ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছে, সেই রায়ের মূল অংশ এবং পর্যবেক্ষণকে ‘ভ্রমাত্মক’ মনে করছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক।
Published : 17 Aug 2017, 08:29 PM
ওই রায় নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, “যে সমস্ত তত্ত্বের ভিত্তিতে রায় দিয়েছেন, সেটাকেও আমরা সঠিক বলে মনে করিনি এবং এখনও করি না। মূল রায়ও আমার কাছে মনে হয়েছে ভ্রমাত্মক। পর্যবেক্ষণগুলোও মনে হয়েছে আরও বেশি ভ্রমাত্মক।”
রায়ে আপত্তির জায়গা সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চাইলে খায়রুল হক বলেন, “রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলেও সর্বোচ্চ আদালতের রায়, সবাইকে এটা মানতে হবে।”
তবে এরপরও যে কেউ স্বাধীনভাবে রায়ের সঙ্গে একমত বা দ্বিমত পোষণ করতে পারে জানিয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি বলেন, “এটা আমারও অধিকার। আইন কমিশনের অধিকার।”
সাত বিচারপতির ঐক্যমতের ভিত্তিতে দেওয়া রায় নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন কি না- এ প্রশ্নের জবাবে খায়রুল হক বলেন, “হ্যাঁ, প্রশ্ন তুলছি। সেই অধিকার আমার আছে। প্রথমেই বলেছি, আই অ্যাম বাউন্ড বাই দ্য জাজমেন্ট। কিন্তু সেই রায় সম্পর্কে প্রশ্ন তোলার অধিকার বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের আছে।”
উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের যে পরিবর্তন ষোড়শ সংশোধনীতে আনা হয়েছিল, তা অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায় গত ১ অগাস্ট প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট।
ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বাংলাদেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।
পর্যবেক্ষণে ‘বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষ ও অবমূল্যায়ন করা হয়েছে’ অভিযোগ তুলে রায়ে ক্ষুব্ধ সরকারি দলের নেতারা কড়া সমালোচনা করছেন, বাক আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছেন প্রধান বিচারপতি সিনহাও।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রায়ের পর্যবেক্ষণের ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য ‘এক্সপাঞ্জ’ (বাদ) দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন।
অন্যদিকে জিয়াউর রহমান আমলে প্রতিষ্ঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে আনার এই রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলছে বিএনপি।
আলোচিত এই রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানোর পর বিচারপতি খায়রুল হক আবার বিএনপি নেতাদের বাক আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন।
এর মধ্যেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলসহ নিজের দেওয়া নানা রায় নিয়ে বিভিন্ন জনপরিসরে উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব দিতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমসহ আরও তিনটি সংবাদ মাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেন খায়রুল হক।
‘সাংসদদের অজ্ঞ বলেছেন, সইতে হবে সমালোচনা’
সংসদ সদস্যদের ‘অজ্ঞ’ বলা হলে তার সমালোচনাও সইতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিচারপতি খায়রুল হক।
সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি গত শতকের পঞ্চাশের দশকে করা যুক্তরাজ্যের ‘পিপলস জজ’ খ্যাত লর্ড ডেনিং’র একটি মন্তব্য উদ্ধৃত করেন।
“জাস্টিস ইজ নট এ ক্লাস্টার্ড ভার্চু, ইট মাস্ট ফেস দ্য ক্রিটিসিজম অব দ্য পিপল’-ডেনিংয়ের এই উদ্ধৃতি দিয়ে খায়রুল হক বলেন, “আমি একজন পিপল। ......বিচারকদের সহনশীলও হতে হবে।
