চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে ভোটের লড়াইয়ে জিতে ভারতের পার্লামেন্ট ভবন পা রাখা মাত্রই বাঙালি দুই অভিনেত্রী নুসরাত জাহান ও মিমি চক্রবর্তীকে নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় বইছে আলোচনার ঝড়।
Published : 29 May 2019, 11:09 PM
এক পক্ষ ধুয়ে দিচ্ছেন এই দুই অভিনেত্রীকে। তাদের চোখে, দুজনের পোশাক এবং ছবি তোলার ভঙ্গী আইন সভার জন্য অমর্যাদাকর।
এর মধ্যে আরেক দল নুসরাত-মিমির পক্ষ নিয়ে বলেছে, তারা বাক-আক্রমণের শিকার হচ্ছেন নারী বলেই, নইলে কোনো পুরুষ পার্লামেন্ট সদস্যের পোশাক নিয়ে কেউ কেন কিছু বলছে না।
টালিউড তারকা নুসরাত ও মিমি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা মুখোপাধ্যায়ের দলের প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটের এবার প্রথম লোকসভা সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
ভোটে জয়ের পর সোমবার দাপ্তরিক কাজে নয়া দিল্লিতে সংসদ ভবনে যাওয়ার পর উচ্ছ্বসিত ছিলেন নুসরাত-মিমি। সোশাল মিডিয়ায় সেই উচ্ছ্বাসের কিছু ছবিও ছড়িয়ে দেন দুজন।
পার্লামেন্ট ভবনের সামনে তোলা নিজের ও নুসরাতের বেশ কয়েকটি ছবি সোমবার টুইটারে তুলে মিমি লেখেন, “এবং এই আমরা আবারো।”
আর মমতা ও বসিরহাটের ভোটারদের ধন্যবাদ দিয়ে ‘একটি নতুন সূচনা’ বার্তাসহ ইনসটাগ্রামে ছবি দেন নুসরাত।
পার্লামেন্ট ভবনে ‘বোঝে না সে বোঝে না’ তারকা মিমি পরেছিলেন নীল ডেনিম, সাদা শার্ট। আর ‘লাভ এক্সপ্রেস’ নুসরাত ছিলেন গাঢ় রঙের ফরমাল স্যুটে। চুল পেছনে টেনে পনিটেইল করেছিলেন দুজনেই।
এই ছবি দেখার পরই শুরু হয় সমালোচনা।
শাড়ি বা খাদি কাপড় না পরে পশ্চিমা পোশাকে সংসদে আসা নিয়েই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুজনের সমালোচনায় মুখরা হয়ে ওঠেন অনেকে।
‘সংসদ ভবনের সামনে ছবি তোলার একটা সুযোগ মিললো তারকাদের’ এমন মন্তব্যও আসে।
টুইটারে মিমির উদ্দেশে একজন লেখেন, “সংসদ ভবনের সামনে একজন নব নির্বাচিত সাংসদের এমন আচরণ করা উচিৎ নয়। যেখানে নির্বাচিত হয়েছে সেই সর্বোচ্চ মর্যাদার কার্যালয়কে আপনি অসম্মানিত করেছেন। আমরা আশা করি আপনি সচেতন হবেন এবং একজন সংসদ সদস্যের মতো আচরণ করবেন।”
তুমুল সমালোচনার এক পর্যায়ে নুসরাত-মিমিদের পক্ষেও দাঁড়িয়ে যান অনেকে।
পার্লামেন্টের সামনে বিজেপি থেকে জয়ী সাবেক ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীরের টিশার্ট আর জিন্স পরা ছবি দেখিয়ে একজন লেখেন, পশ্চিমা পোশাক নিয়ে এর সমালোচনা নেই কেন?
আরেকজন টুইট করেন, “যখন আমার প্রধানমন্ত্রী উদ্ভট পোশাকের প্রতিযোগিতা করেন তখন সমালোচকরা বাহ বাহ করেন। কিন্তু যখন মিমি চক্রবর্তী ও নুসরাত জাহানের মতো কিছু তরুণ রাজনীতিক নিজেদের স্মার্টভাবে উপস্থাপন করেন, তখনই সবাই সমালোচনায় মেতে ওঠেন।”
টালিগঞ্জের আরেক তারকা স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় টুইটারে বলেন, “তারা ভোটে জিতেছে। জনতা তাদের ভোট দিয়েছে। তারা যোগ্যতা নিয়েই সংসদে গেছে। জিনস পরা যাবে না, এমনটা সংসদের বিধিতে নেই।”
পোশাক নিয়ে নুসরাত ও মিমিকে করা ট্রলের প্রতিক্রিয়ায় এই মন্তব্যও এসেছে যে, ক্ষমতা হাতে থাকা নারীও যখন এমন যৌন আক্রমণ থেকে রেহাই পান না, তখন এই আশঙ্কাই জাগে একজন সাধারণ কর্মজীবী নারী অফিসের পোশাকে ঘরের বাইরে পা রাখলে তাকে কত কিছুর মুখোমুখি হতে হয়।
সোশাল মিডিয়ায় ট্রল নিয়ে নুসরাত বিবিসিকে বলেন, “আমার পোশাক গুরুত্ব রাখে না। যারা আমার মনোনয়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল ভোটে জিতে যেমন তাদের সমুচিত জবাব দিয়েছি, তেমনি আমার কাজই এইসব ট্রলের জবাব দেবে। এই যুদ্ধে চড়াই-উৎরাই রয়েছে, তবে আমি প্রস্তুত আছি।”
ট্রলকারীদের সমালোচনা করে মিমি বিবিসিকে বলেন, “এরা আমাদের পোশাক নিয়ে এত বিচলিত, অথচ সাংসদের মধ্যে যারা দাগি, যারা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েও সাধুর বেশ ধারণ করে থাকে, তাদের নিয়ে তারা চিন্তিত নয়।”
মিমি বলেন, “যখন একজন তরুণ পুরুষ সাংসদ জিনস আর টিশার্ট পরেন, তখন কেউ আপত্তি তোলেন না। সমস্যা হচ্ছে তখনই যখন নারী এটা করছেন।”
“পরিবর্তনকে উপলব্ধি করার সময় এসেছে। এটা রাতারাতি না হলেও শুরুটা কিন্তু হয়ে গেছে,” মন্তব্য নুসরাতের।