আমার অনেক কাজ। প্রথম কাজ স্টাড হাউজে (পৌর কর্তৃপক্ষ) গিয়ে নিজের নাম-ঠিকানা নিবন্ধন করা। এটা জার্মানিতে ট্যুরিস্ট ছাড়া দীর্ঘ সময়ের জন্য যারা আসেন, তাদের জন্য বাধ্যতামূলক।
চলে যাওয়ার সময় সেটাও ওখানে গিয়ে জানাতে হয়। মজার ব্যাপার হলো, নিবন্ধের পর আমার হাতে একটা টিকেটের গাট্টি ধরিয়ে দিল। সেখানে অন্তত ৩০টা টিকেট আছে।
জেসিকাকে জিজ্ঞেস করলে সে জানালো, জার্মানিতে যারা আসেন তারা যাতে এখানকার সংস্কৃতি ও ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা পান, তাই বিভিন্ন জাদুঘর,লাইব্রেরি,পার্ক,জাহাজের টিকেট,কনসার্টসহ নানা ধরনের টিকেটগুলো দেয়া হয়।
এরপর যেতে হলো ফরেনার্স অফিসে। প্রাথমিকভাবে জার্মানির ভিসা দেয়া হয় তিন মাসের। তারপর এখানে গিয়ে অফিসের চুক্তিপত্র দেখালে সেই অনুযায়ী তারা একটি কার্ড দেয়, সাথে জব পারমিট।
জার্মানিতে ব্যাংকিং সিস্টেম আমাদের মত না। অর্থাৎ টাকা রাখলে বছর শেষে একটা মোটা অংকের টাকা পাওয়া যাবে এমন কোন সিস্টেম নেই। ব্যাংকে যাওয়ার পর যেই নারীর সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল,তিনি আমার দিকে তাকিয়ে অনর্গল জার্মান বলে গেলেন।
আমি জেসিকাকে বললাম, কি বলছেন উনি?
জেসিকা বুঝিয়ে দিলে আমি আবার তার কাছে একটা বিষয়ে জানতে চাইলাম। উনি আবারো জার্মান বলে গেলেন,যার বিন্দু বিসর্গ আমি বুঝলাম না। কিন্তু তার মুখ দেখে মনে হল,এই ভাষাটা প্রত্যেকের জানা উচিত এবং আমিও সেটা জানি।
আর এই মানুষগুলোর খাবার কথা মাথায় রেখে ডয়চে ভেলে'র বিশাল ক্যান্টিনে বিভিন্ন ধরনের খাবার পাওয়া যায়। আছে ডেজার্ট, ফলমূলসহ নানা কিছু। তবে ক্যান্টিনে খেতে হলে নগদ ইউরো দিয়ে খেতে পারবেন না। আপনার যে অফিসের পরিচয়পত্রটি আছে, সেটাই আপনার অফিসের ক্রেডিট কার্ড। অর্থাৎ মেশিনের সাহায্যে ঐ কার্ডে ইউরো ভরুন আর খরচ করুন।
আর খেয়ে-দেয়ে আপনার যদি হাঁটতে ইচ্ছে হয়, তাহলে কোন অসুবিধা নেই। চলে যান অফিসের পেছনে, হেঁটে আসুন রাইন নদীর ধারে। চাইলে টং দোকান থেকে কফিও খেতে পারেন। ডয়চে ভেলে'র আশ-পাশটা আসলেই চমৎকার! দেশে এমন জায়গায় এমন একটা অফিসের কথা ভাবাই যায় না।
৮টার দিকে ওরা চলে যাওয়ার পরও বাইরে অনেক রোদ। একলা ঘরে বসে মনে পড়ে গেলো হুমায়ূন আহমেদের আমেরিকা যাওয়ার প্রথম দিনটার কথা। তিনি নাকি তল্পিতল্পা গুটিয়ে দেশে চলে যাওয়ার কথা ভাবছিলেন।
আমারও ঠিক তেমনটা মনে হচ্ছিল। বুকের ভেতরটা মোচড় দিচ্ছিল। মায়ের দেয়া নাড়ু খেতে খেতে ভাবছিলাম, এমন হতচ্ছাড়া দেশে কেন মানুষ আসে?
(চলবে)
লেখক: অমৃতা পারভেজ,এডিটর অ্যান্ড মডারেটর,ডয়েচে ভেলে,বাংলা বিভাগ, amrita.modak81@gmail.com