রায়ে ‘এক্সপাঞ্জ’ করার কিছু নেই: কামাল হোসেন

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে প্রত্যাহার করার মতো কোনো বক্তব্য দেখছেন না কামাল হোসেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকমেহেদী হাসান পিয়াসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2017, 05:55 PM
Updated : 26 August 2017, 08:39 AM

এই রায় আদালত স্বতপ্রণোদিতভাবে প্রত্যাহার করতে পারে বলে যে মত এসেছে, তাতেও দ্বিমত জানিয়েছেন প্রবীণ এই আইনজীবী।

বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদে হাতে ফিরিয়ে নিতে আনা সংবিধানের এই সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে সরকারের অসন্তোষ ও নানা আলোচনার প্রেক্ষাপটে রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে প্রতিক্রিয়া জানান কামাল হোসেন।

এক সময়ের আওয়ামী লীগ নেতা ও বঙ্গবন্ধুর আমলের মন্ত্রী কামাল হোসেন আলোচিত এই মামলাটির আপিলের শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরিয়া হিসেবে ষোড়শ সংশোধনীর বিপক্ষে মত রেখেছিলেন।

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছে, তার পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার কিছু মন্তব্যে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ নেতারা।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, রায়ে ‘আপত্তিকর, অপ্রাসঙ্গিক’ কথা রয়েছে, হয়েছে ‘ইতিহাস বিকৃতি’। রায়ের এসব বক্তব্য ‘এক্সপাঞ্জ’ করতে উদ্যোগ নেবেন তারা।

কামাল হোসেন বলেন, ৭৯৯ পৃষ্ঠার ওই রায়ের প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণের অংশটুকু এরই মধ্যে তিনবার পড়েছেন তিনি।

“একটি শব্দও পাইনি এক্সপাঞ্জ করার মতো। এর মধ্যে কিচ্ছু নাই এক্সপাঞ্জ করার মতো।”

আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করেছেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে খাটো করা হয়েছে।

কামাল হোসেন বলেন, “উনি (প্রধান বিচারপতি) যেটা বলেছেন ‘একক’।  বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অনুযায়ী সেখানে এককের কথা বলা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অনুযায়ী এই দেশটা কোনো এক ব্যক্তির কাছে থাকবে না। এটা তো বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে বলা হচ্ছে না। এটা তো বঙ্গবন্ধুরই কথা।”

রায়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার পর্যবেক্ষণের অংশে বলা হয়েছে, “কোনো জাতি বা রাষ্ট্র একজন ব্যক্তিকে নিয়ে বা একজন ব্যক্তির মাধ্যমে সৃষ্টি হয় না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নের কথা বলে গেছেন, আমরা যদি সত্যিই তা বাস্তবায়ন করতে চাই, আমাদের অবশ্যই আমিত্ববোধের ওই আত্মঘাতী উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর আসক্তি থেকে মুক্ত থাকতে হবে যে, কেবল একজন ব্যক্তি বা একজন মানুষই সব করেছে।”

কামাল হোসেন

রায়ের বিরোধিতাকারীদের দিকে ইঙ্গিত করে গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, “কোটি কোটি মানুষের জীবনের বিনিময়ে এটা (স্বাধীনতা) আমরা পেয়েছি। এত এত শহীদের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। যারা মূর্খ এবং অসৎ, তারা ব্যক্তি স্বার্থে ইস্যু করার চেষ্টা করছে।”

এই রায় নিয়ে এরই মধ্যে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে নেমেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা। বিএনপি এই রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা দাবি তুলেছেন, আদালতকে স্বতপ্রণোদিত হয়ে এই রায় বাতিল করতে হবে।   

‘এক্সপাঞ্জের’ বিষয়ে অ্যাটর্নি জনারেল মাহবুবে আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রধান বিচারপতি চাইলে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে তা প্রত্যাহার করতে পারেন। আবার যেহেতু রিভিউ করার সুযোগ আছে, সেখানেও বিষয়টা তুলে ধরা যেতে পারে।”

ড. কামাল বলেন, “স্বতঃপ্রণোদিত তো হয় না। তাদের বলতে হবে, কোনটা প্রত্যাহার করতে হবে, কেন প্রত্যাহার করতে হবে।  স্বতঃপ্রণোদিত প্রত্যাহার করার কোনো বিধান নেই।”

রায়ে প্রধান বিচারপতির ‘অগ্রহণযোগ্য’ বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার উদ্যোগ নেবেন বলে আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন। সেক্ষেত্রে রায় রিভিউ চেয়ে আবেদন করার ভাবনার কথাও জানান তিনি।

কামাল হোসেনও বলেন, “রিভিউ করার সুযোগ তো আছেই।  তাছাড়া কোনো মন্তব্য প্রত্যাহার করার মতো মনে হলে লিখিতভাবেও আবেদন করার সুযোগও রয়েছে।”

ইতিহাস বিকৃতির যে কথা আনিসুল হক বলেছেন, সে বিষয়ে বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম কামাল হোসেন বলেন, “রায়ে ইতিহাস বিকৃতি যদি হয়ে থাকে তাহলে লিখে বলতে হবে যে, এই পৃষ্ঠায় এই বাক্য বা শব্দ ইতিহাস বিকৃতি ঘটিয়েছে।”