বড় দলগুলোর বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় এখন আর চমক নয়। মাশরাফি বিন মুর্তজার দল জিতছে নিয়মিতই। তবে দুটি দলের বিপক্ষে এখনও সেটি জোর দিয়ে বলার জো নেই; দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় যে মাত্র একটি করে।
কার্ডিফে ২০০৫ সালে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফিতে মোহাম্মদ আশরাফুলের বীরত্বে অস্ট্রেলিয়া বধ; ২০০৭ বিশ্বকাপে সেই আশরাফুলেরই আরেকটি অসাধারণ পারফরম্যান্সে সেই সময়ের এক নম্বর দল দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো। বড় এই দুই দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের সুখস্মৃতি বলতে এই। তিন সংস্করণ মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৬ ম্যাচে আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৪ ম্যাচে সবেধন নীলমনি ওই একটি করে জয়।
দেশের মাটিতে ১০ ম্যাচ খেলে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে সবগুলোতেই হেরেছে বাংলাদেশ। ২০০৮ সালে মিরপুর টেস্টে ৫ উইকেটের হার বাদ দিলে বাকি সব ম্যাচে স্বাগতিকরা হেরেছে বাজেভাবে। এমনকি দুই দলের সবশেষ দেখাতেও বাংলাদেশের হয়েছিল বিব্রতকর অভিজ্ঞতা। ২০১১ বিশ্বকাপে মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার ২৮৪ রান তাড়ায় বাংলাদেশ গুটিয়ে গিয়েছিল ৭৮ রানে!
তবে সেই বাংলাদেশ আর এই বাংলাদেশের পার্থক্য অনেক। মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বে বদলে গেছে বাংলাদেশ। বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মাশরাফি জানালেন, এবার সুযোগ এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রেকর্ড একটু ভদ্রস্থ করার।
“ওয়ানডেতে আমরা এখন দারুণ আত্মবিশ্বাসী এক দল। জয়ের জন্যই মাঠে নামি আমরা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও জিততেই নামব। তবে আগেও যেমন বলেছি, কাজটি কঠিন। ভারতের চেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা অনেক ভারসাম্যপূর্ণ দল। তবে আমরাও ভালো খেলছি। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাই।”
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজটিকে নিজেদের মূল্যায়নের চ্যালেঞ্জ হিসেবেও দেখছেন মাশরাফি।
“পাকিস্তান-ভারতকে পরপর সিরিজে হারানোর পর সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জটাই এখন আমাদের সামনে। দক্ষিণ আফ্রিকা দারুণ দল। এই সিরিজ খেললে আমরা নিজেদের অবস্থানটা বুঝতে পারব।”
২০০৭ বিশ্বকাপে গায়ানায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের ৬৭ রানে জয়ের ম্যাচে খেলেছিলেন মাশরাফি। আশরাফুলের ৮৩ বলে ৮৭ রানের ইনিংসটার পাশাপাশি মাশরাফির ১৬ বলে ২৫ রানে বাংলাদেশের রান ছাড়িয়েছিল আড়াইশ’। ওই ম্যাচে বাংলাদেশের ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে তামিম ইকবাল করেছিলেন ৩৮ রান।
সেই ম্যাচের স্মৃতি এবার ফিরিয়ে আনতে চান তামিম।
গায়ানার সেই জয়ে বাংলাদেশের অধিনায়ক ছিলেন হাবিবুল বাশার, যিনি এখন অন্যতম নির্বাচক। সাবেক অধিনায়কেরও বিশ্বাস, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কিছু করে দেখানোর সময় এবার।
“এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা যতবার বাংলাদেশে এসেছে, কোনোবারই আমাদের দল খুব ভালো অবস্থায় ছিল না। এবার দল দারুণ খেলছে। ছেলেরা ফর্মে আছে। এই দলের মানসিকতাও দারুণ। এবার দক্ষিণ আফ্রিকা জয়ের দারুণ সুযোগ।”
হাবিবুলের মতে, ওয়ানডেতেই বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা বেশি।
“টি-টোয়েন্টিটা আমরা এখনও ততটা ভালো খেলি না। নিয়মিত খেলতেই তো পারি না আমরা। ওরা অনেক টি-টোয়েন্টি খেলে, সবাই বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি লিগগুলো খেলে। ওয়ানডেতে আমরা এখন দারুণ আত্মবিশ্বাসী দল। ওয়ানডেতেই আমি বেশি সম্ভাবনা দেখছি।”
সাবেক অধিনায়কের সঙ্গে এখানে একমত বর্তমান অধিনায়ক মাশরাফি।
“সেদিন পরিসংখ্যান দেখছিলাম; ওদের ৬-৭ জন ক্রিকেটার আইপিএলে বিভিন্ন দলে নিয়মিত একাদশে খেলেছে। টি-টোয়েন্টি খেলার মধ্যেই আছে ওরা, কন্ডিশনটাও অচেনা নয়। টি-টোয়েন্টি জয় আমাদের জন্য অনেক কঠিন। ওয়ানডেতে সেই তুলনায় আমরা অনেক ভালো খেলি।”
তবে এসব ওয়ানডে-টি-টোয়েন্টির তুলনা, অতীত রেকর্ড, ইতিহাস, এসব নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবনা নেই চন্দিকা হাথুরুসিংহের। বাংলাদেশ কোচ থাকতে চান বর্তমান নিয়েই। সেই বর্তমানের বার্তাতেই ফুটে উঠলো অতীতকে পেছনে ফেলার প্রত্যয়।
“আমি ইতিহাসে বিশ্বাস করি না। ইতিহাসে বিশ্বাস করলে আজ এখানে থাকতাম না। ইতিহাস আছেই বদলানোর জন্য। আমরা ইতিহাসের অংশ নই। আমরা বর্তমানে আছি। এখন কি করছি, সেটাই আসল। আমি সবসময়ই ছেলেদের মনে করিয়ে দেই ওরা কতটা ভালো, কত বড় ওদের সামর্থ্য। না পারার তাই কারণ নেই।”
দক্ষিণ আফ্রিকার এই সফরে দুটি টি-টোয়েন্টি, তিনটি ওয়ানডে ও দুটি টেস্ট খেলবে দুদল। হিসেব পাল্টে দেওয়ার চ্যালেঞ্জটা শুরু রোববার, মিরপুরে প্রথম টি-টোয়েন্টি দিয়ে।