তিনি দীর্ঘ মহাকাব্য রচনার বদলে নিজস্ব বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে ছোট ছোট কবিতা লিখতে পছন্দ করতেন।
Published : 24 Feb 2025, 07:01 PM
রোমান কবি গাইয়ুুস ওলারিয়ুস ক্যাতুল্লুস ( Gaius Valerius Catullus ) গ্রীক ভাষায় রচিত কবি ক্যালিমাখোঁশের কবিতা ‘Βερενίκης κόμη- বেরেনিকেস কোমি’ অথাৎ ‘বেরেনিকের এক গোছা কেশ’ উদ্দেশ্য করে রচিত কাব্যের রোমান অনুবাদে এলিজি জোড় রচনা করেন। এর একটি হলো তার পোয়েমা ৬৫ এবং অপরটি পোয়েমা ৬৬। রোমান প্রজাতন্ত্রের নব্য কবি তথা poetae novi নামে পরিচিত একদল লেখকের মাঝে ক্যাতুল্লুস ছিলেন অন্যতম। তিনি দীর্ঘ মহাকাব্য রচনার বদলে নিজস্ব বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে ছোট ছোট কবিতা লিখতে পছন্দ করতেন। এধরনের কবিতা লিখতে গিয়ে, ক্যাতুল্লুস এ্যালেকসান্দ্রিয়ার কাব্যিক ভাবাদর্শ গ্রহণ করেন। তার এই ভাবাদর্শ পূর্ববর্তী কবি ক্যালিমাখোঁশের কবিতাতেও দেখতে পাওয়া যায়। যত দূর বলা যায়, ক্যাতুল্লুসের এই অনুবাদকর্ম ক্যালিমাখোঁসের পুরোপুরি বিশ্বস্ত উপস্থাপন হিসেবে উপস্থাপিত হলেও, এতে ক্যালিমাখোঁশের লেখা আগেকার আদি কবিতার প্রকৃত অসম্পূর্ণ ধাঁচের সন্ধান মিলে।১ তবে এর শেষ দশটি ছত্র হতে পারে ক্যাতুল্লুসের নিজেরই লেখা।২
তৃতীয় তলেমি’র (Πτολεμαῖος Εὐεργέτης, তলেমাইয়ুস এওয়েরগেতেস) চাচাতো বোন ও স্ত্রী দ্বিতীয় নবাববাহিত রাণী বেরেনিকে এওয়েরগেতেস’র (Βερενίκη Ευεργέτις, জন্ম আনুমানিক ২৭৩ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ), কিপ্রিয়ার জেফিরিয়ন (Ζεφύριον) অন্তরীপে অবস্থিত রাণী আরসিনয়ে’র (Ἀρσινόη) নির্মিত জেফিরিতির আফ্রোদিতির (Ζεφυρίτιδος Αφροδίτης) মন্দিরের এক যজ্ঞানুষ্ঠানে তার নিজের এক গোছা চুলের সঙ্গে একটি কবিতা উৎসর্গ করেন। অর্পণের সঙ্গে একগোছা চুল উৎসর্গ করা হয়, সিরীয়রাজ সেলিইউকু কালিনিকো’র (Σελεύκου Καλλινίκου) বিরুদ্ধে পরিচালিত, তার স্বামীর তৃতীয় সিরিয়ান যুদ্ধ (২৪৭-২৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) থেকে নিরাপদে ফিরে আসার মানত পুরা করতে। অবশ্য চুলের গোছাটি রহস্যজনকভাবে মন্দির থেকে হারিয়ে যায়। পরে রাজপুরোহিত এবং দরবারের জ্যোতির্বিদ কোনোন (Κόνων), রাণীর সেই বেণীটিকে আকাশের একগুচ্ছ তারার মাঝে, নক্ষত্রপুঞ্জ কোমা বেরেনিস৩ আকারে দেখতে পেয়েছেন বলে এক প্রকার ঢাকঢোল পিটিয়ে দেশব্যাপী ঘোষণা করেন। সমালোচকেরা অবশ্য বিষয়টিকে, সাধারণ মানুষের আবেগ এবং অন্ধ ধর্মীয়-বিশ্বাস পুঁজি করে সম্রাটের পক্ষে জনমত তৈরির মাধ্যমে তার ক্ষমতা পাকাপোক্তের নির্লজ্জ প্রচারণা বলেই মনে করে