জাহাজের ছাদে ড্রাগন দুর্গের পথে

অগাস্টের মাঝামাঝিতে হঠাৎ একদিন দেবারতি দি জানালেন তার ভীষণ ঘনিষ্ঠ বন্ধু আসছেন প্রাগ থেকে পরিবারসহ।

অমৃতা পারভেজ, জার্মানির বন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Dec 2016, 12:06 PM
Updated : 23 Dec 2016, 12:06 PM

আর ইচ্ছে হলে আমি তাদের সঙ্গে ঘুরতে পারি, যেহেতু আমার কয়েকদিন মাঝে কাজ নেই। ১৪ আগস্ট শুক্রবার অফিস করছি। দুপুর বেলা অফিসে এসে উপস্থিত তনুশ্রী দি, তার স্বামী সুমনদা এবং তাদের মেয়ে হিয়া, যার বয়স মাত্র আড়াই বছর।

ছোটদের সঙ্গে আমার দ্রুত বন্ধুত্ব হয়, তার সঙ্গেও বন্ধুত্ব হতে সময় লাগলো না। অফিস শেষে তাদের নিয়ে দেবারতিদি’র বন-এর বাসায় যাওয়া হলো। সেখানে চা খেয়ে আমি বাসায় চলে গেলাম। কথা হলো, পরদিন আমরা কোলন থেকে জাহাজ ট্যুর দেবো বন পর্যন্ত।

তাই সকাল ৮টার মধ্যে আমাকে কোলন পৌঁছাতে হবে। আমি সকাল সাড়ে ৭টায় বন সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে ট্রেন নিয়ে কোলনে দেবারতি দি’র বরের বাড়ি পৌঁছে গেলাম। সেখানে সবাই তৈরি হয়েই ছিল। আমরা রওনা দিলাম নদীর পাড়ে।

আমাদের উদ্দেশ্য জাহাজ ট্যুর। টিকেটের দাম জনপ্রতি ৩৫ ইউরো। সাড়ে তিন ঘণ্টার যাত্রা। আবহাওয়া ভীষণ ভালো ছিলো, অর্থাৎ রৌদ্রজ্জ্বল দিন। আমরা সবাই টিকেট হাতে লাইন দিয়ে জাহাজের ছাদে উঠে জায়গা দখল করলাম। নদীর বাতাস স্নিগ্ধ এক পরশ ছড়িয়ে দিচ্ছিল শরীর ও মনে।

আশপাশের সবুজ মনকে শান্তি দিচ্ছিল। পুরো জাহাজটা ঘুরে ঘুরে দেখলাম। সেইসঙ্গে চলতে লাগলো আড্ডা। নানা বিষয় নিয়ে।

তনুদি শোনালেন তার বাংলাদেশি জামান কাকুর কথা। তনুদি কলকাতার মেয়ে। তিনি একবার দিল্লি গিয়েছিলেন ট্রেনে করে বাবা-মা এর সঙ্গে। সেই ট্রেনে পরিচয় বাংলাদেশের জামান নামে এক ভদ্রলোকের সঙ্গে। ট্রেনে দীর্ঘপথ যেতে যেতে এতটাই ঘনিষ্ঠ হয়ে যান যে 'কাকু'তে পৌঁছে যায় সম্পর্ক। আর ঢাকায় গিয়ে সেই জামান কাকুর বাড়িতেও গিয়েছিলেন তনুদি।

তিনি শোনালেন জামান কাকু ও তার পরিবারের আন্তরিকতার কথা। যাদের বাড়িতে গিয়ে অন্যের বাড়িতে গিয়েছেন বলে মনে হয়নি তাদের। জানালেন তার ভাইয়ের বিয়েতেও জামান কাকুরা গিয়েছিলেন কলকাতায়। এখনও তাদের সেই সম্পর্ক অটুট আছে। শুনে ভীষণ ভালো লাগলো।

গল্পের সঙ্গে সঙ্গে চলছিল খাওয়া দাওয়া। জার্মান খাবার অর্থাৎ সালাদ, সবজি আলু এবং মাংস, যে যেটা পছন্দ করে। খাওয়া শেষ হতেই আমরা ঠিক দুইটার দিকে পৌঁছে গেলাম কোয়েনিগসভিন্টারের ঘাটে। ঘাট থেকে নেমেই দেখি সঞ্জীবদা দাঁড়িয়ে আছেন।

আমরা সদলবলে তার বাসায় গেলাম, কেননা একদম কাছেই তার বাসা। সঞ্জীবদা তখনও অবিবাহিত। কিন্তু একজন ব্যচেলর পুরুষের বাসা এত গোছানো হতে পারে না দেখলে বিশ্বাসই হবে না! আমরা চা-কফি খেয়ে শুরু করলাম হাঁটা।

এবার উদ্দেশ্য ড্রাখেনফেলস, যার বাংলা করলে দাঁড়ায় ড্রাগনের পাথর। এখানে আছে একটি দুর্গ। যেটার নাম ব্যুর্গ ড্রাখেনফেলস। এটার উচ্চতা এক হাজার ৫৩ ফুট। এই জায়গাটি নর্থরাইনওয়েন্টফেলিয়ার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।

কেউ বন ঘুরতে এসেছে অথচ ঐ জায়গায় যায়নি এমন খুব কমই হয়ে থাকে। তাই তনুদিরাই বা সেখানে যাবে না কেন! তবে ড্রাখেনফেলসে যেতে হলে দুটো পথ রয়েছে। একটা ট্রেনে অন্যটি পায়ে হেঁটে পাহাড়ি পথ দিয়ে।

যেহেতু আমাদের হাতে বেশি সময় নেই, সঙ্গে ছোট বাচ্চা- তাই ট্রেনে চড়ার সিদ্ধান্ত হলো। প্রতি ১৫ মিনিটে ট্রেন ছাড়ে। টিকেটের দাম জনপ্রতি ১০ ইউরো।

এই ট্রেনে উঠে ভীষণ মজা। কেননা অনেকটা রোলারকোস্টারে চড়ার মত অনুভূতি হয়। পাহাড়ি পথ বেয়ে উপরের দিকে উঠতে থাকে ট্রেন। পথে ড্রাখেন দুর্গের দেখা মেলে। অনেকটা ডিজনির প্রাসাদ বা দুর্গের মত।

এরপরে ড্রাখেনফেলস নিয়ে ছোট্ট হিয়াকে মজার এক গল্প শোনালেন সঞ্জীবদা। গল্পটা শোনাবো পরের পর্বে।

(চলবে)

লেখক: এডিটর অ্যান্ড মডারেটর, ডয়েচে ভেলে, বাংলা বিভাগ

ইমেইল: amrita.modak81@gmail.com

ছবি কৃতজ্ঞতা: অমৃতা পারভেজ

অমৃতা পারভেজের আরও পড়ুন:

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ, আড্ডা, আনন্দ বেদনার গল্প, ছোট ছোট অনুভূতি,  দেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!