ইতালির মধ্যাঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা আড়াইশ’তে পৌঁছেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেকে আটকা পড়ে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
Published : 26 Aug 2016, 02:13 AM
এদিকে একের পর এক পরাঘাতে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
বিবিসি বলছে, বুধবার ভোররাতের ওই ভূমিকম্পের পর কয়েকশ পরাঘাতে কেঁপে উঠেছে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা।
বৃহস্পতিবার বিকালে ৪ দশমিক ৩ মাত্রার পরাঘাতের পর ইতোমধ্যে ভেঙে পড়া ভবনে উদ্ধারকাজ ফেলে বেরিয়ে আসেন কর্মীরা।
প্রায় পাঁচ হাজার উদ্ধারকর্মী ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জীবিতদের খোঁজে তল্লাশিতে রয়েছেন। ভারি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের পাশাপাশি খালি হাতে চলছে অনুসন্ধান।
স্থানীয় সময় বুধবার ভোররাত ৩টা ৩৬ মিনিট, যখন ঘুমে বাসিন্দারা সে সময় রোমের ১৪০ কিলোমিটার পূবের পাহাড়ি এলাকায় আঘাত হানে ৬ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প।
এতে আমাত্রিসি, আরকুয়াতা, আকুমোলি ও পেসকারে দেল ত্রেনতো শহর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ভূমিকম্পে আহত তিন শতাধিক মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, হতাহতদের অনেকেই সেখানে অবকাশ যাপনে গিয়েছিলেন।
নিহতদের মধ্যে স্পেনের একজন, রোমানিয়ার পাঁচজনসহ আরও অনেক বিদেশি রয়েছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজন বয়স্কদের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন।
ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ‘বেশ কয়েকজন ব্রিটিশ নাগরিক’ রয়েছেন বলে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন।
ড্রোন ব্যবহার করে উপর থেকে ধারণ করা আমাত্রিসির একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ এলাকার স্থাপনা পুরোপুরি ধসে গেছে। গত বছর ভোটে ইতালির সবচেয়ে সুন্দর ঐতিহাসিক শহরগুলোর একটি নির্বাচিত হয়েছিল আমাত্রিসি। পাস্তার জন্য ইতালি ও এর বাইরে সমাদৃত এই শহরে সপ্তাহান্তে জনপ্রিয় একটি খাবার উৎসব হওয়ার কথা ছিল, যার জন্য সেখানে জড়ো হতে শুরু করেছিলেন আগ্রহীরা।
শহরের হোটেল রামার ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ১৫ থেকে ২০ জন পর্যটকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে সেখানকার মেয়র জানিয়েছেন। তার ভাষ্যমতে, ভূমিকম্পে ধসে পড়ার আগে সেখানে ৩২ জন অতিথি ছিলেন।
কয়েক শতক ধরে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট প্রাচীন নগরী পেসকারে দেল ত্রেনতোও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মুহূর্তের মধ্য শেষ হয়ে গেছে কয়েকশ বছরের ইতিহাস। এই নগরীকে আর আগের চেহারায় নেওয়া সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য এসেছে বিবিসির প্রতিবেদনে।
জীবিতদের সন্ধানে বুধবার রাতেও শহরগুলোয় ধ্বংসস্তূপের নিচে তল্লাশি চালান উদ্ধারকর্মীরা। অনেক ভবন নিরাপদ না হওয়ায় নিজেদের গাড়িতে বা তাঁবুর নিচে রাত কাটান আতঙ্কিত লোকজন।
এক জীবিতের খোঁজে ফায়ার সার্ভিসের দুই কর্মী ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে অনেকটা গভীরে যান। ‘এটা একটা কুকুর’ বলে চিৎকার করে ওঠেন তাদের একজন।
প্রায় আধা ঘণ্টা খোঁড়ার তারা কুকুরটিকে পানি দিতে পারেন। তারপর সেটিকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন তারা। এ সময় উপস্থিত লোকজন হাততালি তাদের অভিনন্দন জানান।
“এটা কোনো মানুষ না কোনো প্রাণি, তা আমাদের কাছে বিষয় নয়। আমরা এটাকে উদ্ধার করেছি,” বলেন সেখানে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকাজে নেতৃত্ব দেওয়া গিয়ান্নি মাসেরাতা।
উদ্ধারকর্মীরা রাতে ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে ১০ বছরের এক বালিকাকে জীবিত উদ্ধার করেন, প্রায় ১৫ ঘণ্টা সেখানে পড়ে ছিলেন তিনি।
তবে তার মতো ভাগ্য ছিল না অন্য অনেক শিশুর। আকুমোলির কাছে একটি চার্চের বেল টাওয়ার পাশের বাড়িতে পড়লে চারজনের পরিবারের সবার মৃত্যু হয়, যাদের মধ্যে নয় বছর ও আট মাসের দুই ভাই ছিল।
ওই টাওয়ার সম্প্রতি পুনঃস্থাপন করা হয়েছিল। তাতে কোনো গাফিলতি ছিল কি না তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু হয়েছে।
“আজ অশ্রুপাতের দিন, কাল আমরা পুনর্নির্মাণ নিয়ে কথা বলতে পারব,” বুধবার রাতে সাংবাদিকদের বলেন রেনজি।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইতালিতে সর্বশেষ বড় ভূমিকম্প হয় ২০০৯ সালে লাকুলিয়া শহরে, যাতে তিনশর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। এবার মৃতের সংখ্যা তার কাছাকাছি বা বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংসস্তুপ থেকে জীবিতদের উদ্ধারের আশা ক্ষীণ হয়ে আসতে থাকলেও ফায়ার সার্ভিসের মুখপাত্র বলছেন, লাকুলিয়ায় ভূমিকম্পের ৭২ ঘণ্টা পরও জীবিতদের পাওয়া গিয়েছিল।
দুটি ‘ফল্ট লাইনের’ কারণে ইতালি ইউরোপের সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প প্রবণ দেশগুলোর একটি।
বিশ শতকের শুরু থেকে ইতালিতে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্প হয় ১৯০৮ সালে। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে ভূমিকম্প ও এর প্রভাবে সৃষ্ট সুনামিতে ৮০ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয় সে সময়।