প্রস্তাবিত বাজেটে রড ও এর কাঁচামালের উপর ভ্যাট ও কর বাড়ানোর কারণে প্রতি টন এমএস রডের দাম ১০ হাজার ৩৫০ টাকা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা।
Published : 25 Jun 2019, 07:37 PM
অবকাঠামো নির্মাণের এই মৌলিক উপাদানের এমন দাম বাড়লে ভোক্তা পর্যায়ে ‘ব্যাপক নেতিবাচক’ প্রভাব পড়বে বলে তাদের আশঙ্কা।
রড ও স্টিলপণ্যে প্রস্তাবিত বাজেটের প্রভাব সম্পর্কে জানাতে সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই খাতের ব্যবসায়ীদের তিন সংগঠন- বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ রি-রোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ স্টিল মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মানোয়ার হোসেন বলেন, গত এক দশকে বর্তমান সরকারের সহযোগিতায় স্টিল শিল্পে অভূতপূর্ব বিকাশ সাধিত হয়। কিন্তু ২০১৯-২০ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে এ শিল্পে ভ্যাট ও কর আরোপের কারণে এ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
“প্রতি টন রডের মূল্য ৭০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাবে, যেখানে বর্তমানে এই মূল্য ৬০ হাজার টাকার কিছু বেশি।”
সংবাদ সম্মেলনে রড ও স্টিল পণ্যে ভ্যাট ও ট্যাক্স বাড়ানোর সহনশীল একটি উপায়ও প্রস্তাব করেন ব্যবসায়ীরা।
মানোয়ার বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে প্রতি টন রড উৎপাদনে যেখানে ভ্যাট ও কর বাবদ প্রদান করতে হচ্ছে ৩ হাজার ৩৫০ টাকা, সেখানে প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী ২০১৯-২০ অর্থ বছরে প্রদান করতে হবে ১৩ হাজার ৭০০ টাকা। ফলে ভ্যাট ও কর বাবদ প্রতি টন এমএস রডের দাম বাড়বে ১০ হাজার ৩৫০ টাকা।
তিনি বলেন, বর্তমানে (২০১৮-১৯) প্রতি টন এমএস রডের ভ্যাট ১৪০০ টাকার পরিবর্তে প্রস্তাবিত বাজেটে তা ৯ হাজার ৫০ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ ৭ হাজার ৬৫০ টাকা বাড়ানো হয়েছে; ভ্যাট বাবদ দাম বাড়ছে প্রতি টনে ৫৪৬ শতাংশ।
প্রতি মেট্রিক টন বিলেট বিক্রিতে ভ্যাট ৪৫০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা, প্রতি মেট্রিক টন রড বিক্রিতে ভ্যাট ৪৫০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা, স্ক্র্যাপ/শিপ স্ক্র্যাপ বিক্রিতে প্রতি মেট্রিক টনে ৩০০ টাকা থেকে ১৭৫০ টাকা এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে প্রতি মেট্রিক টন রড বিক্রিতে ২০০ টাকা থেকে ৩৩০০ টাকা ভ্যাট বসানোর হিসাব দেখান ব্যবসায়ীরা।
প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী, আমদানিকালে স্টিল উৎপাদনকারীদেরকে কাঁচামাল আমদানির প্রাক্কালে ৫ শতাংশ অগ্রিম কর পরিশোধ করতে হবে। স্টিল শিল্পে আর্থিক বিনিয়োগের পরিমাণ অনেক বেশি। এ শিল্পের কাঁচামাল আমদানির উপর ৫ শতাংশ আগাম কর নির্ধারণের কারণে আরও ৫ শতাংশ অধিক চলমান মূলধনের (ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল) প্রয়োজন হবে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্টিল শিল্পগুলো ব্যাংক ঋণে পরিচালিত বিধায় আর্থিক সেক্টরে তারল্য সঙ্কটেরও সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে কাঁচামাল আমদানির উপর ৫ শতাংশ আগাম কর পরিশোধের কারণে ব্যাংক সুদ বাবদ উৎপাদনকারীদের ব্যয়ও বৃদ্ধি পাবে।
ভ্যাট নিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব
(ক) আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম কর আরোপের প্রস্তাব প্রত্যাহার করা।
(খ) প্রতি টন বিলেট বিক্রয়ে নির্দিষ্ট ভ্যাট বর্তমান ৪৫০ টাকার স্থলে ৭৫০ টাকা নির্ধারণ।
(গ) প্রতি টন রড বিক্রয়ে নির্দিষ্ট ভ্যাট বর্তমান ৪৫০ টাকার স্থলে ৭৫০ টাকা নির্ধারণ।
(ঘ) স্ক্র্যাপ/শিপ স্ক্র্যাপ বিক্রয় প্রতি টনে ভ্যাট বর্তমান ৩০০ টাকার স্থলে ৪৫০ টাকা নির্ধারণ।
(ঙ) স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে বিক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রতি টন রডের ভ্যাট বর্তমান ২০০ টাকার স্থলে ৩০০ টাকা নির্ধারণ।
কর নিয়ে প্রস্তাব
(ক) এআইটি/টিডিএস টার্ণওভার ট্যাক্স এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতি টনে ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা।
(খ) কর্তনকৃত আয়কর চূড়ান্ত মূল্যায়নের ভিত্তিতে সমন্বয় করা।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে দেশে বার্ষিক ৫৫ লাখ টন রড উৎপাদন হচ্ছে। এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৩৬০০ শিল্প প্রতিষ্ঠান/সেবা জড়িত।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ শিপ ব্রের্কাস এন্ড রিসাইক্লিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য মাকসুদুর রহমান, বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ শহিদউল্লাহ, ভাইস চেয়ারম্যান জহিরুল হক চৌধুরী, সাবেক চেয়ারম্যান শেখ মাসাদুল আলম মাসুদ, বাংলাদেশ স্টিল মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল শাহজাহান, বাংলাদেশ রি-রোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি মাহবুবুর রশিদ জুয়েল উপস্থিত ছিলেন।