বিবিসির সঙ্গে একুশ বছরের পথচলার অবসান ঘটানোর ঘোষণা দিলেন সাংবাদিক অ্যান্ড্রু মার, যিনি বিবিসির সানডে মরনিং শোর উপস্থাপনা করে আসছিলেন ২১ বছর ধরে।
Published : 21 Nov 2021, 11:52 AM
তিনি বলেছেন, আসছে নতুন বছরের শুরু থেকেই তিনি কাজ করবেন মিডিয়া কোম্পানি গ্লোবালের সঙ্গে, সেখানে লেখার পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতি শোর উপস্থাপনা করবেন। অন্য সংবাদপত্রের জন্যও তিনি লিখবেন।
গার্ডিয়ান লিখেছে, বিবিসিতে ‘নিরপেক্ষতার কঠোর নিয়মের’ বাইরে এসে নিজেকে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে এখন আরও বেশি স্বাধীনতা পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন এই ‘সেলিব্রেটি হোস্ট’।
এক টুইটে তিনি লিখেছেন, আমার ধারণা, ব্রিটিশ রাজনীতি আর নাগরিক জীবন আরও অস্থির একটি দশকের মুখোমুখি হয়েছে। আর আমি তো বলেছি, আমি আমার নিজের কণ্ঠ ফিরে পেতে চাই।
“ষোল বছর ধরে প্রতি রোববার সকালে আমি অ্যান্ড্রু মার শো চালিয়ে আসছি। আমার মনে হয়, যে কারও জন্যই এটা অনেক বেশি সময়।”
এই দীর্ঘ সময়ে বিবিসিতে ‘চমৎকার’ সব সহকর্মীর সঙ্গে আনন্দের অনেক স্মৃতির কথাও তিনি টুইটে বলেছেন।
Personal announcement. After 21 years, I have decided to move on from the BBC.l leave behind many happy memories and wonderful colleagues. But from the New Year I am moving to Global to write and present political and cultural shows, and to write for newspapers
— Andrew Marr (@AndrewMarr9) November 19, 2021
বিবিসির কর্মীরা চাইছিলেন, আরও অন্তত দুই বছর অ্যান্ড্রু মার তাদের সঙ্গে থাকুক। কিন্তু তিনি বেশ কিছুদিন ধরে গ্লোবালের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে আসছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এখন রোববার সকালের ওই শোতে অ্যান্ড্রু মারের উত্তরসূরি কে হচ্ছেন, তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলবে আগামী কয়েক সপ্তাহে।
গার্ডিয়ান লিখেছে, অ্যান্ড্রু মারের এই প্রস্থান বিবিসির সাংবাদিক ও উপস্থাপকদের শীর্ষ পদগুলোতে রদবদলেরই অংশ।
সম্প্রতি বিবিসির উত্তর আমেরিকা সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে জন সোপেলকে সরিয়ে আনা হয়েছে, তার বদলে ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠানো হচ্ছে স্কটল্যান্ড এডিটর সারাহ স্মিথকে।
পলিটিক্যাল এডিটর লরা কুয়েন্সবার্গও ওই দায়িত্ব ছাড়ার বিষয়ে আলোচনায় রয়েছেন, ভষ্যিতে তাকে ‘টুডে’ অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় দেখা যেতে পারে। আর সেটা ঘটলে আরও কিছু পরিবর্তন বিবিসিতে দেখা যাবে।
শোনা যাচ্ছে, বিবিসির ফ্ল্যাগশিপ প্রোগ্রাম ‘নিউজ অ্যাট টেন’ এর উপস্থাপক হিউ এডওয়ার্ডসও হয়ত অ্যান্ড্রু মারের মত বিবিসি ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন।
গার্ডিয়ান লিখেছে, রোববার সকালের শোর জন্য আলোচনায় রয়েছে নিক রবিনসনের নাম। আর এডওয়ার্ডস সত্যিই চলে গেলে তার উত্তরসূরি পারেন মিশাল হুসাইন।
অ্যান্ড্রু মারকে একজন ‘উজ্জ্বল সাংবাদিক ও উপস্থাপক’ হিসেবে বর্ণনা করে বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি বলেছেন, “অসাধারণ সব রাজনৈতিক সাক্ষাৎকার এবং স্মরণীয় অনুষ্ঠানের অতুলনীয় স্মৃতি তিনি রেখে যাচ্ছেন।”
গ্লাসগোতে জন্ম নেওয়া মারের সাংবাদিকতার সূচনা ১৯৮৪ সালে, স্কটসম্যান পত্রিকায়। পার্লামেন্ট বিষয়ক প্রতিবেদক হিসেবে লন্ডনে যাওয়ার পর তাকে রাজনীতি বিষয়ক প্রতিবেদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
১৯৮৬ সালে ব্রিটিশ পত্রিকা ইনডিপেনডেন্টের যাত্রা শুরু হলে অ্যান্ড্রু মার সেখানে যোগ দেন। পরে ইকোনমিস্টে যোগ দিয়ে পলিটিক্যাল এডিটরের দায়িত্ব নেন।
১৯৯২ সালে পলিটিক্যাল এডিটর হিসেবে ইনডিপেনডেন্টে ফেরেন মার। এর চার বছরের মাথায় পান সম্পাদকের দায়িত্ব। পত্রিকার বিক্রি ধরে রাখতে সে সময় বড় ধরনের পরিবর্তন আনেন তিনি।
১৯৯৮ সালে মার ইনডিপেনডেন্ট ছাড়ার সময় তাকে বরখাস্ত করার গুঞ্জনও শোনা গিয়েছিল। দুবছর বিভিন্ন পত্রিকায় ঘুরে ২০০০ সালের মে মাসে তিনি যোগ দেন বিবিসিতে।
ব্রিটিশ এই সম্প্রচারমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নে সবসময়ই সোচ্চার ছিলেন অ্যান্ড্রু মার। গতবছর এক সাক্ষাৎকারে তিনি গার্ডিয়ানকে বলেছিলেন, “বিবিসিকে ধ্বংসের পাঁয়তারা চলছে।”