বিচারপতিদের সরানোর ক্ষমতা সংসদের হাতে ফেরানোর উদ্যোগের বিরোধিতা করে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত নেতাদের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের সঙ্গে শামিল হওয়ায় ড. কামাল হোসেন ও ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলামের সমালোচনা করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
Published : 11 Sep 2014, 09:24 PM
বৃহস্পতিবার এক আলোচনা সভায় তিনি বলেছেন, “বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য এ দুজন কার সঙ্গে হাত মিলাচ্ছেন? যারা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে প্রেস কনফারেন্স করেন, তাদের সঙ্গে।”
বিচারপতিদের সরানোর ক্ষমতা সংসদের হাতে রেখে ১৯৭২ সালে সংবিধানের খসড়া প্রণয়নকারী কামাল হোসেন এবং আমীর উল ইসলামের এখনকার অবস্থানের সমালোচনাও করেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা।
“৭২ এর সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন ড. কামাল হোসেন, আর সদস্য ছিলেন আমীর-উল ইসলাম। তখনতো ৯৬ অনুচ্ছেদের বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। কিন্তু তারা আজকে কেন ডিগবাজি খেয়েছেন?”
বিচারপতিদের সরানোর ক্ষমতা আইনপ্রণেতাদের হাতে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনের প্রস্তাব ইতোমধ্যে সংসদে উপস্থাপন হয়েছে, চলতি অধিবেশনেই তা পাস হওয়ার কথা।
আওয়ামী লীগের এই উদ্যোগের বিরোধিতা করছে বিএনপি। বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের পাশাপাশি কামাল হোসেন ও আমীর-উল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদও প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা করছেন।
এক সময়ের আওয়ামী লীগ নেতা ড. কামাল এখন গণফোরামের সভাপতি। আমীর ও রোকন আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের নেতা।
আওয়ামী লীগের এই উদ্যোগের বিরোধিতায় মঙ্গলবার সরকার সমর্থক আইনজীবীদের মোর্চাভুক্ত সংগঠন গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির এক সভায় তারা বক্তব্য রাখেন।
ওই সভায় বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেনও ছিলেন, যিনি একটি কমিটির ঘোষণাও দেন সেদিন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আপিল বিভাগে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের পক্ষে লড়ছেন। অন্যদিকে প্রসিকিউশনকে সহায়তা করছেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
তিনি বলেন, “১৯৭২ সালে যারা সংবিধান প্রণয়ন করেছেন, সংবিধানে যাদের স্বাক্ষর আছে, তারা কেন এখন সেই যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে হাত মিলাচ্ছেন? তারা কার জন্য এসব করছেন?
“ওনাদের কাঁধে যারা ভর করেছেন, তারা স্বাধীনতার সপক্ষের না। তারা কাদের মোল্লার বন্ধু, সাঈদীর অনুসারী। যারা গোলাম আযমের গুনগান গায়। দয়া করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করবেন না।”
মঙ্গলবারের সভায় আমীর তাদের এখনকার অবস্থানের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলেছেন, স্বাধীনতার পর বিচার বিভাগ ‘পরিপক্ক’ না হওয়ায় তখন তারা ওই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এখনকার বাস্তবতা ভিন্ন।
১৯৭২ সালের সংবিধানে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকলেও দুই বছর পর সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনের (বাকশাল গঠন) সময় সেই ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত হয়।
এরপর চতুর্থ সংশোধনী বাতিল হলে জিয়াউর রহমান এক সামরিক ফরমান বলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে এই ক্ষমতা তাদের হাতে দেন। এখন তাকে আগের অবস্থায় ফেরত নেওয়া হচ্ছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, আফগানিস্তান, ইতালি, জাপান, ভুটান, নেপাল, শ্রীলংকাসহ বিভিন্ন দেশে আইন প্রণেতাদের হাতে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা থাকার নজির তুলে ধরেন।
সংসদে এই ক্ষমতার অপ্রপয়োগ হবে বলে বিএনপির আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “১৯৭২ সালের পর যতদিন এই নিয়ম ছিল, ততদিন একজন বিচারককেও অপসারণ করা হয়নি।”
বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের সভাপতি আবদুল বাসেত মজুমদারের সভাপতিত্বে এই সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক বশির আহমেদ, এএম আমিন উদ্দিন, শ ম রেজাউল করিম উপস্থিত ছিলেন।
সুপ্রিম কোর্টে সরকার সমর্থক আইনজীবীদের মোর্চা ‘সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদে’ ২০১২ সালের নভেম্বর থেকে দুটি ধারা রয়েছে।
এক ধারার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্যারিস্টার আমীর , অন্য ধারার নেতৃত্বে আছেন বাসেত মজুমদার। বাসেত বঙ্গবন্ধু আইজীবী পরিষদের আহ্বায়ক। অন্যদিকে আমীর নেতৃত্বাধীন অংশে রয়েছে আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির গত নির্বাচনে তাদের এক করার উদ্যোগ নেয়া হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি।
কমিটির সঙ্গে নেই সুব্রতও
বিচার বিভাগের ‘স্বাধীনতা রক্ষায়’ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিটিকে ধারণ না করার কথা জানিয়েছে গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতিও, গত মঙ্গলবার যাদের সভায় খন্দকার মাহবুব ওই কমিটি ঘোষণা করেছিলেন।
“এ কমিটি ঘোষণা করেছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন। আর এটা সকলের সম্মতিতে করা হয়নি।”
খন্দকার মাহবুব ঘোষিত ওই কমিটিতে সহকারী সদস্য সচিব পদে রাখা হয়েছিল সুব্রত চৌধুরীকে। সদস্য সচিব রাখা হয় বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকনকে।
এই কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে আমীর-উল ইসলাম ও রোকনউদ্দিন মাহমুদের নামও ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে তারা দুজনই জানান, তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে নাম ঘোষণা করায় তারা এই কমিটিতে থাকছেন না।
এখন সুব্রত চৌধুরীও বললেন, তিনিও এই কমিটির সঙ্গে নেই।