শনিবার রাজধানীর র্যাডিসন হোটেলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম আয়োজিত ‘নিরাপদ ইন্টারনেট’ শিরোনামের আলোচনায় এ আশ্বাস দেন দুই প্রতিমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী।
নিরাপদ ইন্টারনেট গড়তে সামর্থ্যর ঘাটতি পূরণে নীতিগতভাবে অবস্থান কী বা কত দ্রুত বিষয়টি সমাধান হচ্ছে- তা জানতে চাওয়া হয়েছিল ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের কাছে।
জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমরা ভালো টিম ওয়ার্ক গড়ে তুলতে চাই, দুটি মন্ত্রণালয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একসাথে কাজ করলে অনেকটাই দমন করা সম্ভব।
“বিটিআরসিতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম রয়েছে। কোনো অভিযোগ এলে আমরা ই-মেইল করে জানাচ্ছি- তোমাদের ফেইসবুক টুইটারের মাধ্যমে এসব ক্রাইম হচ্ছে। তবে তাদের সাথে কোনো চুক্তি না থাকাতে তারা তা আমলে নিচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে আইআইজিকে এসব কন্ট্রোল করতে বলা হয়।”
তারানা হালিম বলেন, “সমস্যা সমাধানে অতি দ্রুত আইএসএস বা ইন্টারনেট সেফটি সলিউশান কার্যক্রম দেশে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।
“এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ওয়েব পোর্টাল কনটেন্ট ও অ্যাপ্লিকেশন মনিটরিং ও ফিল্টারিংয়ের মাধ্যমে অপরাধ অনেকটা প্রতিরোধ করতে পারবো এবং সঠিক ইনফরমেশন ও সোর্স আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে পারবো।”
তবে আইএসএস কীভাবে কাজ করবে ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ তার বিস্তারিত জানাননি তারানা।
এর কারণ হিসেবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “যারা সাইবার ক্রাইম করেন তারা আমাদের চেয়ে একধাপ এগিয়ে চলে। কারণ আমরা চাই না তারা এ বিষয়ে জানুক।”
আর ইন্টারনেটকে নিরাপদ করতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের আশ্বাস দেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
তিনি বলেন, “বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে নিরাপদ ইন্টারনেট। ইন্টারনেটকে নিরাপদ করতে যে পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন সে পরিমাণ বিনিয়োগ আমরা করব।
“আমরা আমাদের দেশের পুরো ইকোনমিকে লেবার ইনটেনসিভ থেকে আইসিটি বেইজড ইকোনমিতে ট্রান্সফার করছি। ইন্টারনেটকে নিরাপদ করতে বিনিয়োগ করতে আমরা দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত নই, আমরা ডিজিটাল সাইবার সিকিউরিটি ল ড্রাফট করছি এবং ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব করব।”
“সাইবার ক্রিমিনাল যদি ধরতে চাই, তাহলে ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবে তা ট্র্যাক ডাউন করে ধরতে পারব কোন ডিভাইস ব্যবহার করে কত ঘণ্টা আগে এ কাজটা করা হয়েছে।”
রেডিসনের এই অনুষ্ঠানটি একাত্তর টেলিভিশন ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ওয়েবসাইটে সরাসরি দেখানো হয়।
তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে গত কয়েক বছরের বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ।
বিটিআরসির হিসাবে, চলতি বছর জুন মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ৬৮ লাখ ৯৯ হাজার। গত এক বছরে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে ১ কোটি ৪ লাখ ৮৭ হাজার।
আর চলতি বছর জুন নাগাদ মোট ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ৮৩ লাখ ৪৭ হাজার ছিল বলে বিটিআরসির হিসাব।
আলোচনায় নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগ মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. এমদাদ উল বারী ইন্টারনেট নিরাপত্তায় সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
“দেশের জনগণের ৩২ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। এর ৯৭% ব্যবহার করে মোবাইল ইন্টারনেটের মাধ্যমে এবং বাকিরা আইএসপি এর মাধ্যমে।
“আমরা ইন্টারনেট প্রটোকলের যে ভার্সনটা ব্যবহার করি সেটি আইপিভি ফোর, এর যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে সারা বিশ্বে যতগুলো আইএসপি সংখ্যা তৈরি করতে পারে আমাদের বিশ্বের প্রয়োজন এর চেয়ে বেশি।”
“যার ফলে আমাদের দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর একটি বড় অংশ কোনো রিয়েল আইপি ব্যবহার করেন না। তাদেরকে একটি রিয়েল আইপি থেকে অনেকগুলো প্রাইভেট আইপি তৈরি করে দেওয়া হয়। সমস্যা হয় দেশের ভেতরে আমরা রিয়েল আইপি পর্যন্ত ট্র্যাক করতে পারি। তবে দেশের বাইরে যখন হয় তখন তা শনাক্ত করা সম্ভব হয় না।”
এমদাদ উল বারী বলেন, “…বিশেষ করে সুনামখ্যাত সামাজিক মাধ্যমগুলো থেকে হলে আইপি সহযোগিতা পাই না।”
প্রকৃত আইপি চিহ্নিত করা গেলে অপরাধ শনাক্ত করা সম্ভব কি না জানতে চাওয়া হয়েছিল র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদের কাছে।
তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে আমরা পর্যায়ক্রমে পূর্ণাঙ্গ সোসাইটির দিকে অগ্রসর হচ্ছি। এর অনেক ভালো দিক আছে, খারাপ দিকও আছে। এসব বিষয়ে কোথায় সাহায্য পাওয়া যাবে এ ধরনের ধারণা নেই- এটি খুবই হতাশাজনক।
“বাংলাদেশে এই ধরনের অপকর্ম রোধে ভাল আইন রয়েছে। আইসিটি অ্যাক্ট খুবই ভালো আইন। এ আইনে যে কেউ সহযোগিতা চাইতে পারেন, তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিতে হবে। সমস্যা হচ্ছে অনেক সময় চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে যায়।”
বৈঠকে আলোচক প্যানেলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক নোভা আহমেদ এবং জাতিসংঘ শিশু তহবিলের বিভাগীয় প্রধান (যোগাযোগ, প্রচার ও প্রচারণা) সীমা ইসলাম।