সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ দেখিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চসহ কয়েকটি সংগঠন।
Published : 17 Aug 2015, 07:16 PM
ফেইসবুকে দেওয়া একটি স্ট্যাটাসের সূত্র ধরে রোববার রাতে ডিবি কার্যালয়ে ডেকে নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর তথ্য প্রযুক্তি আইনে করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় এই সাংবাদিককে।
সোমবার বিকেলে গণজাগরণ মঞ্চের বিক্ষোভ মিছিলে প্রবীর সিকদারের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদের পাশাপাশি যে ধারায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে সেটিও বাতিলের দাবি জানানো হয়।
জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে বিকাল ৫টায় শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর থেকে ওই মিছিল শুরু হয়।
এ সময় কর্মীরা স্লোগান দিতে থাকেন- ‘৫৭ ধারা বাতিল করো, প্রবীর সিকদারকে মুক্ত করো’সহ বিভিন্ন স্লোগান।
‘ধরা যাবে না, ছোঁয়া যাবে না, বলা যাবে না কথা, রক্ত দিয়ে পেলাম শালার এমন স্বাধীনতা’, ‘৫৭ ধারার কালাকানুন নিপাত যাক, বাক স্বাধীনতা মুক্তি পাক’সহ বিভিন্ন বক্তব্য সম্বলিত প্ল্যাকার্ডও বহন করেন তারা।
মিছিল শেষে সমাবেশে ইমরান এইচ সরকার গ্রেপ্তার প্রবীর সিকদারের মুক্তি দাবি করে বলেন, “এখন পরিষ্কার ভাবে বোঝা যাচ্ছে যে সরকারে ভেতরে এবং বাইরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি মানুষের শক্তিশালী হচ্ছে। আমাদের আশংকা ১৯৭৫ সালে মোশতাকসহ যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে তাদের বংশবৃদ্ধি এমনভাবে হচ্ছে যে তারা সরকারকে চারদিক থেকে প্রভাব খাটাচ্ছে। একইসঙ্গে একজন শহীদ পরিবারের সন্তানকেও হেয় করছে এবং সুযোগ পাচ্ছে।”
“নাকি যাদের বিরুদ্ধে একাত্তরে গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে তাদের পক্ষে দাঁড়াবে?”
আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার সমলোচনা করে ইমরান বলেন, “যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলে, মানুষের কথা বলে, এই কালো ধারাটি ব্যবহার করে তাদেরকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। মানুষের মত প্রকাশের উপর যে বাধা, আমাদের সংবিধানের মৌলিক যে ধারা ৭(ক) সঙ্গে সম্পূর্ণ পরিপন্থি এবং সাংঘর্ষিক।”
এর আগে দুপুরে প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে ‘বিক্ষুব্ধ সাংবাদিক সমাজ’।
এই কর্মসূচিতে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে মুক্তি দেওয়া না হলে দেশব্যাপী সাংবাদিকরা কঠোর আন্দোলনে নামবে।
প্রবীর সিকদারের স্ত্রী অনিকা সিকদার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার স্বামীকে সুস্থভাবে ফিরে পেতে চাই।”
মানববন্ধনে সাংবাদিকদের মধ্যে বক্তব্য দেন, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, অমিয় ঘটক পুলক, আশীষ কুমার দে, খায়রুজ্জামান কামাল, গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের নেতা কামাল পাশা, বাপ্পাদিত্য বসু, অঞ্জন রায় প্রমুখ।
প্রবীর সিকদারকে গ্রেপ্তারের নিন্দা এসেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), অনলাইন জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদশ (ওজাব) এর পক্ষ থেকেও।
তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে মামলার নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতিতে আসক বলেছে, প্রবীর সিকদারের আটক প্রক্রিয়ায় তারা তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছে।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামালের স্বাক্ষর করা বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “আমরা আটক অবস্থায় তার নিরাপত্তার বিষয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। মন্ত্রীর বিরুদ্ধে লেখালেখির জন্য তাকে আটক করা হয়ে থাকতে পারে মর্মে পরিবারের পক্ষ থেকে আশংকা করা হয়েছে। তা স্পষ্ট করার দায়িত্ব সরকারের।”
তার মুক্তি দাবি করে বলা হয়েছে, “আমরা তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের অপব্যবহারের শংকা বারবার প্রকাশ করেছি। এ ঘটনা আবারও আমাদের শংকাকে প্রমাণ করে।”
শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান প্রবীর সিকদার বর্তমানে উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ এবং দৈনিক বাংলা ৭১ নামে পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। তিনি এর আগে সমকাল ও কালের কণ্ঠে কাজ করেছেন।
২০০১ সালে দৈনিক জনকণ্ঠের ফরিদপুর প্রতিনিধি থাকার সময় সন্ত্রাসীর হামলায় গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গু জীবন যাপন করছেন প্রবীর। তার অভিযোগ, একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন লেখার কারণে মুসার ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা ওই হামলা চালায়।
দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তাধীন মুসা বিন শমসের প্রধানমন্ত্রীর ফুপাতো ভাই ও আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বেয়াই (ছেলের শ্বশুর)।
তবে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ফেইসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর সুনাম ক্ষুণ্ণের অভিযোগে ফরিদপুরে দায়ের করা একটি মামলায়।