“যেখানে বিচারপতিরা সংসদ সদস্যদের সম্পর্কে ‘অজ্ঞ-অশিক্ষিত’ শব্দ বলছেন। সেখানে তারা কী করে আশা করেন, সাংসদরা চুপ করে থাকবেন? ড. রাজ্জাক, মতিয়া চৌধুরী-আরও অনেক যারা আছেন, তারা তো তাহলে অজ্ঞ-অশিক্ষিত। বিচারপতিরা যদি এটা বলেন, হি মাস্ট ফেস দ্য কনসিকোয়েন্স।”
রায়ের যুক্তি খণ্ডন
রায়ের নানা যুক্তিও খণ্ডন করেন সাবেক এই প্রধান বিচারপতি।
রায়ে পাকিস্তান আমলে সামরিক শাসনকালে করা ‘মুসলিম ফ্যামিলি ল’কে গ্রহণের যুক্তি দেখিয়ে সামরিক শাসন আমলে করা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গ্রহণের যুক্তি দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, “এখানেই ওনার রায়ের দুর্বলতা। যেটার সঙ্গে তুলনা হয় না, সেটাকেও তিনি নিয়ে এসেছেন।
‘মুসলিম ফ্যামিলি ল’ টিকে যাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে খায়রুল হক বলেন, যেদিন স্বাধীনতার ঘোষণপত্র গৃহীত হয়, সেদিন আইনের ধারাবাহিকতার রক্ষার সিদ্ধান্তও হয়। পরে ১৫২ অনুচ্ছেদে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, আইনের ধারাবাহিকতাকে বৈধতা দেওয়া হয়।
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে নতুন কিছু বিষয় যোগ করা হয়েছে বলে বিচারপতিরা যে যুক্তি দেন, তা উল্লেখ করে খায়রুল হক বলেন, “তাতে কী হয়েছে? ঢোকানো হয়েছে, আবার যে কোনো সময়ে বাদও দেওয়া হতে পারে।”
এই রায়ের যুক্তিতে সামরিক শাসন আমলে যোগ করা ‘বিসমিল্লাহ’ এবং রাষ্ট্র ধর্ম রেখে দেওয়ার উল্লেখ করাকেও অপ্রাসঙ্গিক মনে করেন খায়রুল হক।
তিনি বলেন, “সামরিক শাসন আমলে অবশ্যই বেআইনিভাবেই এটা করা হয়েছে। সেটা আমরা সপ্তম সংশোধনীতে অবৈধ ঘোষণা করেছি। প্রশ্ন এসেছে, তাহলে পঞ্চদশ সংশোধনীতে ঢোকানো হল কেন?
“সেখানেও কথা আছে, এই দুইটা কিন্তু আগের ফর্মে এখন আর নেই। অনেক বদলে দেওয়া হয়েছে। এরপরও তিনি কেন এ সব অজুহাত ধরেন? এই আইনে অজুহাত দেওয়ার সুযোগ আর নেই। এই সব যুক্তি রায়কে দুর্বল করে দিচ্ছে।”
“আমরা বলেছি, মূল সংবিধান কখনোই বদলে দেওয়া যায় না। তারা (সুপ্রিম কোর্ট) গার্ডিয়ান মানে জনগণ নাবালক নয়।”
সংবিধানের যে অভিভাবকত্ব সুপ্রিম কোর্টের কাছে রয়েছে, সেটা ‘নাবালকের অভিভাবকত্বের’ মতো নয় বলে মন্তব্য করেন খায়রুল হক।
খায়রুল হক বলেন, “আমরা কেউ নোবল লর্ড নই। আপনারা লর্ড বলেন, তাই আমরা লর্ড।
“তাই এখানে গার্ডিয়ান মানে ওয়ার্ডস অ্যাক্টের গার্ডিয়ান না। ১৬ কোটি মানুষ নাবালক, ওনারা তাদের গার্ডিয়ান-এরকম গার্ডিয়ানশিপ তাদের নেই। আর থাকলেও কেউ মানতে যাবে না। গার্ডিয়ান হচ্ছে জনগণ নিজেরাই।”
সংসদই জনগণের জন্যই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৬ কোটি মানুষ এসে আইন বানাতে পারবেন না। প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রে জনগণের পক্ষ থেকে সংসদ অভিভাবকত্ব করে থাকেন।
পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার ব্যাখ্যা
ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে অপ্রাসঙ্গিক কথা লেখায় বিচারপতিদের দিকে আঙুল উঠানো খায়রুল হকের বিরুদ্ধেও একই ইস্যুতে অনেকে সমালোচনা করেন। সে সব সমালোচনার জবাব দেন খায়রুল হক।
কীভাবে মুন সিনেমা হলের মামলায় পঞ্চম সংশোধনী এল, তার বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি।
সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে খায়রুল হক বলেন, “আমার মনে হয়, উনারা কেউই পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায় পড়েননি। পড়লেই দেখতেন, সেখানে পঞ্চম সংশোধনীকেও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। রুলটাও সেভাবেই ইস্যু হয়েছে।”