আসছেন। আকাশে মিশ্রীয় রাণীর দীর্ঘ সেই বেণীর স্মরণে, সমকালীন এ্যালেকসান্দ্রিয়া’র (Ἀλεξάνδρεια) কবি কবি ক্যালিমাখোঁশ (Καλλίμαχος) তার বিখ্যাত কবিতা ‘বেরেনিকের এক গোছা চুল (Βερενίκης κόμη-- বেরেনিকেস কোমি), রচনা করেছিলেন। দ্বিতীয় তলেমি (২৮২-২৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) এবং তৃতীয় তলেমি (২৪৬-২২১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)’র রাজত্বকালে তিনি কবিতা রচনায় সক্রিয় থেকে হেলেনীয় যুগের কাব্যিক সংবেদনশীলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। বস্তুত বেরেনিকেস কোমি কবিতাটি তার আইতিয়া (Αἴτια, উৎস বা কারণ) শিরোনামের দীর্ঘ কবিতার অংশ বিশেষ। বর্তমানে কবিতাটি প্যাপিরাস খণ্ড আকারে যাদুঘরে আংশিকভাবে সংরক্ষিত আছে। যা বিশেষত বিভিন্ন প্রাচীন ধর্মীয় গোষ্ঠী, উৎসব, ও জায়গার নামের উৎপত্তি সংক্রান্ত অনুসন্ধান মূলক নাতিদীর্ঘ বৃত্তান্ত। প্রাপ্ত এই খণ্ডটি অমহাকাব্যিক বিষয়ের প্রতি ক্যালিমাখোঁশের ঝোঁকের বেশ ভাল একটি উদাহরণ: যেখানে রাণী নিজে কাব্যের বিষয় না হয়ে বরং তার এক গোছা চুলই প্রাধান্য পেয়েছে। এবং রাণীর কেশগুচ্ছ রাণীর মাথা থেকে তার বিচ্ছিন্ন হওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করে নিজেই কবিতার কাহিনীর বয়ান করে। পাশাপাশি আকাশের সেই বেণীটি রাণী বেরেনিকে ও তার অন্যান্য বিশ^স্ত পরিচারিকাদের কাছ থেকে উপহার সরূপ সুগন্ধী তেল যাঞ্চা করে। এভাবে প্রাচীন একটি কবিতায় বিচ্ছিন্ন একটি চুলের বেণীকে কথা বলতে দেখা যায়।
এই কবিতাটির রোমান অনুবাদের কথা, ক্যাতুল্লুস তার পোয়েমা ৬৫, কবিতায় উল্লেখ করে গেছেন। কবিতাটি তার বন্ধু কুইন্তুস হরতেনন্সিউস হরতালুস’র ( Quintus Hortensius Hortalus ) কাছে লেখা এক চিঠির ছায়া অবলম্বনে রচিত। এই কবিতায় ক্যাতুল্লাস নিজ ভাইয়ের মৃত্যুতে শোকগ্রস্থ থাকার পরও অনুবাদকর্মটি বন্ধুর কাছে পাঠিয়ে এর সর্ম্পকে তার মন্তব্য জানতে চান :
কিন্তু তারপরও, এমন বিষাদের মাঝেও, হরতালুস, আমি তোমার কাছে
ক্যালিমাখোঁশের এই অনুবাদ শ্লোকগুচ্ছ পাঠাচ্ছি
(অন্তত তুমি নিজের মতো করে ভেবে নিতে পারবে, বেয়াড়া বাতাসের প্রতি আস্থা রেখে,
হঠাৎ-ই যা আমার হৃদয় ফসকে বেরিয়ে এলো)... ক্যাতুল্লুস, পোয়েমা ৬৫. পঙতি ১৫-১৮
সত্যি বলতে কি বিদেশের মাটিতে ক্যাতুল্লুসের ভাইয়ের মৃত্যুই হয়তো দূর আকাশে রাণী ‘বেরেনিকের বিচ্ছিন্ন বেণী’র মতো বিষয়টি তাকে অনুরণিত করেছে। আর তাই হয় তো এর মাঝে অবিকল ক্যালিমাখোঁসের কবিতার প্রাসঙ্গিক সবকিছু নেই। কবিতাটির সরল বাংলা অনুবাদ নীচে তুলে ধরা হলো:
Omnia qui magni dispexit lumina mundi...
