অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অপসারণের পর বেসিক ব্যাংকের রাজধানীর তিনটি শাখার ঋণ বিতরণ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
Published : 26 May 2014, 05:36 PM
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘অফসাইট সুপারভিশন’ বিভাগ থেকে পাঠানো এক চিঠিতে দিলকুশা, গুলশান ও শান্তিনগর শাখার ঋণ বিতরণ কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ দেয়া হয়।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত এই ব্যাংকের বিষয়ে এই পদক্ষেপ নেয়ার কথা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ম মাহফুজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
এই তিন শাখায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণে অনিয়ম ধরা পড়ার পর রোববার ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মাহফুজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই তিন শাখায় ঋণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম হওয়ায় ঋণ বিতরণ কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই তিন শাখা নতুন কোনো ঋণ বিতরণ করতে পারবে না।”
বিষয়টি বেসিক ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মাহফুজ জানান।
ব্যাংকটির অন্য কোনো শাখায় এই ধরনের অনিয়ম হলে সেক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে চিঠিতে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে বেসিক ব্যাংকের গুলশান শাখায় ১ হাজার ৭০০, শান্তিনগর শাখায় ১ হাজার ৯০০ এবং দিলকুশা শাখায় ১ হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি ধরা পড়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সবচেয়ে বড় ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের হল-মার্ক কেলেঙ্কারির মধ্যে বছর তিনেক আগে বেসিক ব্যাংকের এসব অনিয়ম ধরা পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে।
বড় ঋণ অনিয়মগুলোর মধ্যে রয়েছে ডেল্টা সিস্টেমকে দেয়া ঋণ। ঋণটি ক্ষতিজনকভাবে শ্রেণিকরণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিল৷ নির্দেশটি পালন করেননি অপসারিত এমডি।
ওয়েস্ট কোস্ট শিপ বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিজের জামানতের দলিল ভুয়া ও অতিরঞ্জিত বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। মনিকা ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের সিআইবি প্রতিবেদন না নিয়ে ঋণ দেয়া হয়েছে। সুরমা স্টিল অ্যান্ড স্টিল ট্রেডিং কোম্পানি, মা টেক্সের ঋণের ক্ষেত্রেও গুরুতর সব অনিয়ম উদ্ঘাটিত হয় তদন্তে।
এসব ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গত ১৭ এপ্রিল একজন উপব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয় কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। তারা ওই তিনটি শাখার কর্মকর্তা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক প্রতিবেদনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে জানায়, পর্ষদের ১১টি সভায় ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে ৩ হাজার ৪৯৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, যার বেশির ভাগই গুরুতর অনিয়ম ঘটিয়ে করা হয়েছে।
বেসিক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ঋণ কমিটি নেতিবাচক মত দেয়ার পরও পর্ষদ কোটি কোটি টাকার ভুয়া ঋণ অনুমোদন করেছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ৪০টি দেশি তফসিলি ব্যাংকের কোনোটির ক্ষেত্রেই পর্ষদের এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া দেখা যায় না। অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে না জেনেও ঋণ দেয়া হয়েছে।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকটির ঋণ বিতরণে সীমা আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে ব্যাংকটির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক এটি সমঝোতা স্মারক সই করে। ওই সমঝোতা অনুযায়ী বেসিক ব্যাংকের ঋণ বিতরণের প্রবৃদ্ধি প্রতি ৩ মাসে ১০ শতাংশের বেশি হবে না।
এছাড়া যেসব ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় জামানত নেই, সেক্ষেত্রে জামানত নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একজন পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়।
ওই সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, কু-ঋণ কমানো, খেলাপি ঋণ আদায়সহ বেশকিছু শর্তও দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল্যায়নে এসব শর্তের অধিকাংশই মানা হয়নি।