পঞ্চম সংশোধনী হওয়ার আগেই ১৯৭৫ সালের দিকে এই সিনেমা হল নিয়ে প্রথম রুল দেওয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, রায় হওয়ার কয়েকদিন পর এমএলআর-৭ এসে ওই রায় বাতিল করে দেয়।
পরে আবার মামলাকারীরা সুপ্রিম কোর্টে এলে আইনি লড়াইয়ের শেষ পর্যায়ে এসে আদালত পঞ্চম সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ না করায় বিরুদ্ধে রায় দেয়।
এরপরই ১৯৯৯ সালে বা ২০০০ সালে মামলাটি নতুন করে হয়, যাতে পঞ্চম সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ করা হয়।
‘তত্ত্বাবধায়কের দুই মেয়াদ বিকল্প ছিল, আদেশ নয়’
ত্রয়োদশ সংশোধনীতে সংক্ষিপ্ত আদেশে দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি রাখার কথা বলা হলেও মূল রায়ে নেই বলে যারা অভিযোগ করেন, তারা রায়টি মনোযোগ দিয়ে পড়েননি বলে মনে করেন খায়রুল হক।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই মেয়াদে রাখার বিকল্পও বাধ্যতামূলক ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, “রায় পড়লেই প্রথমেই দেখতেন, ‘আমাদের এই আপিলের বিচার্য বিষয় হচ্ছে, ত্রয়োদশ সংশোধনীর বৈধতা। সেটাই আমাদের একমাত্র ইস্যু। আমরা আমাদের অর্ডার অব দ্য কোর্টে সেটা দিয়েছি।
“তারপরও আমাদের কিছু পর্যবেক্ষণ আছে। পর্যবেক্ষণ সব সময়ই পর্যবেক্ষণ। এটা কখনোই ‘অর্ডার অব দ্যা কোর্টে’ যায় না, যেতে পারে না।”
“সে কারণে অর্ডার অব দ্যা কোর্টে আমরা মূল ইস্যুর বাইরে কিছু যাইনি। যাওয়ার কোনো কারণও ছিল না। সেখানে আমার সঙ্গে যারা ছিলেন, তারা পড়েছেন, সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং সই করেছেন।”
ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার রায় না দিলে নিজেই পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হতেন-এই সম্ভাবনার কথা স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, “কিন্তু এটা আমি হতে চাইনি। কারণ আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি।”
রাজনৈতিক চাপে এই রায় দিয়েছেন কি না- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “প্রশ্নই উঠে না। আমাকে কোনো রকম চাপ দিতে কোনোদিন সাহসই করে নাই, চাপ তো দূরের কথা। আর চাপের কথা বলছেন, অ্যাটর্নি জেনারেল আড়াইদিন ত্রয়োদশ সংশোধনীর পক্ষে শুনানি করেছেন। সরকার চাচ্ছিলো, ত্রয়োদশ সংশোধনী থাকুক।
“আমি আমি চেয়েছিলাম, দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক। সে কারণে আমার একটা পর্যবেক্ষণও ছিল। যদি সংসদ ইচ্ছা করে, তাহলে দুই মেয়াদ রাখতে পারতো। পর্যবেক্ষণে সেটা ছিল। তারা (সংসদ) রাখে নাই।
“যারা নির্বাচিত প্রতিনিধি কেবল তারাই এটা সিদ্ধান্ত দিতে পারে। অন্য কেউ পারে না। অনির্বাচিত বিচারকরা তো পারেই না। কাজেই ওইটা ছিল একটা পর্যবেক্ষণ । ‘মে’ শব্দটি বলা আছে।
আগামীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনা উচিৎ মনে করেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমার অনেক কিছু মনে হতে পারে। সেটা তো আমি জনসম্মুখে বলব না। কারণ আমি কাউকে প্রভাবিত করতে চাই না। এটা সংসদের কাজ।”
‘৭০ অনুচ্ছেদের যুক্তিও ঠিক না’
ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে ৭০ অনুচ্ছেদকে উল্লেখ করেন বিচারকরা। যেখানে যুক্তি হিসাবে দেখানো হয়, সংসদ সদস্যরা দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারেন না।
জবাবে খায়রুল হক বলেন, “বর্তমানে ৭০ অনুচ্ছেদ কোন অবস্থায় প্রয়োগযোগ্য? যারা বলে এটা সব সময় প্রয়োগযোগ্য....। না, এটা সব সময় প্রয়োগযোগ্য না। ওখানে বলা হচ্ছে, দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া যাবে না।
