‘হাতবোমা ফেলা হয় পাঁচতলা থেকে’

শাহবাগে নারী জাগরণ সমাবেশে চলাকালেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ তলার একটি জানালা থেকে দুটি হাতবোমা ছোড়া হয় বলে জানিয়েছেন কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী। 

নিজস্ব প্রতিবদেকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 March 2013, 06:51 AM
Updated : 8 March 2013, 07:11 AM

শুক্রবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ওই বোমা বিস্ফোরণে একজন র‌্যাব সদস্য আহত হন। তার নাকমুখ ও ডান হাত থেকে দিয়ে রক্ত ঝরতে দেখেছেন আমাদের প্রতিবেদক সুলাইমান নিলয়।

র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান জিয়াউল আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, আহত ডিএডি জালালউদ্দিনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বোমা দুটির বিস্ফোরণস্থল মূল মঞ্চ থেকে আনুমানিক ১০০ গজের মতো হবে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নাট্যধারার কর্মী বিউটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি দেখলাম পাঁচ তলা থেকে কালো গেঞ্জি পরা এক লোক দুই হাত উঁচিয়ে হাতবোমা ফেলে । সঙ্গে সঙ্গে নিচে বিস্ফোরণ ঘটে।

“এরপর আমি আরো কয়েকজনের সঙ্গে ওই ভবনের পাঁচ তলায় উঠে যাই। সেখানে আমি একজোড়া স্যান্ডেল পড়ে থাকতে দেখেছি। আরো লোকজন থাকলেও সেখানকার পরিবেশ ছিল চুপচাপ। স্যান্ডেলের বিষয়টি আমি পুলিশকেও বলেছি।”

ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী শেখ জাহেল (৩০) নামে এক যুবক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিকেল পৌনে ৫টার দিকে পিজি হাসপাতালের এ ব্লকের ভেতর থেকে ওই বোমাগুলো নিক্ষেপ করা হয়। দুটি বোমার বিস্ফোরণস্থলের মধ্যে ব্যবধান ছিল এক ফুটের মতো।

এদিকে ঘটনার পরপর দুই তিনশ লোক বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের পাশের নির্মাণাধীন একটি ভবন থেকে রড নিয়ে ‘এ’ ব্লকের পুরনো বিল্ডিংয়ে ঢোকার চেষ্টা করে। বাধা পেয়ে ওই ব্লকের ডেন্টাল অনুষদের গেইট দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করে তারা । তবে জাগরণ মঞ্চের কর্মী, পুলিশ ও হাসপাতালের নিরপাত্তা কর্মীরা তাদের থামিয়ে দেন।

পরে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা ভবনে ঢুকে তল্লাশি চালায়।

শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম ৫টা ৫৫ মিনিটে ভবন থেকে বেরিয়ে এসে বলেন, “আমরা পুরো ব্লকে তল্লাশি চালিয়েছি। পাঁচ তলার ক্যান্টিনের লোকজনসহ কয়েকজন সন্দেহভাজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছি।”

সোয়া ৬টার দিকে ছয় জনকে ভবন থেকে নামিয়ে পুলিশের একটি গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে পুলিশ এ সময় কোনো কথা বলেনি।

ঘটনার পর থেকে ভবনের গেইটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছেন।

বোমা বিস্ফোরণের সময় মঞ্চের দিকে ছিলেন আমাদের প্রতিবেদক শহীদুল ইসলাম।

তিনি জানান, হাতবোমা বিস্ফোরণের সময় সমাবেশের দ্বিতীয় বক্তা হিসেবে স্লোগান একাত্তরের সাধারণ সম্পাতক কানিজ ফাতেম যুঁথি বক্তব্য দিচ্ছিলেন। বোমা ফাটার শব্দে তিনি থেমে যান।

এ সময় সমাবেশের একটি অংশ ছুটোছুটি শুরু হলে মঞ্চ থেকে বার বার সবাইকে শান্ত থেকে মঞ্চের কাছে থাকার আহ্বান জানানো হয়।

তাৎক্ষণিকভাবে  শ’ খানেক তরুণ লাঠিসোটা নিয়ে মূল মঞ্চ থেকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে রওনা হয়। এরপর মঞ্চে শ্লোগান শুরু হলে সমাবেশ নতুন করে সেখানে জড়ো হতে শুরু করে এবং মিনিট পনের পর আবার বক্তব্য শুরু হয়।

যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শাহবাগ চত্বরে আন্দোলন করে আসছে তরুণরা। এরপর ১৫ ফেব্রুয়ারি পল্লবীতে খুন হন শাহবাগ আন্দোলনের কর্মী ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার।আর বৃহস্পতিবার সামিউর রহমান নামে একজন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টকে কোপানো হয়েছে। তিনিও এই আন্দোলনে যুক্ত বলে জানিয়েছেন ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন।

শুক্রবারের এই বিস্ফোরণের আগে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে জাগরণ মঞ্চের আন্দোলন চলে। এ সময় সেখানে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।