ঢাকা থেকে কুকুর সরিয়ে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নগর কর্তৃপক্ষ, তার প্রতিবাদ জানিয়েছেন চিত্রশিল্পী, অভিনেত্রীসহ পশুপ্রেমীরা।
রাসেল সরকার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published :30 Aug 2020, 03:46 AM
Updated : 31 Aug 2020, 02:04 PM
Click to get connected
ধানমণ্ডির ১০এ সড়কে পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের আয়োজনে মানুষ ও কুকুরের সহাবস্থান নিয়ে আঁকা দেয়ালচিত্র দেখছেন অভিনেত্রী জয়া আহসান। ধানমণ্ডির ১০এ সড়কে পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের আয়োজনে মানুষ ও কুকুরের সহাবস্থান নিয়ে আঁকা দেয়ালচিত্র দেখছেন অভিনেত্রী জয়া আহসান।
ঢাকা শহর থেকে ৩০ হাজার কুকুর বাইরে স্থানান্তরের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, যার প্রতিবাদে ধানমণ্ডি ১০ এ সড়কের পাশে দেয়ালে রঙ-তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মানুষ ও কুকুরের সহাবস্থানের চিত্র। পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে শুক্র ও শনিবার চলে এই চিত্রাঙ্কন। ঢাকা শহর থেকে ৩০ হাজার কুকুর বাইরে স্থানান্তরের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, যার প্রতিবাদে ধানমণ্ডি ১০ এ সড়কের পাশে দেয়ালে রঙ-তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মানুষ ও কুকুরের সহাবস্থানের চিত্র। পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে শুক্র ও শনিবার চলে এই চিত্রাঙ্কন।
এই প্রতিবাদে শামিল হয়ে অভিনেত্রী জয়া আহসান বলেছেন, প্রতিটি প্রাণী সভ্যতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। শহর থেকে কুকুর সরিয়ে দেওয়া হবে ‘ধ্বংসাত্মক’।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নগরী থেকে ‘৩০ হাজার কুকুর’ অন্য লোকালয়ে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে একটি খবর প্রকাশ হয়েছে।
ঢাকা শহর থেকে ৩০ হাজার কুকুর বাইরে স্থানান্তরের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, যার প্রতিবাদে ধানমণ্ডি ১০ এ সড়কের পাশে দেয়ালে রঙ-তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মানুষ ও কুকুরের সহাবস্থানের চিত্র। পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে শুক্র ও শনিবার চলে এই চিত্রাঙ্কন।
এর প্রতিবাদে শনিবার রাজধানীর ধানমণ্ডি ১০ এ সাত মসজিদ রোডের পাশে দেয়ালচিত্রে কুকুরসহ অন্যান্য প্রাণীর বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে। পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার (পিএডব্লিউ) ফাউন্ডেশন স্বেচ্ছাসেবী চিত্রশিল্পীদের নিয়ে এই দেয়ালচিত্র অঙ্কন করেছে।
‘পথকুকুর-দেয়ালচিত্রে বেঁচে থাকার সংগ্রাম’ শিরোনামে শুক্রবার সকাল থেকে ছবি আঁকা শুরু করেন চিত্রশিল্পীরা। শনিবার সন্ধ্যায় প্রাণিপ্রেমী চিত্রশিল্পী ও পরিবেশকর্মীদের প্রতিবাদী মিলনমেলার মধ্য দিয়ে শেষ হয় দুই দিনের এ কর্মসূচি।
অভিনেত্রী জয়া আহসান ছাড়াও চিত্রশিল্পী কনক চাঁপা চাকমা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার অধ্যাপক আবুল বারক আলভীসহ প্রাণিপ্রেমী অনেক মানুষ কর্মসূচিতে সংহতি জানান।
এ সময় জয়া আহসান বলেন, “পৃথিবীতে মানুষের যেমন প্রয়োজন আছে তেমনি প্রত্যেকটা প্রাণীরও প্রয়োজন আছে। কুকুর সভ্যতার শুরু থেকে মানুষের প্রাচীনতম বন্ধু। তাদের ছাড়া আমাদের সভ্যতার অস্তিত্ব নেই। সেই তাদেরকে আমরা আজকে শহর থেকে অপসারণ করতে চাচ্ছি। প্রশাসন বলুন বা নগর কর্তৃপক্ষ তাদের কাজ কিন্তু সৃষ্টিশীলতায় মনোনিবেশ করা, সেখানে তারা যদি ধ্বংসাত্মক কাজ করে সেটা আমাদের কারোরই কাম্য নয়। এছাড়া এ বিষয়ে আইন পাশ করাও রয়েছে, সরকার বা জনগণ কেউ এই আইনের বাইরে না।”
খ্যাতিমান এই অভিনেত্রী বলেন, “আমাদের জীবনযাপনে প্রত্যেকট প্রাণীর প্রয়োজন আছে। কুকুর, শিয়াল, সাপ, ব্যাঙ, ঈঁদুর সবাইকে নিয়েই আমাদের থাকতে হবে। ব্যাঙ নিধন করতে করতে বাংলাদেশ থেকে ব্যাঙ উধাও হয়ে গেছে। সে কারণে আমাদের ধান বা জমিতে কীটনাশক দিতে হচ্ছে বেশি। সেগুলো আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে। এতে আমরা রোগাক্রান্ত হচ্ছি।”
চিত্রশিল্পী কনক চাপা চাকমা বলেন, “পৃথিবীতে শুধু মানুষেরই বসবাসের অধিকার নয়, প্রত্যেকটি প্রাণির বসবাসের অধিকার রয়েছে। তাদের নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। কাজেই এসব প্রাণীকে যেন আমরা মেরে না ফেলি, অত্যাচার করে একদম শেষ করে না ফেলি। এ ব্যাপারে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। যাতে তাদের নিয়ে আমরা একটি সুন্দর পৃথিবীতে বসবাস করতে পারি।”
পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রাকিবুল হক এমিল বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম, আমরা যখন করোনা মহামারী থেকে ফিরে আসব আমরা পরিবেশ-প্রকৃতির প্রতি সদয় ও সচেতন হব। কিন্তু আমরা দেখি মানুষ সেই আগের রূপেই ফিরে যাচ্ছে। বন্যার সময় অনেক বন্য প্রাণি আমাদের স্থলভাগে আশ্রয় নিয়েছিল, আমরা প্রচুর প্রাণী হত্যা করেছি। আমরা অনেক শিয়াল মেরেছি। এখন আমরা আবার আমাদের বহু বছরের পুরোনো বন্ধু, নাগরিক প্রাণী কুকুরকে শহর থেকে সরানোর চেষ্টা করছি। অন্য কোনো সমাধানে না গিয়ে আমারা তাদের সরিয়ে ফেলার চিন্তা করছি।”
তিনি বলেন, “মানুষের সবচেয়ে পরীক্ষিত কাছের বন্ধু কুকুরের প্রতি সিটি করপোরেশনের এ ধরনের অমানবিক সিদ্ধান্ত এটাই নতুন নয়। নগর কর্তৃপক্ষসহ অনেকেরই ধারণা, এই শহরটা শুধুই মানুষের। নগরের পশুপ্রাণী-পাখিরাও যে মানুষের মতোই এই নগরে থাকার অধিকার রাখে, সেটা তারা ভুলে যান। হুট করে শহর থেকে কুকুর উধাও হয়ে গেলে নগর যে ইঁদুর-ছুঁচোদের দখলে চলে যাবে এটা তারা ভাবতে চান না।”
শহরে কুকুর থাকার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে রাকিবুল হক বলেন, “কুকুর মানুষের পরম বন্ধু। মানুষের নিরাপত্তায় অতন্দ্র প্রহরী। ময়লা-আবর্জনা খেয়ে শহরের পরিচ্ছন্নতায় তাদের অবদানের শেষ নেই। কিন্তু উপকারের বিপরীতে বরাবরই কুকুর, বিড়াল ও কাকের মতো প্রাণীগুলোকে সহ্য করতে হয় নানা নিপীড়ন। নিজেদের সর্বশ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে দাবি করা মানুষের কুকুরের মতো এত চমৎকার একটা প্রাণীকে একটু ভালোবাসা দেখাতে এত কার্পণ্য কেন? নগরের কুকুর নগরেই থাকুক আমাদের ভালোবাসায় আর যত্নে-সিটি কর্পোরেশনের দ্রুত বোধোদয় হোক।”