বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারিতে এর সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতা দুর্নীতি দমন কমিশন না পেলেও পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা সংসদে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
Published : 23 Feb 2016, 05:23 PM
তিনি মঙ্গলবার সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংক কর্তৃক নিয়োগকৃত বহিঃনিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানদ্বয়ের দাখিলকৃত কার্যভিত্তিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে অনিয়মিত ঋণ মঞ্জুর, নিয়োগ ও পদোন্নতিতে তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে উল্লেখ রয়েছে।”
বিদেশে থাকা অর্থমন্ত্রীর কাছে রাখা সংসদ সদস্যদের প্রশ্ন এবং উত্তর সংসদ অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত হয়।
২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে মোট সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণের অভিযোগ ওঠার পর তার তদন্তে নেমেছিল দুদক।
চার বছর তদন্তের পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে দুদক ১৮টি মামলা করলেও বাচ্চুকে আসামি করা হয়নি, যদিও ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগের আঙুল ছিল তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে পোস্টারও বের করেছিল তারা।
জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য বাচ্চুকে ২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০১২ সালে তার নিয়োগ নবায়নও হয়েছিল।
কিন্তু ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে ২০১৪ সালে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ করার পর চাপের মুখে থাকা বাচ্চু পদত্যাগ করেন।
তখন অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন,পদত্যাগ করলেই পার পাবেন না বাচ্চু। তদন্তে দোষ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার হবে।
এরপর দুদকের তদন্তে বাচ্চু পার পাওয়ায় তাতে অসন্তুষ্ট অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি নিজেরাই তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে।
এদিকে একটি রিট আবেদনে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির ঋণ জালিয়াতি নিয়ে দুদক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের করা তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলেছে হাই কোর্ট।
বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির সঙ্গে ২৭ জন কর্মকর্তা, ৫৬টি ব্যবসায়িক ও আটটি সার্ভেয়ার প্রতিষ্ঠান জড়িত থাকার বিষয়টিও প্রতিবেদনে এসেছে বলে জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে সংসদে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
জড়িত ব্যক্তিরা হলেন- ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম সাজেদুর রহমান ও কাজী ফখরুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মঞ্জুর মোরশেদ, সাবেক উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুস সোবহান ও কনক কুমার পুরকায়স্থ, সাময়িক বরখাস্তকৃত উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ মোনায়মে খান, উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সেলিম, মহা ব্যবস্থাপক জয়নুল আবেদিন চৌধুরী ও মোজাম্মেল হোসেন, সাময়িক বরখাস্ত মহা ব্যবস্থাপক খন্দকার শামীম হোসেন, মহা ব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান, গোলাম ফারুক খান, চাকরিচ্যুত মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী, সাবেক উপ মহা ব্যবস্থাপক কোরবান আলী, উপ মহা ব্যবস্থাপক ওমর ফারুক, চাকরি চ্যুত উপ মহাব্যবস্থাপক শিপার আহমেদ, সাময়িক বরখাস্ত উপ মহা ব্যবস্থাপক এস এম ওয়ালিউল্লাহ, সহকারী মহা ব্যবস্থাপক- জহির উদ্দিন, ইমরুল ইসলাম, আবদুস সবুর, আবদুস সাত্তার খান, পলাশ দত্ত গুপ্ত, ইকরামুল বারী, সাবেক সহকারী মহা ব্যবস্থাপক সরোয়ার হোসেন, ব্যবস্থাপক মুহিবুল হক, চাকরিচ্যুত উপ ব্যবস্থাপক এসএম জাহিদ হাসান, উপ ব্যবস্থাপক এন এ তোফিকুল আলম।