যিনি এই প্রকাণ্ড মহাবিশ্বের সমস্ত আলোকরাশি দেখেন, ১
যিনি এই অনন্ত নক্ষত্ররাজির উদয় অস্ত নিরূপণ করেন এবং
কীভাবে ধবল-তপ্ত সূর্যের অগ্নিময় আরক্ত উত্তাপে গ্রহণ লাগান
কীভাবে গ্রহেরা নির্দেশিত সময়ে সরে আসে,
কী মধুর সেই ভালোবাসা গোপনে যা ত্রিভিয়াকে৪ অদৃশ্য করে দেয় ল্যাতমিয়ান
গুহার মাঝে ৫ ৫
তার মহাজাগতিক গতিপথ থেকে তাকে দূর হতে ডাকে হাতছানি দিয়ে:
সেই একই ব্যাক্তি, কোনোন, আমাকে দেখেছেন,
বেরেনিকের মাথার এক গোছা কুন্তল হিসেবে,
স্বর্গের গোবরাট হতে জ্বলজ্বল করে জ্বলে। বেরেনিকে,
মেলে ধরে তার বাহু জোড়া, অজস্র দেবতার কাছে করেছে
অঙ্গীকার আমাকে, ১০
সেই মৌসুমে যখন রাজা, সদ্য বিয়ে করে আমার কর্ত্রীকে
গিয়েছিলেন এশিরিয়ায় করতে রাজ্য৬ জয়
সঙ্গে সে নিয়েছিলেন রাত্রিময় খুনসুটির মিষ্ট এক শৃঙ্গার চিহ্ন
কুমারীসুলভতা ভাঙ্গার প্রশ্রয়ের দামে।
ওয়েনুস কি তবে সেই নব দম্পতির প্রতি ছিলেন ঈর্ষাকারত? অথবা সুখী মাতাপিতা ১৫
ছিলেন বিভ্রান্ত কপট চোখের জলে
নিঃসৃত হয়েছিল যা সুপ্রচুর সেই শোবার ঘরে?
মিথ্যা ছিল সেই অশ্রু সব, আমার শপথ।
এসবই শিখিয়ে ছিলেন আমাকে আমার রাণী তার অন্তহীন বিলাপে,
যখন তার নবীন স্বামী গেলেন চলে যুদ্ধে। ২০
কিন্তু, তুমি, বেরিনিকে, পরিত্যাক্তা, বললে নিজেকে শোক না করতে তোমার
বঞ্চিত বিছানার তরে,
কিন্তু বরং সেই শোকার্ত অনুপস্থিতি তোমার প্রিয় ভাইয়ের?
জানি আমি গভীর এক মর্মপীড়া কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল তোমার বিষাদ হৃদয়!
কেন, তুমি গভীর পীড়নে মন হারিয়ে ছিলে যে তখন,
যখন তুমি গিয়েছিলে মূর্চ্ছা ভয়ে! কিন্তু আমি অন্তত ২৫
জেনেছিলাম তোমার নির্ভিকতা যখন ছিলে শিশু।
অথবা তুমি কি ভুলে গেছ সেই মহৎ অন্যায় (এক সময় যা কোনো ক্ষমতাধর ব্যক্তিও
করতো না স্পর্ধা), যেভাবে তুমি জিতে নিলে এক রাজকীয় বিয়ে?৭
কিন্তু কোনো গর্হিত কথা তুমি বলেছিলে, যেদিন জানালে বিদায়
স্বামীকে!
ইউপিতেরের দোহাই, যতবার মুছে ছিলে তুমি নিজ হাতে তোমার দুচোখ! ৩০
এমন কোনো দেবতা ছিল কি বদল করে তোমার মত? অথবা এমন কোনো
প্রেমিক ছিল কি
প্রেমিকের স্পর্শ কামনার থেকে খুব বেশী দূরেও কি ছিলে?
