একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের ১১ অভিযোগে নগরকান্দার পৌর মেয়র বিএনপি নেতা জাহিদ হোসেন খোকন ওরফে খোকন রাজাকারের বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
Published : 09 Oct 2013, 04:43 PM
বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ বুধবার পলাতক খোকনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে এই নির্দেশ দেয়।
আগামী ৩ নভেম্বর প্রসিকিউশনের প্রারম্ভিক বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে খোকনের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে।
১৬জন নারী ও শিশুসহ ৫০ জনকে হত্যা, তিনজনকে পুড়িয়ে হত্যা, দুইজনকে ধর্ষণ, নয়জনকে ধর্মান্তরিত করা, দুটি মন্দিরসহ ১০টি গ্রামের বাড়ীঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ, সাতটি পরিবারকে দেশত্যাগে বাধ্য করা এবং ২৫ জনকে নির্যাতনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ আনা হয়েছে এই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে।
পলাতক খোকনের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আব্দুস শুকুর খানকে আসামির সঙ্গে যোগাযোগ করারও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
গত ১৮ জুলাই মানবতাবিরোধী অপরাধের ১১টি অভিযোগ আমলে নিয়ে খোকনকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। পলাতক খোকনকে আদালতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়ে দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
১৪ অগাস্টের মধ্যে আদালতে হাজির না হওয়ায় তার অনুপস্থিতিতেই অভিযোগে গঠনের শুনানি শুরুর নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। ওইদিনই আব্দুস শুকুর খানকে পলাতক খোকনের আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
গত ৫ সেপ্টেম্বর এ মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু করে প্রসিকিউশন। অ্যাডভোকেট আব্দুস শুকুর খান এর বিরোধিতা করে যুক্তি উপস্থাপন করেন।
এর আগে গত ২৩ জুন প্রসিকউটর মোখলেসুর রহমান বাদল আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে সাংবাদিকদের বলেন, “জাহিদ হোসেন ওরফে খোকন রাজাকার একজন স্বঘোষিত রাজাকার, যে বলে, ‘আমি রাজাকার ছিলাম, আছি, রাজাকার হিসেবেই মৃত্যুবরণ করতে চাই’।”
তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী রাজাকার হিসেবে জাহিদ হোসেন খোকন লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, আটক, নির্যাতন, ধর্মান্তরকরণ, ধর্ষণ, হত্যাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
তিনি বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার নগরকান্দায় এসব অপরাধ সংঘটন করেন।
১৯৭১ সালের ২৯ মে চাঁদের হাটে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও এদেশীয় রাজাকার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বড় ধরনের যুদ্ধ হয়। ওই যুদ্ধে ভাই জাফর রাজাকার মারা যাওয়ার পর তার ভাই খোকন নগরকান্দা রাজাকার বাহিনীর প্রধান হন।
প্রসিকিউশনের অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে খোকন জামায়াতের প্রার্থীর পক্ষে বৃহত্তর ফরিদপুর এলাকায় প্রচার চালান। পরে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে জড়ান এবং নগরকান্দা পৌর কমিটির সহ-সভাপতি হন।
২০১১ সালে তিনি নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। মেয়র হিসেবে শপথ নেয়ার পর থেকেই তিনি পলাতক।
২০১২ সালের ১৬ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। তদন্তকালে এ মামলায় ৭৮ জনের বেশি লোকের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। ৫০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
এদিকে বুধবার জামায়াতে ইসলামীর নেতা মাওলানা আব্দুস সুবহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়েছে।
শুনানিতে ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামীর নেতা হিসেবে মাওলানা সুবহানের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন। পরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো বর্ণনা করেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা।