গেইম তৈরিতে চ্যাপলিনের পরিবারের একমাত্র চাওয়া ছিল, এতে ‘সহিংসতা, লিঙ্গ ও বর্ণ বৈষম্যের’ মতো বিষয়গুলো না রেখে যেন কেবল মূল গল্পটিই বলা হয়।
Published : 08 Dec 2022, 06:48 PM
কালজয়ী কৌতুকাভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনের বিভিন্ন কাজ ও পছন্দ অবলম্বনে ভিডিও গেইম তৈরির বিশেষ স্বত্বাধিকার কিনেছে কানাডার এক গেইম নির্মাতা কোম্পানি।
‘দ্য গ্রেট ডিক্টেটর’, ‘মডার্ন টাইমস’ খ্যাত এই পরিচালক অনেক সিনেমার কাহিনি লেখার পাশাপাশি অভিনয়েও ছিলেন সমান দক্ষ। তার অভিনীত চরিত্র ‘ট্র্যাম্প’ এখনও কৌতুক জগতে সবচেয়ে আইকনিক চরিত্রগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত হয়।
চলচ্চিত্র মহলের যারা এক সময় তার কাজের অবজ্ঞা করতেন চ্যাপলিন এখন তাদের কাছেও সমাদৃত। ইউটিউবে তার বিভিন্ন পুরনো ক্লিপ এমনকি পুরো সিনেমা এখনও আকৃষ্ট করে সমসাময়িক দর্শকদের।
তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে আমরা পাঁচ বছর অপেক্ষা করেছি…আর এখানে রয়্যালটি নিয়ে আলোচনার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে তাদের সঙ্গে আমাদের মূল্যবোধ মেলার বিষয়টি।
জনপ্রিয় এই চলচ্চিত্র নির্মাতার পরিবারের কাছে গেইমের ধারণা সফলভাবে চ্যাপলিন বিশেষজ্ঞ ইয়েভেস ডুরান্ড ও কুইবেকভিত্তিক গেইম নির্মাতা ‘বি ডিফ’রেন্ট গেইমস বোঝাতে পেরেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস।
গেইম তৈরিতে চ্যাপলিনের পরিবারের একমাত্র চাওয়া ছিল, এতে ‘সহিংসতা, লিঙ্গ ও বর্ণ বৈষম্যের’ মতো বিষয়গুলো না রেখে যেন কেবল মূল গল্পটিই বলা হয়।
“চ্যাপলিনের আকর্ষণের মূল জায়গা হলো, আপনি এখনও ১০-১৫ বছর বয়সী একদল কিশোরকে তার অভিনীত কোনো সিনেমা দেখালে, তা আজও তাদের হাসাবে।” --বলেন বি ডিফ’রেন্ট গেইমসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা রবার্ট ইয়াং।
“তিনি যা করতেন, যেভাবে করতেন, যেভাবে নিজেকে প্রকাশ করতেন ও যেভাবে চলাফেরা করতেন, সেগুলো আজও সবাইকে হাসায়। এগুলো দেখে তারা এখনও মজা পান…ফলে, এটি গেইম হিসেবে আনলে ভালোই হবে।”
তবে, চ্যাপলিনের চরিত্র কীভাবে একটি ভিডিও গেইম আকারে আসবে, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
তবে, চ্যাপলিনের চরিত্র কীভাবে একটি ভিডিও গেইম আকারে আসবে, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন। কারণ, এর সঙ্গে সম্পৃক্ত লোকজনকে গেইমের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন বাদে এখনও তেমন কিছু করতে দেখা যায়নি।
নিজের যে কোনো প্রকল্পকে ‘সামাজিক প্রভাব ফেলার’ ভিডিও গেইম হিসেবে বিবেচনা করেন ইয়াং। গেইমগুলো তৈরি হচ্ছে মন্ট্রিয়েলের ‘গেইমিং সহায়ক’ কোম্পানি ‘ইন্ডি অ্যাসাইলামের’ সহায়তায়।
“তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে আমরা পাঁচ বছর অপেক্ষা করেছি…আর এখানে রয়্যালটি নিয়ে আলোচনার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে তাদের সঙ্গে আমাদের মূল্যবোধ মেলার বিষয়টি।” --বলেন ইয়াং।
তিনি আরও বলেন, চ্যাপলিনের সিনেমা কেবল বয়স্ক লোকজন দেখেন, এই ধারণাটি ভুল। কারণ, প্রতিবছর ইউটিউবে ২০ কোটির বেশি দর্শক চ্যাপলিনের সিনেমা দেখেন, যাদের বয়স ১৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।
“এ বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ নিয়ে কখনওই ভিডিও গেইম বানানো হয়নি।” --বলেন ইন্ডি অ্যাসাইলামের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ক্রিস্টোফার চ্যান্সি।
তবে, তার ধারণা ভুল। কারণ, ১৯৮৮ সালে এমএস-ডস অপারেটিং সিস্টেমের জন্য একটি ‘চ্যাপলিন’ গেইম এনেছিল মার্কিন গেইম নির্মাতা ইউএস গোল্ড।
ধনী-গরীবের মধ্যে বৈষম্য কেন্দ্র করেও তৈরি হতে পারে একটি সম্ভাব্য চ্যাপলিন গেইম।
পুরোনো গেইমটি কিছুটা অস্বাভাবিক, অনেকটা লায়নহেডের হলিউড ধাঁচের ‘দ্য মুভিজ’ গেইমের পূর্বসূরির মতো। এতে ট্র্যাম্পের পোষাকে বিভিন্ন ‘দৃশ্যে’ চ্যাপলিনের অ্যানিমেটেড চরিত্র হিসেবে গেইম খেলতে পারতেন গেইমাররা। পরবর্তীতে, সেইসব দৃশ্য একসঙ্গে সম্পাদনা করে একটি সিনেমায় রূপ দেওয়া হতো, যা গ্রহন বা বর্জনের সুযোগ পেতেন গেইমার।
পিসি গেইমারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গেইমটি সে সময়ের হলেও এটি নিয়ে এখনও কৌতুহল রয়েছে। এর গেইমপ্লে দেখলেই সেটি বোঝা যায়।
চ্যান্সির অনুমান বলছে, মহামারীর কারণে এমন বিভিন্ন গেইমের প্রতি ক্ষুধা তৈরি হয়েছে, যেগুলো গতানুগতিক ধারার বাইরে।
“কিছু সময়ের জন্য জীবন এতটাই চাপের মুখে পড়েছিল যে প্রাপ্তবয়স্ক থিমের বিভিন্ন ডার্ক ভিডিও গেইম খেলা, উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিতো।”
তিনি আরও যোগ করেন, ধনী-গরীবের মধ্যে বৈষম্য কেন্দ্র করেও তৈরি হতে পারে একটি সম্ভাব্য চ্যাপলিন গেইম।
বিষয়টি অবাক করার মতো হলেও ডস অপারেটিং সিস্টেমে তৈরি গেইমটি থেকে ইঙ্গিত মিলছে, এটি অসম্ভব কিছু নয়। তবে, কালজয়ী চরিত্রটির বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির মূল উপাদান তুলে ধরতে ও মূল চরিত্র যাই করুক, তা যেন আসলেই মজাদার কিছু হয়, এমন একটি গেইম তৈরি নির্মাতাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে। কারণ, সর্বকালের সেরা কৌতুকাভিনেতা বলে কথা!
গেইমটি নিয়ে তেমন প্রত্যাশা না থাকলেও, চ্যাপলিনের মতো আইকনিক চরিত্রকে ব্লকচেইনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার বদলে তার কাজের ওপর ভিত্তি করে ভালো গেইম তৈরির পরামর্শ দিয়েছে পিসি গেইমার।