আর তখনই তুমি করলে উৎসর্গ আমাকে, তবে আস্ত এক ষাঁড়ের রক্ত বৈ তো নয়,
বিনিময়ে চাইলে নিজের স্বামীর প্রত্যাবর্তন।৮
এক সংক্ষিপ্ত আদেশে, তিনি দিলেন নির্দেশ ৩৫
মিশরের সীমানার কাছে এক বন্দী এশিয়া।
আমি, এক প্রর্থনা নিষ্পন্নের বিনিময়ে, হই হস্তগত
স্বর্গীয় সভা বরাবর,
সৃষ্টিশীল নতুন এক অর্পণের মাঝদিয়ে অবিসম্বাদী এক শপথ পূরণে।
অনিচ্ছুকভাবে, রাণী আমার, আমি ছেড়েছি তোমার মস্তক
অনিচ্ছুকভাবে: আমি শপথ করে পারি বলতে তোমার এবং তোমার শিরের ৪০
(হয় তো যে কেউ খামোখা এর শপথ করলে পেয়ে যায় সমুচিত জবাব)।
কিন্তু একটি ইস্পাতের ফলার সমান কে পারে স্থির থাকতে?
সেই পর্বত, সবচেয়ে প্রকাণ্ড থেয়া’র উদ্ভাসিত পুত্রদের মাঝে৯
ঘুরে বেড়ায়, এমন কী পরাস্তও হয়,
যখন অগুনতি পার্শিয়ানেরা নতুন এক সাগরে ছড়িয়ে পড়ে, এবং যখন অসভ্য ৪৫
যুবা এবং তার জাহাজ পাল তুলে এথোসের বুক চিরে।১০
কুন্তলের কী আর করার থাকে, যখন এতসব ইস্পাত থেকে আসে?
ইউপিতের, গোটা ক্যালিবেস১১ জাতি কি তবে যাবে বিলীন হয়ে
একইভাবে যে লোক প্রথম করেছিল সঙ্কল্প খুঁজবে
ধাতব প্রস্তর মাটির গভীরে এবং লৌহের দিবে আদল! ৫০
করেছে বিলাপ সদ্য গজানো সঙ্গী অলোকেরা
আমার ভাগ্য নিয়ে, যখন ইথোপীয় মেমনোন’র যমজ ভাই,
তরঙ্গায়িত ডানাদিয়ে করে আঘাত অনিলে, করেছে নিজেকে হাজির
লকরিয়ান আরসিনয়ে’র১২ ডানাওয়ালা তুরগের বেশে, আর বয়ে নিয়ে গেছে আমাকে,
সুদূর আসমানের ছায়াদের মাঝ দিয়ে উড়ে উড়ে ৫৫
এবং করেছে স্থাপন ওয়েনুসের অপাপবিদ্ধ কোলে:১৩
জেফিরিয়ন নিজেও, সেই গ্রীক অধিবাসী
ক্যানোপি তীরের, তার দাসেদের পাঠিয়ে ছিলেন সেখানে।
তারপর ওয়েনুস, অন্তত এরিয়াদনে’র স্বর্ণাভ মুকুট১৪
একাকী থাকে বসে আকাশের বিচিত্র বিতানে ৬০
আমাকেও সেখানেই করে স্থাপন, তখনও তা আর্দ্র, তাই, আমাকেও, হতে হয় দিপ্তিময়
ঠিক স্বর্ণাভ মস্তকের প্রতি প্রশ্রয়প্রিয় একনিষ্ঠতায়।
দেবতাগণের প্রাঙ্গণ হতে ধেয়ে আসা স্রোত হয়ে আমি আসি
প্রাচীন নক্ষত্রের ভীড়ে নতুন তারার বেশে।
ছুঁয়ে দিই ভার্গো আর জ্বাজল্যমান লিও’র আলোক, ৬৫
লাইকাওন কন্যা, ক্যালিস্তো’র পাশেই,
আমি পশ্চিমে চেয়ে থাকি, পথ প্রদর্শক হয়ে ধীর বোবোতেস খানিক সামনে
