সেপ্টেম্বর ২০১৩। স্টাইনভেগ থেকে ওবারকাসেলে বাসা পরিবর্তন। রোববার দিন আমাদের অফিস ছুটি থাকে। তাই সঞ্জীবদা এই স্থানান্তরের পুরো ঝক্কি কাঁধে নিলেন।
Published : 10 Dec 2016, 02:42 PM
তার গাড়িতে করে ব্যাগ বোচকা সমেত আমাকে ওবারকাসেলে নতুন বাড়িতে নিয়ে এলেন। বাড়িওয়ালা সেখানে ছিলেন। চাবি বুঝে নিলাম। অ্যাপার্টমেন্টের কোথায় কী আছে, কোথায় ওয়াশিং মেশিন সব বুঝিয়ে দিয়ে এক মাসের অগ্রিম ভাড়া নিয়ে তিনি চলে গেলেন।
ওয়াশিং মেশিন চালানোর জন্য ইউরোর বিনিময়ে মার্ক কিনতে হলো। কেননা আমার বুড়ো বাড়িওয়ালার সব কিছুই তার মত প্রাচীন। তিনি নিজে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না। আছে কেবল ল্যান্ড লাইন ফোন। ওয়াশিং মেশিনে দুই টাকার মার্ক দিলে তবেই তা চালু হয়।
যাই হোক, দাদা আমাকে আশপাশটা চেনানোর জন্য নিয়ে গেলেন। একটা ছোট্ট রেস্তোরাঁয় দুপুরে খাবার খেলাম আমরা। তারপর আমায় বাসায় পৌঁছে দিয়ে দাদা চলে গেলেন।
তো সেই সঞ্জীবদার ভাষায় আমার এমন একটা ঘর দরকার যেখানে প্রচুর বই থাকবে, চকলেট ও ফল থাকবে আর থাকবে গান শোনার ব্যবস্থা। ব্যাস আমার জীবনে আর কিছুই নাকি দরকার নেই।
কথাটা কিছুটা হলেও সত্যি। জার্মানিতে অনেকগুলো দিন আমি ফল আর চকলেট খেয়ে কাটিয়েছি। আমার বান্ধবী সুহা বলেছিল এত চকলেট খেয়ে তোর চকলেটের প্রতি অভক্তি জন্মাবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখনো তা হয়নি।
কিন্তু কেউ কিছু বলছে না। এরপরেও কিন্ডারগার্টেনের শিশুদের দেখেছি ট্রামে। দু'তিনজন শিক্ষক বা শিক্ষিকা শিশুদের নিয়ে কোন জাদুঘর বা চিড়িয়াখানা বা অন্য কোথাও ঘুরতে নিয়ে বেড়িয়েছেন। শিশুদের দু'জন দু'জন করে জোড়া বেঁধে দিয়েছেন যাতে হারিয়ে না যায়। দেখে ভীষণ ভালো লাগলো।
স্কুল পেরিয়ে নদীর ধারে গিয়ে দেখলাম বিভিন্ন বয়সের মানুষ সেখানে হাজির। কেউ বেঞ্চে বসে বই পড়ছেন। কেউ কুকুরের সাথে খেলছেন। কেউ পাশেই রেস্তোঁরায় বিয়ার খাচ্ছেন আর কেউবা ফুটবল খেলছেন।
কিন্তু এত ভালোর মধ্যেও অভাববোধ উঁকি দেয়। আর সেটা হলো টঙ দোকানের চা। হ্যাঁ, হাঁটতে হাঁটতে নদীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মনে একটা যদি চায়ের দোকান থাকত? যেখানে বেঞ্চে বসে বিস্কুট ডুবিয়ে খাওয়া যেত। আহা! আফসোস সে সুযোগ এখানে নেই।
পরের দিনগুলো একটু ব্যস্ততায় কাটল। তবে এ সপ্তাহে পেয়ে গেলাম জব টিকেট, অর্থাৎ আমার যাতায়াতের টিকেট। ট্রাম, বাস এবং ট্রেন। এই টিকেটের সাহায্যে আমি বাস, ট্রাম বা ট্রেনে বন থেকে কোলন বা লেভারকুজেন পর্যন্ত যেতে পারি, যা অনেকটা পথ।
আরও মজা হলো সন্ধ্যা ৭ টার পর আমার সঙ্গে একজন মানুষ অথবা একটা কুকুর বা একটা সাইকেল নেয়া যেতে পারে ভোর পর্যন্ত। আর সাপ্তাহিক ছুটি অর্থাৎ শনি ও রোববার বা যেকোন ছুটির দিন পুরোদিনই একজন আপনার সঙ্গে ফ্রি ঘোরাফেরা করতে পারেন।
বিদেশে এলেই মদ খেতে হবে, পাব-এ যেতে হবে, উশৃঙ্খল হতে হবে-এগুলোকে আমি স্বাধীনতা বলতে রাজি নই। আমি দিনে রাতে যখন খুশি বাইরে যেতে পারবো। কেউ টিজ করবে না, কেউ খারাপ চোখে তাকাবে না। একজন মেয়ের জন্য এটা একটা প্রশান্তির ব্যাপার।
ছুটির দিন রাতের বেলায় স্টেশনে হয়ত কোন মাতালকে দেখলেন। ভয় পাওয়ার কিচ্ছু নেই। কারণ আপনাকে ভয় দেখাতে পারে কিন্তু কিছুই করবে না সে।
পরের সপ্তাহে শনিবার বেড়িয়ে পড়লাম উল্টো দিকে। অর্থাৎ এবার গন্তব্য পাহাড়।
(চলবে)
লেখক: এডিটর অ্যান্ড মডারেটর,ডয়েচে ভেলে,বাংলা বিভাগ
ইমেইল: [email protected]