দুর্ঘটনাস্থল থেকে রোববার ৬৮টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। আরো চারজন নিখোঁজ আছেন বলে জানিয়েছে দেশটির এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ।
Published : 15 Jan 2023, 07:54 PM
অন্ধকার নেমে আসায় নেপালের পোখারায় বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের উদ্ধার কাজ স্থগিত করা হয়েছে। সোমবার পুনরায় উদ্ধার কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।
রোববার স্থানীয় সময় সকাল ১১টার দিকে ইয়েতি এয়ারলাইন্সের দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট উড়োজাহাজ এটিআর ৭২-৫০০ পর্যটন নগরী পোখরায় অবতরণের চেষ্টার সময় বিধ্বস্ত হয়। উড়োজাহাজটি ১৫ বছরের পুরনো।
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে পোখারাগামী অভ্যন্তরীণ রুটের ওই উড়োজাহাজটিতে ৭২ আরোহী ছিলেন। যাদের মধ্যে ৬৮ জন যাত্রী, বাকিরা ক্রু। যাত্রীদের মধ্যে ১৫ জন ছিলেন বিদেশি নাগরিক। তাদের পাঁচজন ভারতীয়, চারজন রুশ, দুজন দক্ষিণ কোরীয় এবং আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও আর্জেন্টিনার একজন করে।
এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনাস্থল থেকে ৬৮টি মৃতদেহ উদ্ধারের খবর নিশ্চিত করেছেন দেশটির এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। আরো চারজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন নেপাল বিমানবন্দরের একজন মুখপাত্র।
Yeti Air #ATR72 Right Before The Crash. The aircraft carrying 68 passengers flying to Pokhara from Kathmandu crashed near the destination airport in central Nepal this morning. pic.twitter.com/oKm5f03yHW
— Everest Today (@EverestToday) January 15, 2023
একজন প্রত্যক্ষদর্শী দুর্ঘটনার পরপর দুইজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখার কথা বিবিসিকে বলেছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে এখনো কিছু জানায়নি। বরং তারা বলছেন ৭২ আরোহীর মধ্যে ৬৮টি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে, বাকি চারজন নিখোঁজ।
রোববারের এই দুর্ঘটনার পর ইয়েতি এয়ারলাইন্স আগামী ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের সব নিয়মিত ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করেছে বলে জানায় দ্য ইকোনোমিক টাইমস।
কাসকি জেলার পোখারা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং পুরনো বিমানবন্দরের মাঝামাঝি এলাকায় উড়োজাহাজটি যখন বিধ্বস্ত হয় তখন আকাশ একদম পরিষ্কার এবং রোদ ঝলমলে ছিল। কী কারণে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি।
ঘটনা খতিয়ে দেখতে নেপাল সরকার পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করেছে এবং আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
তিন দশকের মধ্যে এটাই নেপালে সবচেয়ে প্রাণঘাতী বিমান দুর্ঘটনা।
এরআগে ১৯৯২ সালে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের এয়ারবাস এ৩০০ কাঠমান্ডু যাওয়ার সময় পাহাড়ি এলাকায় বিধ্বস্ত হয়ে ১৬৭ আরোহীর সবাই মারা গিয়েছিলেন।
আর ২০১৮ সালের ১২ মার্চ কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে নামার সময় বাংলাদেশের বেসরকারি ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হলে ৫১ জনের প্রাণ যায়।
#WATCH | A passenger aircraft crashed at Pokhara International Airport in Nepal today. 68 passengers and four crew members were onboard at the time of crash. Details awaited. pic.twitter.com/DBDbTtTxNc
— ANI (@ANI) January 15, 2023
হিমালয় কন্যা নেপালে আবহাওয়া খুব ঘন ঘন বদলায়। সে কারণে প্রায়ই সেখানে বিমান দুর্ঘটনা ঘটে। ২০০০ সালের পর থেকে বিমান ও হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা মিলিয়ে দেশটিতে অন্তত ৩০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। যে সংখ্যায় রোববার নতুন করে যোগ হলো আরো ৬৮ জন। বাকি চারজনও হয়তো একই ভাগ্য বরণ করেছেন।
পোখারায় উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত: নিহত বেড়ে ৬৮
জনবসতি এড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন পাইলট: পোখারার প্রত্যক্ষদর্শী
ইয়েতি এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটি সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে সর্বশেষ পোখারা বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে যোগযোগ করেছিল। তারপর সেটি বিধ্বস্ত হয়।
দুর্ঘটনার পরপরই সেখানে পৌঁছান অরুণ তামু নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা। রয়টার্সকে তিনি বলেছেন, উড়োজাহাজটির অর্ধেকটা পড়ে পাহাড়ের মধ্যে। বাকিটা পড়ে সেতি নদীর খাড়িতে।
বিমানটি যখন মাটির দিকে নেমে আসছিল, সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা খুম বাহাদুর ছেত্রী। ঘটনাক্রমে তখন তিনি ছাদের ওপর দাঁড়িয়ে ছিলেন।
“আমি দেখলাম প্লেনটা দুলছে, বাম আর ডানদিকে হেলে যাচ্ছে বার বার। হঠাৎ নাক নিজের দিকে দিয়ে ওটা নামতে শুরু করল। তারপর ওই পাহাড়ের ওপরের খাদের মধ্যে হারিয়ে গেল।”
দুর্ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারাই প্রথমে সেখানে উদ্ধার কার শুরু করেন।
নেপালের পশ্চিমাঞ্চলীয় পোখারা এলাকা জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। কাঠমাণ্ডু থেকে অনেক পর্যটক আকাশপথে সেখানে যান নিয়মিত।
স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের শেয়ার করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ছোট একটি উড়োজাহাজ অবতরণের সময় হঠাৎ কাত হয়ে সরাসরি মাটির দিকে নেমে আসতে থাকে।