বাংলাদেশ সফররত কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল-মুরাইখি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে দক্ষ জনশক্তি নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন।
Published : 16 Feb 2020, 11:45 PM
রোববার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় সংসদ কার্যালয়ে গিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন তিনি।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসক, প্রকৌশলী এবং অন্যান্য দক্ষ জনশক্তি নিয়োগ করতে চাওয়ার কথা বলেছেন কাতারের প্রতিমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা দেশে দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিচ্ছি।”
রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন রাখার কথাও জানিয়েছেন কাতারের প্রতিমন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের অর্থনীতির ‘বোঝা’ হিসেবে তুলে ধরে বলেন, “আমরা এই বিশাল সংখ্যক মিয়ানমারের নাগরিককে আমাদের দেশে কতদিন রাখব?”
মিয়ানমার বাংলাদেশ থেকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হলেও সে অনুযায়ী কাজ করেনি বলেও কাতারের প্রতিমন্ত্রীকে বলেন শেখ হাসিনা।
আল-মুরাইখি দুই দেশের মধ্যে শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারের উপর জোর দেন।
কাতারের প্রতিমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা মুসলিম দেশগুলোর সাথে আমাদের সম্পর্ককে গুরুত্ব দিই এবং আমরা একসাথে উন্নয়নের ক্ষেত্রগুলো খুঁজে দেখতে পারি।”
প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থে বাংলাদেশে কাতারের আরও বিনিয়োগ কামনা করেন। এজন্য ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথা বলেন তিনি।
দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গঠনে জন্য সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে দারিদ্র্যের হারকে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলেন তিনি।
দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের বিভিন্ন বাস্তবমুখী পদক্ষেপের কারণে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮-১৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
শেখ হাসিনা কাতারের আমিরকে ‘মুজিব বর্ষে’ বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
কাতারের প্রতিমন্ত্রী গত এক দশকে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে স্বল্পোন্নত থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণেরও প্রশংসাও করেন তিনি।
কাতারের প্রতিমন্ত্রী বলেন, তারা চান বাংলাদেশ এ অঞ্চল এবং মুসলিম বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করুক।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্যদের হস্তক্ষেপ চাই না। আপনি এ ক্ষেত্রে মুসলিম বিশ্বের প্রতীক।”
বৈঠকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস এবং ঢাকায় কাতারের রাষ্ট্রদূত আহমেদ মোহাম্মদ নাসের আল-দেহাইমি উপস্থিত ছিলেন।
নেপালের দূতের সাক্ষাৎ
বাংলাদেশে নেপালের রাষ্ট্রদূত ড. বংশীধর মিশ্র রোববার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার জাতীয় সংসদ কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাত করেন।
তাদের বৈঠকের বিস্তরিত প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ প্রতিবেশীদের সঙ্গে সংযোগ বাড়াচ্ছে এবং ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া পথগুলো পুনরায় চালু করছে।
“এই অঞ্চলের সকল দেশের এবং জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সংযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
বর্তমান সরকারের সময়ে বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন এবং উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর জনগণ এই সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের বিমানবন্দর ব্যবহার করে বিদেশে ভ্রমণে যেতে পারেন।
তিনি বলেন, নেপাল ও ভুটান বাংলাদেশের সৈয়দপুর বিমানবন্দর এবং একইসঙ্গে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে পারে।
বন্দর দিয়ে আমদানি করা মালামাল সংরক্ষণের জন্য ভুটানকে গুদাম তৈরির জন্য একটি জায়গা খুঁজে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
নেপাল বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ‘ব্যাপক সংযোগ ব্যবস্থা’ গড়ে তুলতে চায় জানিয়ে রাষ্ট্রদূত মিশ্র বলেন, “মোটর যান চুক্তি এখন বাস্তবায়নের পর্যায়ে রয়েছে।”
বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
বাংলাদেশের উন্নয়নে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে নেপালের রাষ্ট্রদূত বলেন, “আপনি নেপালে অত্যন্ত সম্মানিত। নেপালের জনগণ আপনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে, আমরা আপনার দেশকে অনুসরণ করি।
“বাংলাদেশ আপনার গতিশীল নেতৃত্বে দ্রুত উন্নতি করছে, যা আমাদের জন্য একটি অনুসরণীয় উদাহরণ।”
নেপালের রাষ্ট্রদূত সেদেশে ভূমিকম্পের সময় বাংলাদেশের সমর্থনের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।
নেপালের রাষ্ট্রদূত আগামী ২ থেকে ৪ এপ্রিল কাঠমুন্ডুতে অনুষ্ঠেয় ‘সাগরমাথা (মাউন্টেইন) সংলাপে’ অংশগ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি আমন্ত্রণপত্র হস্তান্তর করেন।