসি যত ভালবাসাবাসি পৃথিবীর পথে পথে
বোনেরা সখীরা গলাগলি ধরে বসে আছে কত রথে
আকাশযানে উড়িয়া ছুটিয়া ট্রেন চলে অবিরাম
বুছিরা সেসব সোনালী প্রদেশে দিবানিশি ঝরে ঘাম।
তাই ছুটে চলি নতুন অভিজ্ঞান ভয়ে ভয়ে দিল পাড়ি
জানিনা এমন বজ্রপাতে মাথা যাবে চৌচিড়
বিদেশে এমন নতুন দিশারী বিভ্রমের মুখ ধরে
দেশের মায়াবী মুখজলে নেই হ্রদেতর ছবিটি ধরে।
দ্বীপে দ্বীপে উড়ে যায় আকাশ বাহন