সাত খুনে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে র্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক তারেক সাঈদ মোহাম্মদ দাবি করেছেন, ছয় কোটি টাকা নেয়ার অভিযোগ ‘গণমাধ্যমের সৃষ্টি’।
Published : 17 May 2014, 08:55 PM
র্যাব হুমকি দিচ্ছে, অভিযোগ নজরুলের শ্বশুরের
র্যাবকে দায়ী করলেন নজরুলের শ্বশুর
হাই কোর্টের নির্দেশে গ্রেপ্তার সামরিক বাহিনীর এই কর্মকর্তা শনিবার নারায়ণগঞ্জের আদালতে দাঁড়িয়ে নিজেদের সপক্ষে বক্তব্যে এই দাবি করেন, যিনি ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার জামাতা।
এই সময় আইনজীবীরা তারেক সাঈদের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। জনাকীর্ণ আদালতে পুলিশি বেষ্টনির মধ্যে তারেক সাঈদ ও আরিফুল হোসেনের দিকে অনেককে থুথুও ছুড়তে দেখা যায়।
গত ২৭ এপ্রিল কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজন অপহৃত হওয়ার পরপরই র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল ওঠে।
তিন দিন বাদে লাশ উদ্ধারের পর নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, র্যাব কর্মকর্তারা কাউন্সিলর নূর হোসেনের কাছ থেকে ৬ কোটি টাকা নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
এরপর হাই কোর্ট র্যাব-১১ এর তিন কর্মকর্তা তারেক সাঈদ, আরিফ ও এম এম রানাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়। ইতোমধ্যে এই তিনজনকে নারায়ণগঞ্জ থেকে সরিয়ে এনে সামরিক বাহিনী থেকে অবসরে পাঠানো হয়।
হাই কোর্টের রায়ের ছয়দিন পর শনিবার ভোররাতে ঢাকা সেনানিবাস থেকে গ্রেপ্তার করা হয় অকালীন অবসরে পাঠানো তারেক সাঈদ ও আরিফকে।
এরপর তাদের দুজনকে দুপুরে নেয়া হয় নারায়ণগঞ্জে, ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে তোলা হয় আদালতে।
চন্দন সরকার হত্যাকাণ্ডে অভিযোগের মুখে থাকা সাবেক এই র্যাব কর্মকর্তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে দাঁড়াননি। তারেক সাঈদ নিজেই বক্তব্য রাখেন।
আইনজীবীদের ক্ষোভ প্রকাশের মধ্যে তারেক সাঈদ বক্তব্যের শুরুতেই চন্দন সরকারের জন্য শোক প্রকাশ করে বলেন, “একজন আইনজীবী খুন হওয়ার পর সব আইনজীবী ক্ষুব্ধ হবেন, এটাই স্বাভাবিক।
“কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে ৬ কোটি টাকা নিয়ে সাতজনকে হত্যার অভিযোগ মিডিয়ার সৃষ্টি। মামলায় আমাদের আসামি করা হয়নি। টেলিভিশন ও পত্রপত্রিকায় রিপোর্টে অভিযোগ করা হচ্ছে, নূর হোসেনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে র্যাব এই ঘটনা ঘটিয়েছে। ফলে র্যাবের প্রতি আইনজীবীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।”
এসময় আদালতে থাকা আইনজীবীদের মধ্য থেকে বলা হয়, “আমরা বলিনি র্যাব জড়িত। আপনার মতো গুটিকয়েক কর্মকর্তা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। আপনারাই এই ঘটনা ঘটিয়েছেন।”
র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা শহীদুল আরো বলেছিলেন, তারা এই বাহিনীর কর্মকর্তাদের আসামি করতে চেয়েছিলেন কিন্তু পুলিশের বাধায় তা করতে পারেননি।
সাত খুন ছাড়াও আরো অপহরণের অভিযোগের মুখে থাকা তারেক সাঈদ দাবি করেন, রবের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের চেষ্টা চলছে।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত নন দাবি করে তিনি বলেন, “১০ দিন কেন প্রয়োজনে ২০ দিনে রিমান্ডে নেয়া হোক আমাদের। তবুও সত্য উদঘাটন করা হোক।”
৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তারেক সাঈদ ও আরিফকে ১০ দিনের হেফাজতে চেয়েছিল পুলিশ, তবে হাকিম চাঁদনী রূপম প্রত্যেককে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছে।
আদালত থেকে দুজনকে শহরের মাসদাইরে জেলা পুলিশ লাইনে নেয়া হয়। সেখানেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
দুজনকে আদালত থেকে বের করার সময় বিক্ষুব্ধ মানুষ তাদের ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দেয়। অনেকে তাদের দিকে থুথু মারে। কয়েকজন মাথায় আঘাতের চেষ্টা করলেও পুলিশ তাদের হটিয়ে দেয়।
পাঁচ দিনের রিমান্ড হওয়ায় আইনজীবীদের একটি অংশ বিক্ষুব্ধ হয়ে স্লোগান দিতে থাকে। তখন আইনজীবী নেতারা তাদের শান্ত করেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার না দেখিয়ে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানোতে আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।”
দুটি পিকআপভ্যানে হেলমেট ও বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে পুলিশ বেষ্টনির মধ্যে সাবেক দুই র্যাব কর্মকর্তাকে আদালতে আনা হয়।
গ্রেপ্তার সাবেক দুই র্যাব কর্মকর্তাকে ভোর পৌনে ৫টায় নারায়ণগঞ্জে আনার পর রাখা হয় জেলা পুলিশ লাইনে।
এজন্য রাত থেকেই পুলিশ লাইনে ছিল নিরাপত্তার কড়াকড়ি। ভেতর সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয়া হয়নি।
সকালে ঢাকা থেকে আসা পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক খন্দকার গোলাম ফারুক পুলিশ লাইনে ঢোকেন।
এই কড়াকড়ির মধ্যেও সকাল থেকে উৎসুক মানুষের ভিড় ছিল পুলিশ লাইনের সামনে।