ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল যতটা আগ্রাসী হবে ভাবা হয়েছিল, ততটা না হলেও এর তাণ্ডবে ক্ষয়ক্ষতি খুব কমও হয়নি। এখন পর্যন্ত ৬ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্রায় তিন লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়াও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
Published : 10 Nov 2019, 06:10 PM
ঝড় নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে ফোন করে ক্ষয়ক্ষতি সামলাতে সব ধরনের সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন।
এর আগে রাজ্যটিতে ঘূর্ণিঝড় ফণীর তান্ডবের সময় একাধিক বার ফোন করলেও, মমতা কথা বলেননি বলে অভিযোগ করেছিলেন মোদী। এবার তা হয়নি। বুলবুলের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে ফোনে সবিস্তার আলোচনা হয়েছে দুইজনের মধ্যে।
এনডিটিভি জানায়, মোদী নিজেই রোববার সকালে মমতাকে ফোন করে ঝড়ে তার রাজ্যের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে চান এবং সাহায্যের আশ্বাসও দেন।
পরে এক টুইটে মোদী লেখেন, “ঘূর্ণিঝড় এবং ভারি বৃষ্টির পর পূর্ব ভারতের একাধিক এলাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছি। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে এই মুহূর্তে সেখানকার পরিস্থিতি কেমন তা নিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে তাকে সবরকম সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। সকলে সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন, এই কামনাই করি।”
Reviewed the situation in the wake of cyclone conditions and heavy rain in parts of Eastern India.
Spoke to WB CM @MamataOfficial regarding the situation arising due to Cyclone Bulbul. Assured all possible assistance from the Centre. I pray for everyone’s safety and well-being.
— Narendra Modi (@narendramodi) November 10, 2019
বুলবুলের তাণ্ডবে গোটা রাজ্যে প্রাথমিকভাবে ১০ জনের মৃত্যুর খবর আসলেও সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সবক’টি মৃত্যু বুলবুলের কারণে কি না সেটিই জানার চেষ্টা চলছে। রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী জাভেদ খান ঝড়ে ৬ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। এর মধ্যে চারজনের মৃত্যু হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনায়, ১ জন করে দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে।
নয়টি জেলার জেলাশাসকদের পাঠানো প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় ২ লক্ষ ৭৩ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়াও সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত সাড়ে ২৯ হাজারের মতো বাড়়ির পুরোপুরি বা আংশিক ক্ষতি হয়েছে।
মৃত্যু, ফসলের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও, ঝড়ের দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৯৫০ টি মোবাইল টাওয়ার। যার ফলে ঝঞ্ঝা বিধ্বস্ত এলাকায় ব্যপকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থা। ক্ষয়ক্ষতি এবং ঝঞ্ঝা পরবর্তী পরিস্থিতি সোমবার আকাশপথে পর্যবেক্ষণ করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শনিবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৮ টার দিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপ উপকূল দিয়ে স্থলভাগে উঠে আসে। ওই সময় বাতাসের একটানা গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১৫ কিলোমিটার, যা বেড়ে মাঝেমধ্যে ১২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠেছে।
তবে ঝড়ের আগেই উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলীয় এলাকা থেকে এক লক্ষ ৬৪ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে এক লাখ ১২ হাজার ৩৬৫ জন বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে ছিলেন। যে কারণে ঝড়ে প্রাণহানি প্রায় রুখে দেওয়া গেছে বলে জানান কর্মকর্তারা।
রোববার সকালে আশ্রয় কেন্দ্র থেকে লোকজন নিজ নিজ বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। তবে বাড়ি-ঘর ভেঙে যাওয়ায় যারা এখনই ফিরতে পারছেন না তারা চাইলে আশ্রয় শিবিরের কয়েকদিন থেকে যেতে পারবেন বলে জানান স্থানীয় কর্মকর্তারা। তাদের জন্য সব ধরনের ত্রাণের ব্যবস্থা করা হবে।
বুলবুলের প্রভাবে ভারি বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় রাজধানী কলকাতায়ও বহু গাছ উপড়ে গেছে, নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে কলকাতা শহরের একটি নামকরা ক্লাবে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
ঝড়ের কারণে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত কলকাতা বিমাবন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছিল। বেশ কয়েকটি ফ্লাইটও বাতিল করা হয়।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে ভারতের ওড়িশা রাজ্যেও ভারি বৃষ্টি ও ঝড় হয়েছে। সেখানে গাছের নিচে চাপা পড়ে একজনের মৃত্যু খবর পাওয়া গেছে। শনিবার মধ্যরাতের পর ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের দিকে চলে আসে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বুলবুলের প্রভাবে রোববারও দিনভর পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশায় ভারির বৃষ্টিপাতের কথা বলা হলেও বাস্তব চিত্র ছিল কিছুটা ভিন্ন।
কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার জানায়, রোববার ভোরে থেমে থেমে কিছুটা বৃষ্টি হলেও সকালের দিকে তা উধাও হয়ে আকাশ অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যায়। বাতাসের গতিও স্বাভাবিক।
বুলবুলের দ্রুত শক্তি ক্ষয়ের কারণেই আবহাওয়ার এই উন্নতি হয়েছে বলে জানায় আলিপুর আবহাওয়া অধিদপ্তর।