নারী জাগরণ সমাবেশের মধ্যেই শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের একশ গজের মধ্যে দুটি হাতবোমা বিস্ফোরিত হয়েছে।
Published : 08 Mar 2013, 10:01 AM
শুক্রবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বোমার বিস্ফোরণ হয়। এতে আহত হন এক র্যাব সদস্য। জড়িত সন্দেহে আটক করা হয়েছে ১৪ জনকে।
ঘটনার পর প্রায় ১৫ মিনিট সমাবেশ বন্ধ থাকে। পরে আবারো শুরু হয়।
নারী জাগরণ সমাবেশে নিক্ষেপ করা বোমা দুটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ তলা থেকে ফেলা হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
নাট্যধারার কর্মী বিউটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তিনি কালো গেঞ্জি পরা একজনকে পাঁচতলা থেকে বোমা দুটি ছুড়তে দেখেছেন।
তার ভাষ্য অনুযায়ী, “আমি দেখলাম পাঁচ তলা থেকে কালো গেঞ্জি পরা এক লোক দুই হাত উঁচিয়ে হাতবোমা ফেলে। সঙ্গে সঙ্গে নিচে বিস্ফোরণ ঘটে।”
“এরপর আমি আরো কয়েকজনের সঙ্গে ওই ভবনের পাঁচ তলায় উঠে যাই। সেখানে আমি একজোড়া স্যান্ডেল পড়ে থাকতে দেখেছি। আরো লোকজন থাকলেও সেখানকার পরিবেশ ছিল চুপচাপ। স্যান্ডেলের বিষয়টি আমি পুলিশকেও বলেছি।”
এদিকে ঘটনার পরপর দুই তিনশ লোক বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের পাশের নির্মাণাধীন একটি ভবন থেকে রড নিয়ে ‘এ’ ব্লকের পুরনো বিল্ডিংয়ে ঢোকার চেষ্টা করে। বাধা পেয়ে ওই ব্লকের ডেন্টাল অনুষদের গেইট দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করে তারা । তবে জাগরণ মঞ্চের কর্মী, পুলিশ ও হাসপাতালের নিরপাত্তা কর্মীরা তাদের থামিয়ে দেয়।
পরে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা ভবনে ঢুকে তল্লাশি চালিয়ে কয়েকজনকে আটক করে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান এ ঘটনায় ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে। এরা জড়িত কি-না তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম ৫টা ৫৫ মিনিটে ভবন থেকে বেরিয়ে এসে বলেন, “আমরা পুরো ব্লকে তল্লাশি চালিয়েছি। পাঁচ তলার ক্যান্টিনের লোকজনসহ কয়েকজন সন্দেহভাজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছি।”
শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এম এ জলিল জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই ১৫ জনকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মিন্টো রোডের কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে।
ঘটনার পর থেকে ভবনের গেইটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছেন।
বোমা বিস্ফোরণের পর আনুমানিক ১৫ মিনিট সমাবেশ বন্ধ থাকলেও পরে জামায়াত-শিবিরকে প্রতিরোধের স্লোগানে ফের শুরু হয়।
হাতবোমা বিস্ফোরণের সময় সমাবেশের দ্বিতীয় বক্তা হিসেবে স্লোগান একাত্তরের সাধারণ সম্পাতক কানিজ ফাতেমা যুঁথি বক্তব্য দিচ্ছিলেন। বোমা ফাটার শব্দে তিনি থেমে যান।
এ সময় সমাবেশের একটি অংশ ছুটোছুটি শুরু হলে মঞ্চ থেকে বার বার সবাইকে শান্ত থেকে মঞ্চের কাছে থাকার আহ্বান জানানো হয়।
মিনিট পনের পর আবার বক্তব্য দেয়া শুরু হয়।
যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শাহবাগ চত্বরে আন্দোলন করে আসছে তরুণরা। এরপর ১৫ ফেব্রুয়ারি পল্লবীতে খুন হন শাহবাগ আন্দোলনের কর্মী ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার।আর বৃহস্পতিবার সামিউর রহমান নামে একজন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টকে কোপানো হয়েছে। তিনিও এই আন্দোলনে যুক্ত বলে জানিয়েছেন ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন।
শুক্রবারের এই বিস্ফোরণের আগে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে জাগরণ মঞ্চের আন্দোলন চলে। এ সময় সেখানে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।