“আমরা কিন্তু দলের বিরুদ্ধে ভোটাভুটি একবারের জন্যও দেখি নাই। বাংলাদেশে দলের পক্ষে-বিপক্ষে একবারের জন্যও ভোটাভুটি হয় নাই। যা ভোটাভুটি হয় সেটা বিলের পক্ষে বা বিপক্ষে। অনাস্থা প্রস্তাব আসলেই তখন দলের পক্ষে বা বিপক্ষের প্রশ্ন আসবে।”
তিনি বলেন, “এই অনুচ্ছেদের অজুহাত আপিল বিভাগের সাতজন বিচারকই দিয়েছেন। সম্পূর্ণ ভুলভাবে দিয়েছেন। আমি তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই বলছি। কেবল তাই না, বাইরে যে সব বোদ্ধা রয়েছেন, তারা ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে এই কথাগুলো বলেন। কিন্তু কথাগুলো সঠিক নয়।
“আমার এই কথাগুলো আমার রায়ের সঙ্গে কোন কনফ্লিক্ট নাই। কারণ সেই সময় আমাকে ১২তম সংশোধনীর ভিত্তিতে রায় দিতে হয়েছিল। ১২তম সংশোধনী সত্যিকার অর্থেই সাংসদদেরকে দাসে পরিণত করেছিল। এখন আর সেই সংশোধনী নাই। মূল ৭০ অনুচ্ছেদ আছে।”
রায়ের এ সব ‘ভুল’ ইচ্ছাকৃত কি না- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি কখনোই বলব না, এটা ইচ্ছাকৃত বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি বলবো, তারা যথাযথভাবে এটাকে এন্টারপ্রেট করতে পারেননি।
“নির্বাহী বিভাগ কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিলে সুপ্রিম কোর্ট সেটা ঠিক করে দিতে পারে। সংসদ সংবিধান বহির্ভূতভাবে কোনো আইন পাস করে, সেটাও কোর্ট ঠিক করে দিতে পারে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট যদি কোনো ভুল করে তাহলে আমরা কোথায় যাব? অর্থাৎ রিভিউতেও যদি সুপ্রিম কোর্ট এটা বহাল রাখে, তাহলে আমরা কোথায় যাব?”
তিনি বলেন, “মূল রায়ে কেউ যদি বলেন, সংসদ ইমম্যাচিউরড। তাদের হাতে বিচারকদের ভবিষ্যত দেওয়া যাবে না। যদি তিনি বলেন, গণতন্ত্রও ইমম্যাচিউরড। কারণ অনির্বাচিত নারীরা সেখানে বসতে পারছে।
“আমার কাছে মনে হয়, এই কথাগুলো একেবারে অপ্রয়োজনীয় ছিল। রাজনীতি এবং সংসদ সম্পর্কে অত্যন্ত অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছেন। অথচ আমাদের বেতন সংসদ দেয়। তারা পাস না করলে আপনি কোনো বেতন পাবে না। সেক্ষেত্রে সংসদ ঠিক আছে।”
মূল সংবিধান কি বাদ দেওয়া যায়?
খায়রুল হক বলেন, অষ্টম সংশোধনী মামলা, পঞ্চম সংশোধনী মামলা, ত্রয়োদশ সংশোধনী, সপ্তম সংশোধনী-সবগুলো মামলায় মূল সংবিধানকে ফিরিয়ে নিয়ে আনা হয়। এবারই প্রথম মূল সংবিধান বাদ দিয়ে মার্শাল ল’র বিধান গ্রহণ করা হয়েছে।
“বিচারপতি ইমান আলী আরেকটা বিষয়ে কিছু কথা বলেছেন যে, মাদার কনস্টিটিউশনের সঙ্গে এটা সাংঘর্ষিক কি না? তাহলে কিন্তু এটা সংবিধান বহির্ভূত হবে। কিন্তু শেষের দিকে উনি খেই হারিয়ে ফেলেছেন।
“যে দুটি অনুচ্ছেদে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে, ষোড়শ সংশোধনী কি সেটাকে লঙ্ঘন করেছে? উনারা কিছুই বলেননি। বলেননি, কারণ ভায়োলেট করেনি। করলে তো বলতেন।”
‘বিচারকদের প্রধান বিচারপতির কাছে দায়বদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে’
খায়রুল হক বলেন, “উনারা ধরতে পারেননি বা বলতে চাননি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আর দায়বদ্ধতা এক জিনিস নয়। এই বাংলাদেশের সব লোকের দায়বদ্ধতা রয়েছে। দেশের এক নম্বর সিটিজেন রাষ্ট্রপতিও দায়বদ্ধ। প্রধানমন্ত্রীও দায়বদ্ধ।
“এই রায় অনুসারে বিচারকরা প্রধান বিচারপতির কাছে দায়বদ্ধ। কারণ প্রধান বিচারপতি নিজের রায়ে সেটা লিখেছেন।
“বিচারকরা কেবল জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। যেহেতু কেবল জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। তাই জনগণের প্রতিনিধিদের কাছেই তারা দায়বদ্ধ। আর কারও কাছে (দায়বদ্ধ) থাকতে পারে না।”
এই সংক্রান্ত আরও খবর