সাংবাদিক প্রবীর সিকদার কারাগারে

মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে নিয়ে ফেইসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলায় গ্রেপ্তার সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।

ফরিদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2015, 12:46 PM
Updated : 17 August 2015, 04:40 PM

রোববার সন্ধ্যায় ঢাকায় আটকের পর মধ্যরাতে এই সাংবাদিককে ফরিদপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যেই তার বিরুদ্ধে মামলা হয় ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায়।

ফরিদপুরের আইনজীবী স্বপন কুমার পালের করা ওই মামলায় ১০ দিনের জন্য হেফাজতে চেয়ে সন্ত্রাসীদের হামলায় পঙ্গু প্রবীর সিকদারকে সোমবার বিকালে আদালতে নেয় পুলিশ।

বিচার বিভাগীয় হাকিম মো. হামিদুল ইসলাম পুলিশের ওই আবেদনের শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন ঠিক করে প্রবীর সিকদারকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

ফলে প্রবীর সিকদারকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে (রিমান্ডে) পাবে কি পাবে না, তা জানা যাবে মঙ্গলবার।  

সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের বাড়ি ফরিদপুরে। মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন ফরিদপুরের সংসদ সদস্য। মামলার বাদী স্বপন পাল ফরিদপুর পূজা উদযাপন কমিটির উপদেষ্টা।

ফেইসবুকে লেখালেখিকে কেন্দ্র করে হুমকি পাওয়ার পর নিজের নিরাপত্তাহীনতার কথা তুলে ধরে ঢাকায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গিয়েছিলেন একাত্তরে শহীদের সন্তান প্রবীর সিকদার।

কিন্তু পুলিশ ওই জিডি নেয়নি জানিয়ে গত ১০ অগাস্ট নিজের ফেইসবুক পাতায় একটি স্ট্যাটাসে নিজের জীবন নিয়ে ঝুঁকির কথা জানিয়ে তার জন্য মন্ত্রী মোশাররফকে দায়ী করেন প্রবীর।

প্রাণহানির শঙ্কা প্রকাশ করে প্রবীর সিকদারের ফেইসবুক স্ট্যাটাস

‘আমার জীবন শংকা তথা মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী থাকবেন’ শিরোনামের ওই স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন- “আমি খুব স্পষ্ট করেই বলছি, নিচের ব্যক্তিবর্গ আমার জীবন শংকা তথা মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবেন : ১. এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি, ২. রাজাকার নুলা মুসা ওরফে ড. মুসা বিন শমসের, ৩. ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী বাচ্চু রাজাকার ওরফে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এবং এই তিন জনের অনুসারী-সহযোগীরা।”

এই লেখার মাধ্যমে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের অভিযোগ তুলে মামলাটি করেন আইনজীবী স্বপন পাল।

মন্ত্রী মোশাররফ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই। প্রবীর শিকদার গত বছরই প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হয়ে চীনে গিয়েছিলেন।   

প্রবীর সিকদার বর্তমানে উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ এবং দৈনিক বাংলা ৭১ নামের পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। তিনি এর আগে সমকাল ও কালের কণ্ঠে কাজ করেছিলেন।

তারও আগে দৈনিক জনকণ্ঠে ছিলেন প্রবীর। ২০০১ সালে দৈনিকটির ফরিদপুর প্রতিনিধি থাকাকালে সন্ত্রাসীর হামলায় গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গু জীবন যাপন করছেন তিনি।

এই সাংবাদিকের অভিযোগ, একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন লেখার কারণে মুসার ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা ওই হামলা চালায়।

প্রধানমন্ত্রীর ফুপাত ভাই ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বেয়াই বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসার বাড়ি ফরিদপুরে।

মুসা বিন শমসেরকে নিয়ে প্রবীর সিকদারের ফেইসবুক স্ট্যাটাস

দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘সেই রাজাকার’ কলামে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুসার বিতর্কিত ভূমিকার বিবরণ তুলে ধরেছিলেন সাংবাদিক প্রবীর সিকদার, যার পরিবারের ১৪ জন মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন।

সম্প্রতি অনলাইন সংবাদপত্র বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত এক লেখায় মুসা বিন শমসেরকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তুলনা করা হয়। এ নিয়ে নিজের ফেইসবুক পাতায় সমালোচনায় মুখর হন প্রবীর। এরপর তিনি জনকণ্ঠে প্রকাশিত মুসাকে নিয়ে তার লেখা তুলতে থাকেন।

রোববার গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেও মুসাকে নিয়ে ‘জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের'!’ লেখাটি নিজের ফেইসবুক পাতায় তোলেন প্রবীর, সেই সঙ্গে লেখেন-  “যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ছে ! রেহাই নেই কারও !”

এ সব লেখালেখির এক পর্যায়ে হুমকি পেয়েছিলেন বলে জানান প্রবীর। তারপর জিডি করতে ব্যর্থ হয়ে দিয়েছিলেন ফেইসবুক স্ট্যাটাস, যা নিয়ে এখন মামলায় জড়িয়ে কারাগারে গেলেন তিনি।

প্রবীর সিকদারকে গ্রেপ্তারের পর ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দা-প্রতিবাদের ঝড় বইছে। বিক্ষোভ করেছে গণজাগরণ মঞ্চও।