মাছরাঙা চ্যানেলের শুরু থেকেই আমি চ্যানেলটির সঙ্গে যুক্ত আছি। সাগর ভাই ২০১১ সালের মাঝামাঝি একটি সময়ে চ্যানেলে যুক্ত হন। ভীষণ সহজ সরল ভালো মনের মানুষটি নিজের কাজ, ব্যক্তিত্ব দিয়ে সবার মন জয় করেছিলেন। আর ডয়চে ভেলের সম্পর্কেও আমি প্রথম শুনেছিলাম এই মানুষটির কাছে।
কিন্তু নিজের ঘোরাঘুরির কথা বললেও ডয়চে ভেলের অফিস নিয়ে কখনও কথা বলতেন না। অফিসের নিচে চায়ের দোকানে তার সঙ্গে কত সময় কেটে যেত এসব গল্প শুনতে!
ডয়চে ভেলেতে প্রথম দিন ব্যস্ততায় কাটায় কারো সঙ্গে তেমন কথা হয়নি। দ্বিতীয় দিন অফিসে আমার রুমে ঢুকে চোখ গেলো টেবিলের দিকে। জানালার পাশে ছোট্ট একটা টেবিলে সাগর ভাই আর রুনি আপার একটি ছবি রাখা। সামনে একটা মোমবাতি আর শোক বই।
আমার টেবিল দেখিয়ে দেওয়া হল, যেখানে আমি বসবো। আমাদের রুমে পাঁচজন বসে। আমার উল্টো দিকে বসেন নুরুননাহার আপা, যার ডাক নাম রুনু।
রুনু আপা জানালেন এর আগে তিনি অন্য একটি ঘরে বসতেন। আর তার ঠিক উল্টো দিকে বসতেন সাগর ভাই। আমি কেমন জানি শিউরে উঠলাম।
হঠাৎ মনে হল, ঠিকই তো আমি যেখানে বসেছি এই চেয়ারেই হয়ত তিনি বসতেন। এই কিবোর্ডে তার হাতের ছোঁয়া এখনো আছে। মনে হল তিনি যদি না যেতেন এখান থেকে তাহলে তো পৃথিবী ছেড়ে যেতে হত না তাকে।
রুনু আপা অনেক গল্প করলেন সাগর ভাইয়ের। তিনি রান্না করতে ভালোবাসতেন। প্রায়ই নানা খাবার রান্না করে আনতেন অফিসে। তার লেখালেখি নিয়ে গল্প হত। কাজের ফাঁকে ফাঁকে গল্প হচ্ছিলো।
হঠাৎ পুরো টিম ঠিক করলো আমাকে নিয়ে কফি খেতে যাবে। অফিসের ভেতরে তিনটি জায়গায় কফি মেশিন আছে। যখন কফি খেতে যাচ্ছি, তখনও একই প্রসঙ্গ, সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে কি কিছু জানা গেল?
কী করছে তদন্ত কর্মকর্তারা? সাংবাদিকরা কী কেউ কিছু জানেন? সঠিক জবাব আমারও জানা নেই। নিজের অজ্ঞতা জানালাম।
পুরোটা দিন মন খারাপ হয়ে থাকলো। মনে অনেক প্রশ্ন, কিন্তু উত্তর নেই! রৌদ্রোজ্জ্বল বনও আমার মন ভালো করতে ব্যর্থ হলো। সাগর ভাই জানি না আপনার হত্যা রহস্য কখনো উদঘাটন হবে কি না! কিন্তু যেখানেই থাকুন ভালো থাকবেন। আপনাকে ভোলা সম্ভব না।
লেখক: এডিটর অ্যান্ড মডারেটর, ডয়েচে ভেলে, বাংলা বিভাগ
ইমেইল: amrita.modak81@gmail.com