নিরাপদ ইন্টারনেট: উদ্যোগ আছে, তবুও উদ্বেগ

নিরাপদ ইন্টারনেট নিয়ে আলোচনায় ঘুরেফিরেই এসেছে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়টি; যা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন গবেষক থেকে শিক্ষার্থী পর্যন্ত সবাই।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 August 2015, 03:43 PM
Updated : 29 August 2015, 09:10 PM

আর সরকারের নীতি নির্ধারকরা বলছেন, নিরাপত্তা বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার মধ্যে রয়েছেন তারা।

শনিবার রাজধানীর র‌্যাডিসন হোটেলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম আয়োজন করে ‘নিরাপদ ইন্টারনেট’ শিরোনামের এক আলোচনা সভা।

আলোচনার শুরুতেই সঞ্চালক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী ইন্টারনেটে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়টি উত্থাপন করেন।

এ সময় তিনি ক্রিকেটার নাসির হোসেনের ফ্যান পেইজে শেয়ার করা তার বোনের ছবিতে নানা অশালীন মন্তব্য করার বিষয়টি তুলে আনেন।

একই সঙ্গে ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যার একটি লেখায় কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য আসার কথাও জানান।

তৌফিক ইমরোজ খালিদী

নোভা আহমেদ

আলোচনার শুরুতেই ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নোভা আহমেদ; যিনি এ বিষয়ের উপর গবেষণাও করেছেন।

নোভা বলেন, এমন দেখা গেছে ইন্টারনেটে একটি মেয়ের ছবি আপলোড করে সেখানে দাম লিখে দেওয়া হয়। যখন ছবিটা আপলোড হয় তখন ওই মেয়ের খারাপ লাগে।

“আবার এমনও হয়, কোন মেয়ের হয়তো একটা ছবি দিয়ে কেউ ফেইসবুকে একটা অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। পরিচিতরা ওকে ভেবে তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। এরপর দেখা গেল ওই অ্যাকাউন্ট থেকে পরিচিতদের খারাপ কিছু বলা হচ্ছে।”

নোভা বলেন, “মূল সমস্যা কেউ (ভুক্তভোগী নারী) এটা (হয়রানি) নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছে না। কীভাবে বলবে, কোথায় বলবে জানে না। নিজেরাই চেপে যাচ্ছে।”

তবে হয়রানির বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সজাগ রয়েছে বলে দাবি করেছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

তিনি জানান, তাদের করা সাইবার সিকিউরিটি কল সেন্টারে গত একবছরে ১২ হাজার কল এসেছে। হয়রানির শিকার হওয়াদের আইনি সহায়তাসহ অন্যান্য সহয়তা দেওয়া হচ্ছে।

এভাবে কত শতাংশ সফল- সঞ্চালকের এক প্রশ্নের জবাবে পলক দাবি করেন, তারা ৮০ শতাংশ সফল হয়েছেন।

তারানা হালিম

জুনাইদ আহমেদ পলক

তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ইন্টারনেটকে নিরাপদ করতে বিনিয়োগ করতে আমরা দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত নই, আমরা ডিজিটাল সাইবার সিকিউরিটি ল ড্রাফট করছি এবং ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব করব।”

“সাইবার ক্রিমিনাল যদি ধরতে চাই, তাহলে ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবে তা ট্র্যাক ডাউন করে ধরতে পারব কোন ডিভাইস ব্যবহার করে কত ঘণ্টা আগে এ কাজটা করা হয়েছে।”      

তবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম মনে করেন, সাইবারে ব্যক্তিগত আক্রমণের পেছনে রাজনৈতিক ও জঙ্গিবাদী কার্যক্রম রয়েছে।

এর ব্যাখ্যায় তিনি শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের উচ্ছেদ অভিযানে ধর্মীয় ওই সংগঠন ‘ভুয়া’ ছবি ব্যবহার করে অসংখ্য মুত্যুর যে ‘প্রপাগান্ডা’ চালিয়েছিল তার উদাহরণ দেন।

একইসঙ্গে রামুতে মিথ্যা ছড়িয়ে অসংখ্য বৌদ্ধ মন্দির ধ্বংসের ঘটনাও তুলে ধরেন তিনি।

বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর অসংখ্য ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে তারানা হালিম বলেন, “আমরা মাত্র কয়েকটি বন্ধ করতে পেরেছি।”

তবে ‘কার্যকরব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সমস্যা সমাধানে অতি দ্রুত আইএসএস বা ইন্টারনেট সেফটি সলিউশান কার্যক্রম দেশে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

বেনজীর আহমেদ

মো. এমদাদ উল বারী

আলোচনায় নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. এমদাদ উল বারী ইন্টারনেট নিরাপত্তায় সমস্যার কথা তুলে ধরেন।

“সমস্যা হয় দেশের ভেতরে আমরা রিয়েল আইপি পর্যন্ত ট্র্যাক করতে পারি। তবে দেশের বাইরে যখন হয় তখন তা শনাক্ত করা সম্ভব হয় না।”

তবে যারা ফেইসবুকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বা ‘প্রপাগান্ডা’ চালায় তারা প্রাথমিক ব্যবহারকারী নয় বলে মনে করেন র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।

তাদের ‘সুপার ইউজার’ বলেই মনে করেন তিনি।

এ বিষয়টি প্রতিহত করতে সচেতন ও গ্রগতিমনা মানুষদের সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান পলক।

তারানা হালিম বলেন, কারো একার পক্ষে এ বিষয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। বিভিন্ন সংস্থা ও এজেন্সির সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং সামাজিকভাবে এদের প্রতিরোধ গড়তে হবে।