পণ্য রপ্তানির মতো সেবা রপ্তানিতেও সুখবর নিয়ে শেষ হতে চলেছে ২০১৮-১৯ অর্থবছর।
Published : 20 Jun 2019, 06:18 PM
অর্থবছর শেষ হতে আর সপ্তাহ খানেক বাকি। কিন্তু সেবা খাতের রপ্তানির এপ্রিল পর্যন্ত তথ্য প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো- ইপিবি।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সেই তথ্য বলছে, বিদায়ী অর্থবছরের দশ মাসেই সেবা রপ্তানি করে বাংলাদেশ গত বছরের পুরো সময়ের (১২ মাস, জুলাই-জুন) চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি বিদেশী মুদ্রা আয় করেছে।
বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সেবা রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ ৪৮৫ কোটি ৮৫ লাখ ডলার আয় করেছে।
এই অংক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪২ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি।আর নির্ধারিত লক্ষ্যের চেয়ে প্রায় ১৬ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি।
সেবা খাতের রপ্তানি বৃদ্ধিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
১৩ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন তাতে তিনি বলেছেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আওতায় সেবা খাতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে অগ্রাধিকারমূলক বাজার বাজার সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে পদত্ত শুল্কমুক্ত সুবিধার মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।
“বাংলাদেশের সেবা খাতের রপ্তানি সম্প্রতি ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এ সুবিধা প্রাপ্তির কারণে ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।”
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই দশ মাসে সেবা খাতের রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৪৭৬ কোটি ৭৮ লাখ ডলারই এসেছে সরাসরি সেবা খাত থেকে। অর্থাৎ মোট রপ্তানির ৯৮ শতাংশই এসেছে সরাসরি সেবা খাত থেকে।
বাকিটা দেশের বন্দরগুলোতে পণ্যবাহী জাহাজগুলোর কেনা পণ্য ও সেবা এবং মার্চেন্টিংয়ের অধীনে পণ্য বিক্রির আয়।
কোনো অনাবাসীর কাছ থেকে পণ্য কিনে একই পণ্য কোনো অনাবাসীর কাছে বিক্রি করাকে মার্চেন্টিং বলে। এই প্রক্রিয়ায় মোট বিক্রি থেকে মোট ক্রয় বাদ দিয়ে নিট মার্চেন্টিং রপ্তানি আয় হিসাব করা হয়।
দেশের স্থল, সমুদ্র বা বিমান বন্দরে বিদেশি পরিবহনগুলো সেসব পণ্য ও সেবা- যেমন জ্বালানি তেল ও মেরামত সেবা- কিনে থাকে সেগুলোকে সেবা খাতের আওতায় ধরা হয়েছে।
জুলাই-এপ্রিল সময়ে সেবা খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছে সরকারি পণ্য ও সেবা রপ্তানি থেকে। এ উপখাত থেকে এসেছে ১৯০ কোটি ৬২ লাখ ডলার।
অন্য উপখাতগুলোর মধ্যে ‘অন্যান্য ব্যবসায় সেবা থেকে এসেছে ৮৩ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি থেকে আয় হয়েছে ৪৬ কোটি ১৪ লাখ ডলার।
বিভিন্ন ধরণের পরিবহন সেবা (সমুদ্র, বিমান, রেল এবং সড়ক) থেকে ৫৬ কোটি ৫৯ লাখ ডলার আয় হয়েছে।
আর্থিক সেবা খাত থেকে ১১ কোটি ২০ লাখ ডলার এবং ভ্রমণ সেবা উপখাত থেকে ৩১ কোটি ৩৩ লাখ ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে।
নির্মাণ সেবা থেকে এসেছে ৩৮ কোটি ৬৭ লাখ ডলার।
ইপিবি চলতি অর্থবছরে সেবা খাতের রপ্তানির দশ মাসের তথ্য প্রকাশ করলেও পণ্য রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করেছে ১১ মাসের (জুলাই-মে)।
জুলাই-মে সময়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ তিন হাজার ৭৭৫ কোটি (৩৭.৭৫ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে।
এই অংক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি। আর গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে আয় বেশি এসেছে ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ।
১০ মাসের সেবা রপ্তানি এবং ১১ মাসের পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ মোট আয় করেছে চার হাজার ২৬০ কোটি ৯০ লাখ (৪২.৬০ বিলিয়ন) ডলার; প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ১৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সেবা খাত থেকে মোট আয় হয় ৪৩৪ কোটি (৪.৩৪ বিলিয়ন) ডলার । পণ্য রপ্তানি করে আসে ৩ হাজার ৬৬৬ কোটি ৮২ লাখ ডলার।
সে হিসেবে গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের পণ্য ও সেবা খাত মিলে মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ৪ হাজার ১০০ কোটি ৭৮ লাখ ডলার।
তার আগের বছরে (২০১৬-১৭) সেবা খাত থেকে আয় হয়েছিল মোট ৩৪২ কোটি ডলার।ওই বছরে পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ৩ হাজার ৪৬৫ কোটি ৫৯ লাখ ডলার।
সে হিসেবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের পণ্য ও সেবা খাত মিলে মোট রপ্তানি আয় হয়েছিল ৩ হাজার ৮০৭ কোটি ৫৭ লাখ ডলার।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৯০০ কোটি (৩৯ বিলিয়ন) ডলার।আর সেবা রপ্তানির লক্ষ্য ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলার।
দুইটা মিলিয়ে মোট লক্ষ্য ধরা আছে ৪ হাজার ৪০০ কোটি (৪৪ বিলিয়ন) ডলার।