নিরাপদ ইন্টারনেটে জোর প্রধানমন্ত্রীর

নিরাপদ ইন্টারনেটের ওপর গুরুত্বারোপ করে এর অপব্যবহার ঠেকাতে উদ্যোগী হতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Sept 2015, 12:28 PM
Updated : 5 Sept 2015, 02:44 PM

প্রযুক্তির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে এর ক্ষতিকর দিকগুলোর বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

শনিবার গণভবনে ইন্টারনেট সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রযুক্তি যেমন জীবনযাত্রাকে সহজ করে দেয় এর কিছু খারাপ দিকও আছে। অনেকেই এর অপব্যবহার করে। জঙ্গিবাদীরা তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে দেয়। এটি অনেক ক্ষতিকারক। এটা যে শুধু বাংলাদেশে হয় এমন নয়, অনেক দেশই এ ধরনের সমস্যায় পড়ে।”

ইন্টারনেটের অপব্যবহারে সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে আলোচনায় তিনি বলেন, “ছোট শিশুরা না বুঝেই এমন অনেক কিছু এর মাধ্যমে সংযোগ করে, যা তাদের চরিত্র গঠনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তাই প্রযুক্তির প্রসারের পাশাপাশি এর নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিয়েও চিন্তা করতে হবে।”

প্রযুক্তি ব্যবহারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এ আইনটি যেন সঠিকভাবে তৈরি হয় সে বিষয়ে কাজ করতে হবে। অপব্যবহার যেন না হয়।”

ইন্টারনেট ব্যবহার করে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “কেউ নানাভাবে আমার ধর্ম সম্বন্ধে কষ্ট দিলে এতে কিন্তু আমার খারাপ লাগবে। সুতরাং ইন্টারনেট ব্যবহার করে যেন কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া না হয়।

“ইন্টারনেট ব্যবহারে যথেচ্ছচার বা অসামাজিক কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। প্রযুক্তি যেন সামাজিক অবক্ষয় না করতে পারে, এদিকে নজর দিতে হবে।”

তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে তা দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গঠনে অবদান রাখবে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “যাদের মধ্যে সচেতনতা নাই, তাদের আমরা সচেতন করব।

“আমরা প্রযুক্তির ব্যবহার করে এগিয়ে যাব। কিন্তু একটা দিক খেয়াল রাখতে হবে, যাতে সামাজিক অবক্ষয় না হয়।”

বাংলাদেশে তথ্য-প্রযুক্তির বিকাশ নিয়ে আলোচনায় শেখ হাসিনা বলেন, “এক সময় ইন্টারনেট তো দূরের কথা কম্পিউটারের ব্যবহারই ছিল না। কম্পিউটারের দাম ছিল অনেক বেশি। ১৯৯১ সালে পার্টির জন্য একটি কম্পিউটার ও লেজারপ্রিন্টার কিনতে লেগেছিল তিন লক্ষ টাকা।

“সে সময় একটি মাত্র কোম্পানি মোবাইল ব্যবসা করত। একটি মোবাইল ফোনের দাম ছিল এক লক্ষ টাকার বেশি। প্রতি মিনিটি কল করতে লাগত ১০ টাকা, কল ধরতেও লাগত ১০ টাকা।”

এ পরিস্থিতির মধ্যে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর প্রযুক্তিকে সাধারণের নাগালে আনতে উদ্যোগ নেওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “প্রযুক্তি কীভাবে সহজলভ্য করা যায় সেটা চিন্তা করি। এ বিষয়ে আমার ছেলে জয় সব সময় পরামর্শ দিয়েছে। তার হাতেই আমার কম্পিউটারে হাতেখড়ি। এর থেকেই সাবমেরিন কেবল স্থাপন।”  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এক সময় বাংলাদেশ বিনা পয়সায় ইন্টারনেট পেয়েছিল। সরকারে যারা ছিল তারা তখন এ সুযোগ নেয়নি, কারণ তাদের মনে হয়েছিল দেশের সব তথ্য পাচার হয়ে যাবে।

“আমরা সরকার গঠনের পর এটা নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করলাম। এ অঞ্চলে বাংলাদেশ ছাড়া সবাই ততক্ষণে সংযোগ নিয়ে নিয়েছে। সে সময় আমরা এটা করতে পারিনি তবে সব আয়োজন করা ছিল।”

বর্তমানে বাংলাদেশে তথ্য-প্রযুক্তির প্রসারের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “জীবনের অনেক কাজ করতেই অনেক টাকা খরচ করে শহরে আসতে হচ্ছে না। অনলাইনে প্রায় দুইশ প্রকারের সেবা পাওয়া যাচ্ছে। গ্রামের মানুষ কোনো কিছু কিনতে হলে তারা এখন অনলাইনেও কেনাকাটা করেন। কোনবানির গরু থেকে শুরু করে মটরসাইকেল পর্যন্ত।”

মোবাইল ফোনের বিভিন্ন সেবার কথাও তুলে ধরেন তিনি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রী বনানী সোসাইটি মাঠ, গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া, রংপুরের পীরগঞ্জ, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, নাটোরের শিংড়া ও বরিশাল সদরে জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে টেলি কনফারেন্সে কথা বলেন।

বনানী সোসাইটি মাঠ থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনার নেতৃত্বের জন্য দেশটাকে অনেক এগিয়ে নিয়েছি।”

জবাবে অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “অর্থমন্ত্রীকে অনেক ধন্যবাদ। আপনি বাজেটে অর্থ না দিলে আমরা এত তাড়াতাড়ি এটা পারতাম না।”

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে টেলি কনফারেন্সে টুঙ্গীপাড়াসহ কয়েকটি জায়গায় জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন।

‘উন্নয়নের পাসওয়ার্ড এখন আমাদের হাতে’ স্লোগান নিয়ে প্রথম বারের মতো দেশজুড়ে শুরু হয়েছে ইন্টারনেট সপ্তাহ।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগিতায় ইন্টারনেট সপ্তাহের আয়োজন করেছে সফটওয়ার রপ্তানিকারকদের সংগঠন বেসিস। বেসরকারি মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন এতে সহযোগিতা করছে।

দেশে ইন্টারনেটের প্রসার এবং ইন্টারনেটভিত্তিক পণ্য ও সেবা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ইন্টারনেট সপ্তাহ আয়োজন করা হয়েছে বলে বেসিস জানিয়েছেন।

১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে ইন্টারনেট সপ্তাহের কর্মসূচি।

৫ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বনানী মাঠে, ৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর নানকিন বাজারে এবং ১১ সেপ্টেম্বর সিলেটের সিটি ইনডোর স্টেডিয়ামে ইন্টারনেট সপ্তাহ উপলক্ষে অনুষ্ঠান হবে।

এছাড়া ৪৮৭টি উপজেলায় ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের অংশগ্রহণে একযোগে এই উৎসব পালন করা হবে।

শীর্ষস্থানীয় ই-কমার্স কোম্পানি, মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান, ওয়েব পোর্টাল, ডিভাইস কোম্পানিসহ ইন্টারনেটভিত্তিক পণ্য ও সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেট সপ্তাহের আয়োজনে অংশ নেবে।

বাংলাদেশ ইন্টারনেট উইকের আহ্বায়ক রাসেল টি আহমেদ জানান, ইন্টারনেট সপ্তাহে ১০ লাখ নতুন ইন্টারনেট গ্রাহক তৈরির লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

গণভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বেসিসের সভাপতি শামীম আহসান, গ্রামীণ ফোনের সিইও রাজীব শেঠী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।