গায়ের জোরে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় পাল্টানোর চেষ্টা চলছে: রিজভী

ক্ষমতাসীনরা ‘জোর-জবরদস্তি’ করে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় পাল্টানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 August 2017, 11:00 AM
Updated : 14 August 2017, 04:47 PM

সোমবার সকালে রাজধানীতে এক দোয়া মাহফিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, “যদি রিভিউ করতে হয়, তারও একটা আইনগত প্রক্রিয়া আছে। কিন্তু গায়ের জোরে!

“তারা (ক্ষমতাসীন) প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে আজেবাজে কথাবার্তা বলছেন, অন্যায় কথাবার্তা বলছেন। জোর করে মনে হচ্ছে যে, তার (প্রধান বিচারপতি) কাছ থেকে রায় পাল্টে দিতে চাচ্ছেন।”

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ে দেওয়া পর্যবেক্ষণে জাতীয় সংসদকে অবমাননার পাশাপাশি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানকে খাটো করার চেষ্টা হয়েছে অভিযোগ করে প্রধান বিচারপতির সমালোচনায় সরব রয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীরা।

রোববার প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করে রায়ের পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের বক্তব্য জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এর মধ্যে রায় পাল্টানোর অভিযোগ আনা বিএনপি নেতা রিজভী বলছেন, “আমরা শুধু এইটুকুই বলতে চাই, অন্যায়ভাবে জোর করে, জবরদস্তি করে যে কাজ করানোর প্রচেষ্টা আমরা দেখতে পারছি, আজকে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের যে হুমড়ি-তুমড়ি ও রাগে-ক্ষোভে দুঃখে তাদের যে তৎপরতা আমরা দেখতে পারছি ক্রমাগতভাবে, এটা আর চলবে না। সেদিন শেষ হয়ে গেছে।”

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পরে একটা ঘোমট অবস্থা থেকে, ভয়ংকর বিষবাষ্প থেকে একটা বিশুদ্ধ নিঃশ্বাস ফেলার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, সেটা ক্ষমতাসীনরা ধ্বংস করে দিতে চান।

“এটা ধ্বংস করলে তো একদলীয় শাসন টিকে থাকবে, এক ব্যক্তির শাসন টিকে থাকবে। বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার সুযোগ থাকবে, গুম হবে, কেউ আপিল করতে পারবেন না; অপহরণ হবে কেউ আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন না- এই ব্যবস্থা, এই যে দুঃশাসন জারি রাখার জন্যই ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় আজকে আওয়ামী লীগের নেতারা ওলট-পালট করতে চাচ্ছেন।”

রায়ের ক্ষমতাসীনদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে রিজভী বলেন, “তারাপাগলের প্রলাপ বকছেন- হায় হায়, তাদের এতদিনের যে মসনদ, তাদের এতদিনের যে শাসন, সেই শাসন বোধহয় এবার ওলট-পালট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সেজন্য মাননীয় প্রধান বিচারপতির ওপর তাদের এত রাগ, এত ক্ষোভ।”

লন্ডনের মুরফিল্ড আই হাসপাতালে গত ৮ অগাস্ট বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ডান চোখে অস্ত্রোপচারের পর তার আরোগ্য কামনায় নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল।

‘বিএনপি গর্তে থাকবে কেন?’

ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে রাজনীতিতে ‘অসহায়’ অবস্থায় থাকা বিএনপিকে প্রধান বিচারপতি সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন বলে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের বক্তব্যের সমালোচনা করেন দলটির নেতা রিজভী।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা গতকাল বলেছেন যে, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিএনপিকে গর্ত থেকে তোলার ব্যবস্থা হয়েছে। অর্থাৎ তারা (আওয়ামী লীগ) যে আইনের শাসন মানেন না- এটা তার বক্তব্য থেকে প্রমাণ হয়েছে।”

“ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণে মাননীয় প্রধান বিচারপতি তো সেই কথাই বলেছেন যে, আপনারা আইনের শাসনকে বন্ধ করেছেন, আপনারা দুর্নীতি করেছেন, আপনারা অনাচার সৃষ্টি করেছেন। এখন সেটা প্রকারান্তে আওয়ামী লীগের নেতা প্রমাণ করে দিলেন যে, হ্যাঁ আমরা তাই করি, আমরা সেই রকমেরই দল।”

রিজভী বলেন, “বিএনপি গর্তের মধ্যে থাকবে কেন? গণতন্ত্র যদি থাকে একদল সরকারে থাকবে, আরেকদল বিরোধী দলে থাকবে। আবার নির্বাচন হবে, জনগণ যদি তাদের সমর্থন করে তবে বিরোধী দল সরকারি দল হবে।

“গর্তের মধ্যে থাকা, দমন করা, অপহরণ করা, গুপ্ত হত্যা করা, গুম করা- এসব হচ্ছে বেআইনি। যারা আউট লক, যারা দুস্যবৃত্তি করে তারা এই কাজ করে। আজকে আওয়ামী লীগ দস্যুতার প্রতীক, আওয়ামী লীগ ডাকাতির প্রতীক, আওয়ামী লীগ অশাসনের প্রতীক, আওয়ামী লীগ হচ্ছে অপকৃত্তির প্রতীক।”

আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হকের সমালোচনা করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “খায়রুল হক কে? তিনি হচ্ছেন আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনীতি ঠিকাদার, তল্পিবাহক। আপনি ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। কি লজ্জাকর ব্যাপার। কেন?”

খায়রুল হক গণতন্ত্রকে লাঞ্ছিত করেছেন মন্তব্য করে রিজভী বলেন, “বগুড়ার তুফানের যে নারী লাঞ্ছনা, আর খায়রুল হকের গণতন্ত্রের যে লাঞ্ছনা- একেবারে সমপর্যায়ের। উনি গণতন্ত্র হত্যা করার সুযোগ করে দিয়েছেন, উনি ভোটারবিহীন সরকারের নির্বাচনের সুযোগ করে দিয়েছেন। মাত্র ১০ লাখ টাকা ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যানের চাকরির জন্য উনি এই কাজটি করেছেন, নিজের আত্মা আওয়ামী লীগের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন।”

নয়া পল্টনের কার্যালয়ে দোয়া মাহফিলে যোগ দেওয়াকালে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ায় তার নিন্দাও জানান এই বিএনপি নেতা।

স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েলের পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, প্রান্তিক জনশক্তি উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক এম এ মালেক, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ বক্তব্য রাখেন।