যে কী-না, উঠে এলো, সবেমাত্র ডুব দিয়ে গভীর সমুদ্রে;
কিন্তু তবুও দেবতাদের পদচিহ্ন আমাকে করে অতিক্রম রাতের বেলাতে,
ধবল-কেশী থাথুস’র কাছ থেকে আলোরা আমার কাছে আসে ফিরে ।১৫ ৭০
তোমার চলে যাওয়াতে, রামনুসিয়ান কনে,১৬ আমি সব বলবো খুলে,
কেননা সত্যকে ঢাকবো না আমি অবগুণ্ঠনে কোনো ভীতির কারণে--
তারারা এসেও যদি ছিঁড়ে কুটি কুটি করে আমাকে আমার শাসানো কথার কারণে--
সঙ্গত কারণেই আমি আমার হৃদয় গহীনে লুকোনো সত্যগুলো ধরবো মেলে:
এতসব ঘটনা পরম্পরায় আমি খুব বেশী নই আনন্দিত ৭৫
যতটা নিদারুন ভুগি যন্ত্রণায় সারাক্ষণ বিচ্ছেদে হবে থাকতে ভেবে,
আমার ঈশ্বরীর মস্তক থেকে। একসময়, যখন আমার ঈশ্বরী
ছিলেন তরুণী
সুগন্ধী বঞ্চিতা আমি; তখন করেছিলাম পান
সহস্র গন্ধসুধা তার সঙ্গে।
তুমি, নারী, আজ বাঁধা পড়ে আছ বৈবাহিক আলোর মশালে,
ছুঁড়ে ফেলে দিও না তো পাশে তোমার পোশাক, উন্মুক্ত করো না বক্ষ ৮০
এবং দিও না সঁপে দেহখানা জ্ঞাতিত্বে-আলোড়িত স্বামীদের কাছে
যতক্ষণ পর্যন্তনা পারো ঢেলে দিতে আমাকে সুখাবহ তর্পণে সেই
অনেক্স কুজো থেকে১৭
যা তোমার সুরাহি; তুমি তো নিয়েছ মেনে বিবাহের রীতি এবং রেখেছ একটি পবিত্র বিছানা।
(কিন্তু এমন কেউ নিজেকে দিয়েছে যে অশুচি আক্ষারণ,
হতে পারে সেটা তার দুষ্ট উপহার-- আহ!-- সর্বস্ব হারাবে সে এবং মিশে যাবে ধরণীর তরে : ৮৫
আমি তাই সেই জঘন্যার কাছে চাইনা কোনোই নৈবেদ্য।
বরং, কনেরা, থাকুক তোমাদের আলয় ঐক্যতানে এবং
অবিরাম করুক বসবাস ভালোবাসা তোমাদের গৃহে।)
তুমি, সত্যি, আমার রাণী যিনি তোমাকে দেখছেন নক্ষত্রের ওপাড় থেকে,
যখন তুমি করলে তুষ্ট স্বর্গীয়া ওয়েনুসকে সেই শুভদিনে, ৯০
আমাকে তো দাওনি, হতে বঞ্চিত সুরভিতে, যতক্ষণ ছিলাম তোমারই,
তবে আজ বরং দাও আমাকে তোমাদের অঢেল উপহার,
যাতে করে নক্ষত্রেরা বার বার বলতে থাকে, ‘পারতাম যদি হতে আমিও ওই রাজকীয় কেশ!
এক্যুয়ারিয়াসের পড়শিকেও তবে দিতাম ওরাইয়নের উজ্জ্বলতা বেশ!’১৮
টীকা
১. Quinn 1985, 355.
২. Hutchinson 1990, 323.
৩. নক্ষত্রপুঞ্জটি আজও কোমা বেরেনিস নামে পরিচিত এবং এটি কন্যা রাশির উত্তরে, সিংহ এবং বোবোটেস নক্ষত্রপুঞ্জের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত। দেখুন Ferguson 1980, 50.