কেলেঙ্কারিতে জড়িত ৫৬টি প্রতিষ্ঠান হল আজাদ ট্রেডিং (মালিক/পরিচালক- রায়হান আজাদ টিটু), ভাসাবি ফ্যাশন (ইয়াসির আহমেদ খান, কামাল জামান মোল্লা ও আজমল হক আযিম), তাহমিনা ডেনিম (ইয়াসির আহমেদ খান, কামাল জামান মোল্লা ও কাজী রিজওয়ান মোমিনুল হক), লাইফ স্টাইল ফ্যাশন মেকার (নার্গিস হোসেন ও মো. আবুল হোসেন), ইউকে বাংলা ট্রেডিং (আহমেদ তাজ উদ্দিন ও মো. মুস্তাকুর রহমান), তাহমিনা নিটওয়ার (ইয়াসির আহমেদ খান ও কাজী রিজওয়ানুল মোমিনুল হক), ফারশি ইন্টারন্যাশনাল (ফয়েজুন নবী চৌধুরী ও জেসমিল নবী), খাদিজা এন্ড সন্স (শামিম হাসান), লিটিল ওয়াল্ড (মো. রায়হান আজাদ, আযিম উদ্দিন, মো. মাহমুদুল হাসান, আতাউর রহমান ও আফরোজা রায়হান), এআরএসএস এন্টারপ্রাইজ (মো. সাব্বির হোসেন), আমিরা শিপিং এজেন্সি (মো. গিয়াস উদ্দিন মোল্লা), এশিয়ান শিপিং বিডি (আকবর হোসেন মালিক), এসএফজি শিপিং লাইন (সৈয়দ গোলাম হোসেন ও আইয়ুব আলি), মনিকা ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল (মনির হোসেন), ফাস্ট এন্ড বেস্ট ট্রেড ইমপেক্স (মো. জাবির হোসেন), ট্রেড হাউজ (মো. তাজউদ্দিন মোল্লা), এশিয়ান ফুড ট্রেডিং এন্ড কোম্পানি (আবদুল বারী খান), সুরমা স্টিল এন্ড স্টিলট্রেডিং কোম্পানি (মহিউদ্দিন শেখ), সিলভার কম ট্রেডিংয় (মো. সাইফুল আজম পলাশ), সিনট্রেক্স (মো. হসিবুজ্জামান), বি. আলম শিপিং লাইনস (মোহাম্মদ বশিরুল আলম), এস এল ডিজাইনার (মো. আলিমুজ্জামান লিটন, মিসেস নুরজাহান মনি ও মো. সাইফুর রহমান), তানজিনা ফ্যাশান (শাহিন হাসান, ফিয়াজ এন্টারপ্রাইজ (ওয়াহিদুর রহমান ও আসমা খাতুন), নাহার গ্রাডেন (সাইফুল ইসলাম ও আকরাম হোসেন), এল আর ট্রেডিংয় (লুতপা বেগম ও রফিকুল ইসলাম), সৈয়দ ট্রেডার্স (সৈয়দ মাহবুবুল গনি ও সুলতান আহমেদ), রুদ্র স্পেশালাইজড কোল্ড স্টোরেজ (মীর আবদুল মোহাইমেন, আশরাফ আলী ও কোহিনুর সুলতানা), নিউ অটো ডিফাইন (আসমা খাতুন ও ওয়াহিদুর রহমান), টেলিউইজ ইন্টারন্যাশনাল (মো. শওকত আযিম ও রিযিয়া বেগম), ডায়নামিক ট্রেডিং (আবুল কালাম মো. রাইহান), আহমেদ ওয়েলস মিলস (আশরাফ আহমেদ ও নাসড়ীন জাহান), বিথী এন্টারপ্রাইজ (কামরান শহিদ, আহসান হাবিব লেনিন ও মাহবুবুল আলম), এমারেল্ড স্পেশালাইজড কোল্ড স্টোরেজ (সৈয়দ মাহবুবুল গনি, আব্দুস শাফি, সৈয়দ এনামুল গনি, সৈয়দ রেজাউল গনি, সৈয়দ মারহাবুল গনি, সৈয়দ হাসান আল আরফাহ ও সৈয়দ হাসিবুল গনি গালিব), এমারেল্ড অটো ব্রিকস (সৈয়দ মাহবুবুল গনি, সৈয়দ হাসিবুল গনি গালিব, সৈয়দ এনামুল গনি, সুলতান আহমেদ, আব্দুস শাফি, মো. সারোয়ার জাহান ও মো. শামিম হাসান), প্রোপেল ইন্টারন্যাশনাল (মো. শওকত আজিম ও রিজিয়া বেগম), আর আই এন্টারপ্রাইজ (মো. ফখরুল আলম), গুঞ্জন এগ্রো এরামেটিক অটো রাইস মিল (মো. আইনুল হক সোহেল), হক ট্রেডিং (মো. জিয়াউর হক), ভয়েস এন্টাপ্রাইজ (সৈয়দ হাসিবুল গনি গালিব ও সৈয়দ রাজিয়া বানু), হাসিব এন্টারপ্রাইজ (মো. হাসিবুজ্জামান), এস ও এস ব্রাদার্স (সুবর্না দত্ত ও সমীর দত্ত), আলী কন্সট্রাকশন এন্ড সাপ্লায়ার্স (সৈয়দ হামিদুজ্জামান, মো. মাহবুবুল আলম, মো. আহাদুজ্জামান বাতেন ও সৈয়দ আহসান হাবিব লেলিন), বাশার এন্টারপ্রাইজ (মো. আইনুল হক সোহেল), এমারেন্ড ওয়েল (সৈয়দ মনোয়ারুল ইসলাম, সৈয়দ আহসান হাবিব লেলিন, এ এস এম মনিরুল ইসলাম, সজন কুমার বসাক ও অমিতাভ ভৌমিক), সিমেক্স (রাশেদুল হাসান ও নুসরাত জাহান ঝুমু), আর কে ফুডস (মো. আব্দুল কুদ্দুস, রানী বেগম, কামরুল হাসান সাগর ও রাশেদুল হাসান সুমন), সৈয়দ রিয়েল এস্টেট এন্ড ডেভোলপারস (সৈয়দ রোজিনা জামান ও সৈয়দ হামদুজ্জামান বাবুল), রিলায়েন্স শিপিং লাইনস (আসিফ ইকবাল), সৈয়দ কনষ্ট্রাংস (সৈয়দ হামদুজ্জামান বাবুল ও সৈয়দ রোজিনা জামান), নীল সাগর এগ্রো ইন্ড্রাট্রিজ লিমিটেড (আহসান হাবিব লেলিন), নীল সাগর এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ-ফিড মিল ইউনিট (আহসান হাবিব লেলিন), পারমা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কর্স (আহসান হাবিব লেলিন), এমারেল্ড ড্রেস (সৈয়দ হাসিবুল গনী গালিব, মো. এনামুল হক খান ও আনোয়ার হোসেন খোকন), বর্ষণ এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ (শামিয়াজ আক্তার ও কামরান শহিদ) এবং আজবিহা এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ (মো. মারুফ জামান ও সাহেরা বানু)।
জড়িত সার্ভেয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- এসবি সার্ভে ফার্ম, রূপসা সার্ভেয়ার, পিএসআর, বিডিএস এডজাস্টার, ইউনিক সার্ভে সার্ভিস ব্যুরো, প্রফেশনাল এসোসিয়েটস, দেশ পরিদর্শন কোং, আইএইচএস ইন্সপেকশন।