সাংসদ লিটন হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর আরও তিন নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
Published : 16 Jan 2017, 10:55 PM
এদিকে এ হত্যা মামলার বাদী ও স্বজনরা দ্রুত তদন্ত শেষ করে দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন।
সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আতিয়ার রহমান বলেন, লিটন হত্যা মামলায় জড়িত সন্দেহে সোমবার অভিযান চালিয়ে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। লিটন হত্যাকাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের আদালতে পাঠানো হবে।
তাদের বিরুদ্ধে সুন্দরগঞ্জ থানায় বিস্ফোরকদ্রব্য আইন মামলা আছে বলে জানান ওসি আতিয়ার।
আটকরা হলেন উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড (চর চরিতাপাড়া) জামায়াতের সভাপতি আলাউদ্দিন, একই ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি রফাত উদ্দিন ও রামভদ্র গ্রামের জামায়াতকর্মী আল আমিন সরকার।
এর আগেও জামায়াতে ইসলামীর কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
লিটন হত্যা মামলার বাদী ও তার ছোট বেন ফাহমিদা বুলবুল কাকলী বলেন, “ঘটনার ১৭দিন পার হলো। খুনিদের গ্রেপ্তার করতে আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে জানি না। আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব খুনিদের গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হোক।”
হত্যাকারীদের শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করতে না পারায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানান লিটনের বড় বোন আফরোজা বারী জোৎস্না।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শহরের ব্যবসায়ী স্বপন মিয়া জানান, এমপি লিটন হত্যার পর পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে অনেককে আটক করছে। এ কারণে গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে অনেকে গ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন। আবার সন্ধ্যা হলেই লোকজন হাট-বাজারে আর থাকছে না। তাই বাজারের বেচাকেনাও কমে গেছে।
উপজেলার ডোমেরহাট বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল আলিম মিয়া জানান, পুলিশ কখন কাকে ধরবে তার ঠিক নাই। তাই লোকজন তেমন একটা বাজারে আসছে না।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “এমপি লিটন হত্যাকারীদের ১৭ দিনেও সনাক্ত করতে না পারাটা খুবই দুঃখজনক। জানি না কত দিন বা মাস লাগবে এই খুনিদের আটক করতে।”
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা জানান, খুনিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার দ্রুত করা হোক। তা না হলে তারা তো দেশ ছেড়ে চলে যাবে।
সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আতিয়ার রহমান বলেন, হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে তদন্ত কাজ অব্যাহত আছে। অনেককেই নজরদারিতে রাখা হয়েছে। আটক ও গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে কিছু বলা যাচ্ছে না।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের পরিদর্শক আবু হায়দার মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, খুনের রহস্য উদঘাটনে পুলিশের হাতে অনেক তথ্য উপাত্ত এসেছে। শিগগিরই হত্যাকারীদের শনাক্ত করা হবে।
গত ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের শাহবাজ এলাকায় নিজ বাড়িতে অজ্ঞাত হামলাকারীদের গুলিতে আহত হন মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় লিটনের বোন তাহমিদা বুলবুল বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৪/৫ জনকে আসামি করে পরদিন সুন্দরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
এ মামলায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদের মধ্যে সুন্দরগঞ্জের রামভদ্র কদমতলা গ্রামের মো. ফরিদ মিয়া (৭০), নিজপাড়া গ্রামের সামিউল ইসলাম (৩২), খামারপাচগাছী গ্রামের হাদিসুর রহমান (৩০), উত্তর হাতিবান্দা গ্রামের জিয়াউর রহমান (৩২), রামভদ্র খানাবাড়ী গ্রামের হজরত আলী (৪৪), পূর্ব শিবরাম গ্রামের নবিনুর খন্দকার (৩৯) জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যন আহসান হাবীব মাসুদ (৪৪), উপজেলা জামায়াতের আমির (পূর্ব) মওলানা সাইফুল ইসলাম মন্ডল (৫০) এবং সবশেষে ঢাকা থেকে আশরাফুল ইসলাম (২৮) ও তার সহযোগী জহিরুল ইসলামকে (২৯) গ্রেপ্তার করা হয়।
এছাড়া আটক আরও ৬৫ জনের বিরুদ্ধে নাশকতা, পুলিশ হত্যা, বিস্ফোরক দ্রব্যসহ বিভিন্ন মামলা থাকায় তাদেরকে সংশ্লিষ্ট মামলায় ও ৫৪ ধারায় জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।