৪. চন্দ্র দেবতা; সিলেনে ও এন্দিমিয়ন (Σελήνη και Ενδυμίων-- Selene and Endymion মিথ-এর সূত্র অনুসারে।
৫. ল্যাতমাস: ক্যারিয়ার একটি পাহাড়।
৬. ২৪৭-২৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তৃতীয় তলেমি, দ্বিতীয় বেরেনিসের স্বামী এবং চাচাত ভাই, তার বোন হত্যার বদলা নিতে তৃতীয় সিরিয়ান যুদ্ধ পরিচালনা করেন ( Quinn ad 66.12 )।
৭. মায়ের প্রেমিক, প্রাক্তন স্বামী, দেমিত্রিয়াসের গুপ্তহত্যায় বেরেনিকের হাত ছিল, পরে তৃতীয় তলেমির সঙ্গে বিয়ের মধ্যদিয়ে তিনি মিশরের রাজরাণীর পদ অলঙ্কৃত করেন ( Quinn ad 66.26–28 )।
৮. ভালোবাসার কারো নিরাপদে ফিরে আসার জন্য ঈশ্বরের কাছে এক ধরনের প্রর্থনা যেখানে মানত হিসেবে কোনো উপহার উৎসর্গ করা হয় (এখানে, এক গোছা চুল) যাতে ঈশ্বর সেই মিনতি পুরা করে। এরই প্রেক্ষিতে সেই প্রার্থনার সঙ্গে একটি ষাঁড়ও বিসর্জন দেয়া হয়।
৯. হেলোস, সূর্য।
১০. গ্রীস আক্রমণের সময়, পারস্য রাজ জেরজেস (৪৮৬-৪৬৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) উত্তর গ্রীসের যেখানে এথোস পর্বত অবস্থিত সেই উপদ্বীপের মাঝ বরাবর একটি খাল খনন করেন।
১১. ক্যালিবেসরা কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে বসবাস করত এবং জায়গাটা খনিজ এবং ধাতব কাজের জন্য বিখ্যাত ছিল।
১২. মেমনোন’র যমজ ভাই হলেন পশ্চিমা বায়ু, জেফাইর। ক্যাতুল্লুস এই বাতাসকে ডানাওয়ালা ঘোড়া রূপে কল্পনা করেছেন। Quinn--এর বিবরণে জেইফার-এর কেশগুচ্ছ পরিবহণ করে স্বর্গে নিয়ে যাবার বিষয়টিকে আফ্রোদিতি জেফাইরিটিস-এর ওপর হাস্যরস আরোপ হিসেবে দেখানো হয়েছে, মৃত্যুর পর যার সঙ্গে আরসিনয়েকেও শনাক্ত করা হয়। শিরোনাম জেফাইরিতিসের মানে ‘জেফাইরিয়ামের ওপর কর্তৃত্ব’ (মন্দিরের একটি স্থান তার প্রতি উৎসর্গীকৃত), কিন্তু ক্যাতুৃল্লুস ‘অজুহাত দেখিয়েছেন এর মানে ‘জেফাইরিয়ামের ওপর কর্তৃত্ব,’ উদাহরণ হিসেবে এই ছত্রটির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে, ‘পশ্চিমা বাতাসকে সংক্ষিপ্ত ভ্রমণে পাঠাতে সক্ষম’ (ছঁরহহ ধফ ৬৬.৫২–৫৮)
১৩. ল্যাতিন ওয়েনুস বলতেও আফ্রোদিতি জেফাইরিটিসকে বোঝানো হয়।
১৪. এরিয়াদনে’র মুকুট নক্ষত্রপুঞ্জ কোরোনা বা নর্দান ক্রাউন-এ পরিণত হয়। থেসিয়াস কর্তৃক পরিত্যাক্ত এরিয়াদনে এর সন্ধান পাওয়ার পর মুকুটটি ছিল দিওনিসোস’র পক্ষ থেকে একটি উপহার। এরিয়াদনে’র মৃত্যুর পর দিওনিসোস মুকুটটিকে আকাশে নিক্ষেপ করেন। সেখানেই তা একটি নক্ষত্রপুঞ্জ হিসেবে থেকে যায়।
১৫. বলা যেতে পারে, নক্ষত্রপুঞ্জ সাগরে অস্ত যায়। টেথিস হলেন ওসেনুস-এর স্ত্রী।
১৬. নেমোসিনি, ছিলেন গ্রীক পুরাণের প্রতিশোধের দেবী।
১৭. দেবতা জ্ঞানে উৎসর্গকৃত এক প্রকার পানীয় যা কেশগুচ্ছের ওপর ঢেলে দেয়া হতো।
১৮. বলা যেতে পারে, ওরাইয়ন নক্ষত্রপুঞ্জ যতই উজ্জ্বল হোক না কেন এখানে অন্যান্য নক্ষত্র বলতে এর প্রতি নির্দেশ না করে বরং কোমা বেরেনিকেকেই বোঝানো হয়েছে।