দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ‘বাড়তে থাকায়’ তিন বছর পর দেশের পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
Published : 06 Oct 2014, 09:59 AM
গত কয়েকমাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক ও লেনদেন মোটামুটি ধারাবাহিকভাবেই বাড়ছে। ব্রোকারেজ হাউজগুলোতেও আগের তুলনায় বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের আনাগোনা।
গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৪ কার্যদিবসে ডিএসইর সার্বিক সূচক প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়ে ৫ হাজার ২৩৮ পয়েন্ট হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে লেনদেন একদিনের জন্যও ৫০০ কোটি টাকার নিচে নামেনি।
২১ মাস আগে ডিএসইর নতুন সূচক চালু হওয়ার পর গত ২৫ সেপ্টেম্বর তা প্রথমবারের মতো ৫ হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করে।
ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্বপন কুমার বালা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাজারে অর্থ-প্রবাহ বেড়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের অর্থও বাজারে ঢুকছে; ফলে লেনদেন ও সূচক বাড়ছে।”
ডিএসইর হিসাব অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে বছরের প্রথম নয় মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে প্রকৃত বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ১৩ কোটি টাকা। গত বছরের বারো মাসে এ পরিমাণ ছিল এক হাজার ৯৪২ কোটি টাকা।
বিদেশি বিনিয়োগের এ প্রবৃদ্ধি বাজারকে ইতিবাচক ধারায় ফেরাতে সহায়তা করছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
২০১০ সালের ডিসেম্বরে ধস শুরুর পর ২০১৩ সাল পর্যন্ত পুঁজিবাজারে মন্দার হাওয়া চলে। সূচক পতনের সঙ্গে সঙ্গে লেনদেন নেমে আসে একশ কোটি টাকার কাছাকাছি। এতে বাজারে এক ধরনের স্থবিরতা সৃষ্টি হয়।
বাজারে এখন তারই সুফল আসতে শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, “বাজারে লেনদেন ও সূচক বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বিদেশি বিনিয়োগ। তবে ব্যাংক আমানতে সুদের হার কম থাকায় পুঁজিবাজারে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের অর্থ প্রবাহ বেড়েছে।”
গত অগাস্টে দেশের ব্যাংকগুলোতে আমানতের সুদের হার ছিল ৭ দশমিক ৭১ শতাংশ, যা গত ২০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। অতীতেও আমানতের সুদের হার কমলে পুঁজিবাজারে অর্থ প্রবাহ বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে।
এর বাইরেও বাজারে অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধির পেছনে আরো কয়েকটি কারণের কথা বলেছেন স্বপন কুমার বালা।
“যেসব ফান্ড ম্যানেজারের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ আসে; সেইসব ফান্ড ম্যানেজাররা বাজার সম্পর্কে খুব ভালো প্রেডিকশন দিচ্ছেন। আর মার্কেট যখন ক্র্যাশ করে সেই স্মৃতি ভুলে যেতে সময় লাগে। আমাদের সেই সময় পার হয়ে গেছে।”
তাছাড়া দেশের পুঁজি বাজারে বিনিয়োগ করে যে পরিমাণ মুনাফা পাওয়া যায় (রেইট অব রিটার্ন) ‘অন্য কোথাও’ তা পাওয়া যায় না বলে বিনিয়োগ বাড়ছে বলে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনে করেন।
শাকিল রিজভী বলেন, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাড়ার কারণেও বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। এছাড়া শেয়ারের দর আরেক বেশি পড়ে গেলেও বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হন।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত একমাসে কেনার চাপ বেশি থাকায় ডিএসইর আরএসআরই (রিলেটিভ স্ট্রেংথ ইনডেক্স) ৯০ এর ওপরে অবস্থান করছে। আরএসআই ৭০ এর ওপরে উঠে গেলে শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন বাজার বিশ্লেষকরা।
বাজারের এই ‘সুবাতাস’ কতোটা টেকসই হবে জানতে চাইলে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, “বাজারে ওঠা-নামা থাকবেই। কিন্তু সবাই বাজার ছেড়ে চলে যাবে সেটা মনে হয় ঠিক না।”
শাকিল রিজভী বলেন, “দেশের দৃশ্যমান যে আর্থ-রাজনৈতিক অবস্থা তা বাজারের জন্য ভালোই মনে হচ্ছে। তবে অবস্থা খারাপ হলে এবং শেয়ারের দাম অযৌক্তিক রকম বেড়ে গেলে তা ভয়ের কারণ হবে।”