বিএনপিকে ‘গর্ত থেকে ‍উঠিয়েছেন’ প্রধান বিচারপতি: তোফায়েল

ষোড়শ সংশোধনীর নিয়ে আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি রাজনীতিতে ‘অসহায়’ অবস্থায় থাকা বিএনপিকে সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন বলে মনে করছেন প্রবীণ রাজনীতিক তোফায়েল আহমেদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2017, 02:09 PM
Updated : 13 August 2017, 05:03 PM

বিএনপি রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে ‘রাজনীতি’ শুরু করার পরই আওয়ামী লীগ সরব হয়েছে বলেও দাবি করেছেন এই মন্ত্রী।

বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে বর্তমান সরকার আমলে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন আদালত বাতিল করার পর থেকে তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে।

বিএনপি এই রায়কে স্বাগত জানালেও আপিল বিভাগের এই রায় ‘অপ্রাসঙ্গিক, অগ্রহণযোগ্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে তা প্রত্যাখ্যান করেছে ক্ষমতাসীন ১৪ দল।

রায় নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের এক এক করে সরব হওয়ার মধ্যে রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তোফায়েল আহমেদও কথা বলেন।

তিনি বলেন, “২ তারিখে রায় দিল, আমরা কিন্তু কোনো কথা বলি নাই। এই রায় দেওয়ার পর বিএনপি গর্ত থেকে উপরে উঠল।

“যে-ই বিএনপি বলতে শুরু করল, তারপর আমরা তার জবাব দিতে শুরু করলাম। খায়রুল হক আদালত অবমাননা করছেন বলতেছে। আজকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা মিছিল করতেছে এই রায়ের পক্ষে।”

“তাহলে কি মিন করা যায়... তারা (বিএনপি) যে অসহায় অবস্থায় ছিল, একটা খারাপ অবস্থায় ছিল। সেটাকে রেস্টোর করার জন্য যদি এই অবজারভেশন দেওয়া হয়ে থাকে... আর এই রকমই তো মানুষ মনে করছে,” বলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য।

বিচারপতি অপসারণের ক্ষেত্রে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনঃপ্রতিষ্ঠা আওয়ামী লীগের আপত্তির মুখে নয় বলে জানান তিনি।

“সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল যেটা আইয়ুব খান করেছিল, জিয়াউর রহমান করেছিল- সেটা আপনাদের ভাল লেগেছে, ঠিক আছে।কিন্তু আপনারা যে অবজারভেশন দিলেন, আপনারা পার্লামেন্টকে বললেন, ইম্যাচিউরড, নন ফাংশনাল, অপরিপক্ক। আমরাও তো বলতে পারি, যারা এ ধরনের কথা বলে তারা পরিপক্ক না।”

রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির করা ‘কোনো জাতি-দেশ একজন ব্যক্তির মাধ্যমে গড়ে ওঠেনি’ মন্তব্যেরও সমালোচনা করেন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল।

এই রায়ের প্রতিক্রিয়ার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “দেশটা আসলে দুই ভাগে বিভক্ত। আওয়ামী লীগ ভার্সেস রেস্ট। টকশোতে যান দেখবেন, যারা বিএনপি মাইন্ডের তারা এই রায়কে সমর্থন করবে। আমাদের লোকজন যারা যায়, তারা একটু সমীহ করে কথা বলে। তারা একটু সবদিক বিবেচনা করে কথা বলে।”

জাতীয় প্রেস ক্লাব আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড: দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংবাদিক ও গবেষক সৈয়দ বদরুল আহসান।

তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত কীভাবে হয়েছিল তা এখন অনেকটা স্পষ্ট। এই ইতিহাসগুলো আমাদের ক্লোজলি দেখতে হবে।”

খন্দকার মোশতাক আহমেদ, জিয়াউর রহমান, কর্নেল তাহের, এমএজি ওসমানী, কে এম সফিউল্লাহ, আবদুল হক, অলি আহাদসহ বিভিন্নজনের ভূমিকার কথাও বলেন এই সাংবাদিক।

“১৫ অগাস্টে বেশ কয়েক ঘণ্টা পার হয়ে গেল, কিন্তু এতগুলো বাহিনী প্রধান ছিল, আর্মি, নেভি, এয়ারফোর্স, ‍পুলিশ, রক্ষীবাহিনী, কেউ কিন্তু কোনো প্রতিরোধ করার উদ্যোগ নেননি। এসব বাহিনীর সবাই সুবোধ বালকের মতো বসে আছে খন্দকার মোশতাকের প্রতি আনুগত্যের জন্য।”

“এমএজি ওসমানী চতুর্থ সংশোধনীর সময় জাতীয় সংসদ থেকে বেরিয়ে আসলেন আইয়ুব খানের জায়গায় মুজিব খান দেখতে চাই না বলে। ঠিক উনিই খন্দকার মোশতাকের ডিফেন্স অ্যাডভাইজার হয়েছিলেন।”

যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার ভূমিকার সমালোচনাও করেন বদরুল আহসান।

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক তথ্যমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, “তখনকার সেনাপ্রধান কে এম সফিউল্লাহ এখন বলছেন, তিনি জানতেন না অভ্যুত্থানের বিষয়ে। ওনার তো না জানাটাই অপরাধ।”

খালেদ মোশাররফের ভূমিকার সমালোচনা্ও করেন তিনি।

“বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা কিংবা তার আদর্শ বাস্তবায়ন খালেদ মোশাররফের ইচ্ছা ছিল না। তার ইচ্ছা ছিল সেনাপ্রধান হওয়ার। আর সেজন্য তিনি খুনিদের বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, দৈনিক সমকালের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, ডাকসুর সাবেক সহসভাপতি মাহফুজা খানম, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বক্তব্য দেন।

ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন।