পাঁচটি বইয়ের মধ্যে হোমারের অডিসি, টেড হিউজের দ্য কামিং অব দ্য কিংস, জেফ্রি চসারের ক্যান্টারবেরি টেলস- রয়েছে।
Published : 27 Dec 2022, 07:56 PM
সৈয়দ শামসুল হক অনূদিত নতুন পাঁচটি বই প্রকাশিত হয়েছে; লেখকের ৮৭তম জন্মবার্ষিকীতে বইগুলো প্রকাশ করেছে প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্য।
এগুলো হল- হোমারের অডিসি, টেড হিউজের দ্য কামিং অব দ্য কিংস, জেফ্রি চসারের ক্যান্টারবেরি টেল্স, টমাস হার্ডির টেস অব দ্য ডার্বারভিলস ও জন বানিয়ানের পিলগ্রিমস প্রোগ্রেস। বইগুলোর প্রচ্ছদ এঁকেছেন শিল্পী ধ্রুব এষ।
লেখকের জন্মদিন উপলক্ষে রাজধানীর পল্টনে ঐতিহ্য’র কার্যালয়ে নতুন এসব বইয়ের প্রকাশনা উৎসব আয়োজন করা হয়। সৈয়দ শামসুল হকের স্ত্রী কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক, মেয়ে বিদিতা সৈয়দ হক ও পৌত্রী লামিয়া সাদিকের হাতে বইগুলো তুলে দেন প্রধান নির্বাহী আরিফুর রহমান নাইম।
প্রকাশনা উৎসবে সৈয়দ শামসুল হক অনূদিত বই এবং তার সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান হয়; কথাসাহিত্যিক-গবেষক-অনুবাদক আফসান চৌধুরী, কথাসাহিত্যিক আফতাব হোসেন, কথাসাহিত্যিক অদিতি ফাল্গুনী, শিল্পী ধ্রুব এষ, কবি পিয়াস মজিদ এতে অংশ নেন।
আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেন, “ঐতিহ্য ৩৫ খণ্ডের সৈয়দ শামসুল হক রচনাসমগ্র প্রকাশ করে যেমন আমাদের কৃতজ্ঞ করেছে, তেমনি আজ ঐতিহ্য প্রকাশিত তার পাঁচটি অনুবাদ বইও পাঠকের কাছে নতুন এক সৈয়দ হককে উপস্থাপন করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।”
আরিফুর রহমান নাইম বলেন, ঐতিহ্য সৈয়দ শামসুল হকের বিচিত্র-বর্ণিল রচনা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে চলেছে। তারই অংশ হিসেবে জন্মবার্ষিকীতে বিশ্বসাহিত্যের তার অনূদিত সেরা পাঁচটি বই প্রকাশিত হলো।
“আশা করা যায় এই পাঁচটি বইয়ের মধ্য দিয়ে অনুবাদক সৈয়দ শামসুল হকের নতুন পরিচিতি পাঠকের কাছে উজ্জ্বল হয়ে দেখা দেবে।”
সৈয়দ হক বাংলা সাহিত্যের অগ্রগণ্য স্রষ্টা; ঐতিহ্য প্রকাশিত পাঁচটি অনুবাদের বই বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে বাংলা ভাষার সংযোগকে আরও দৃঢ় করবে বলে মতামত দেন বক্তারা।
বাংলা সাহিত্যের সব্যসাচী লেখক হিসেবে খ্যাত সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম পৌরসভার থানাপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৬৪ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়সে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান তিনি। বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৮৪ সালে তাকে একুশে পদক ও ২০০০ সালে স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়। এছাড়া তিনি আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, আলাওল স্বর্ণপদক, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, কবিতালাপ পুরস্কার, লেখিকা সংঘ সাহিত্য পদক, ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার পান।
পঞ্চাশের দশকে তার প্রথম উপন্যাস ‘দেয়ালের দেশ’ প্রকাশিত হয়। এছাড়াও তার লেখা অন্যান্য উপন্যাসগুলোর মধ্যে খেলারাম খেলে যা, নিষিদ্ধ লোবান, সীমানা ছাড়িয়ে, নীল দংশন, বারো দিনের জীবন, তুমি সেই তরবারী, কয়েকটি মানুষের সোনালী যৌবন ও নির্বাসিতা অন্যতম।
তার কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে- একদা এক রাজ্যে, বৈশাখে রচিত পঙক্তিমালা, পরানের গহীন ভিতর, অপর পুরুষ, অগ্নি ও জলের কবিতা; পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় ও নুরুলদীনের সারা জীবন তার বিখ্যাত দুটি কাব্যনাট্য।
এছাড়া মাটির পাহাড়, তোমার আমার, কাচ কাটা হীরে, বড় ভালো লোক সিনেমার চিত্রনাট্য লিখেও সুনাম কুড়ান শামসুল হক; শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও লাভ করেন।
১৯৭১ সালের নভেম্বরে তিনি লন্ডন চলে যান। সেখানে বিবিসি বাংলার খবর পাঠক হিসেবে চাকরি করেন; ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসর্মপণের খবর পাঠ করেছিলেন তিনি।
২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়; শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে তাকে সমাহিত করা হয়েছে।