মুক্তাদা আল-সদরের রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণায় ইরাকে সংঘর্ষে নিহত ২০

সদর এই ঘোষণা দেওয়ার পর তার অনুগতরা সরকারি একটি প্রাসাদে হামলা চালায় এবং প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 August 2022, 03:51 AM
Updated : 30 August 2022, 07:18 AM

ইরাকের প্রভাবশালী শিয়া মুসলিম নেতা মুক্তাদা আল-সদর রাজনীতি ছেড়ে অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর বাগদাদে ছড়িয়ে পড়া ব্যাপক সংঘর্ষে ২০ জন নিহত হয়েছে।

সোমবার সদর এই ঘোষণা দেওয়ার পর তার অনুগতরা সরকারি একটি প্রাসাদে হামলা চালায় এবং প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, রাত নামার পর মেশিনগানের গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়, ট্রেসারের আলোয় বাগদাদের গ্রিন জোনের আকাশ আলোকিত হয়ে ওঠে। এই গ্রিন জোনেই ইরাকের মন্ত্রণালয়গুলোর সদরদপ্তর ও বিদেশি দূতাবাসগুলোর অবস্থান। এ রাতে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক লড়াই প্রত্যক্ষ করে ইরাকের রাজধানী।

তিনি সব রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে সরে অবসরে যাবেন, সদর এমন ঘোষণা দেওয়ার পর সারাদিন ধরেই সহিংসতা চলে, পরে রাতে তার অনুসারিদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীদের লড়াই শুরু হয়।

সদর জানিয়েছেন, একটি দুর্নীতিগ্রস্ত ও ক্ষয়িষ্ণু শাসন ব্যবহার সংস্কারে অন্যান্য শিয়া নেতা ও দলগুলোর ব্যর্থতার প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

পরে সদর জানান, সব পক্ষের অস্ত্র ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি অনশন ধর্মঘট করবেন।

কয়েক দশকের যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা, নাগরিকদের মধ্যে সংঘাত ও দুর্নীতি থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করছে ইরাক। এর মধ্যে সদর ও তার শিয়া মুসলিম প্রতিদ্বন্দ্বীদের (প্রধানত ইরান সমর্থিত) মধ্যে চলা রাজনৈতিক অচলাবস্থার ধারাবাহিক অবনতি দেশটিকে আবার সংঘাতের মুখে ঠেলে দিল।

Also Read: ইরাকে রাজনীতি ছাড়ছেন শিয়া নেতা মুক্তাদা আল-সদর

২০০৩ সাল থেকে ইরাকি গোষ্ঠীগুলো সাম্প্রদায়িক সংঘাতে লিপ্ত ছিল, আর সম্প্রতি তারা আন্তঃসাম্প্রদায়িক, আন্তঃজাতিগত রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জড়িয়ে পড়েছে।

সর্বশেষ এ সহিংসতায় সদরের সমর্থকরা (যাদের মধ্যে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত একটি মিলিশিয়া বাহিনীও আছে) ইরান সমর্থিত প্রতিন্দ্বন্দ্বী আধাসামরিক বাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে।

গত বছর অক্টোবরে ইরাকের জাতীয় নির্বাচনে সদরের জোট বেশিরভাগ আসনে জেতে। তখন ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোকে বাইরে রেখে একটি সরকার গঠনের চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে তিনি আর সরকার গঠন করতে পারেনি।

আল-সদর ইরাকের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরান উভয় দেশের প্রভাবের অবসান চান। তাই তিনি প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে জোট গড়তে অস্বীকার করেন। যার ফলে নির্বাচনের পর নয় মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও নতুন সরকার গড়তে পারছে না কেউ।

অচলাবস্থার মধ্যে রাজপথে চলা প্রতিবাদের পক্ষে জুনে পার্লামেন্ট থেকে সরে যান তিনি। তখন তার সমর্থকরা পার্লামেন্টসহ সরকারি দপ্তরগুলো দখল করে রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করে। এসব নিয়ে দিনে দিনে যে উত্তেজনা তৈরি হয় তাই শেষ পর্যন্ত সোমবার নতুন সহিংসতায় গড়ায়।

ইরাকি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গ্রিন জোনের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সদরের পিস ব্রিগেডের যোদ্ধাদের কিছু সংঘাত হয়েছে, কিন্তু ইরানপন্থি মিলিশিয়ারাও সম্ভবত এতে জড়িয়ে পড়েছিল।

সোমবার রাতে কে কার দিকে গুলি ছুড়েছে রয়টার্স স্বতন্ত্রভাবে তা যাচাই করতে পারেনি।

সোমবার সকালে টুইটারে সদরের রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা আসার পর কয়েক সপ্তাহ ধরে পার্লামেন্ট দখল করে থাকা তার অনুগতরা গ্রিন জোনে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে হামলা চালায়। এই প্রাসাদে তার সমর্থকদের সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে, আনন্দ উল্লাস করতে ও পতাকা দোলাতে দেখা যায়।

এ সময়ই সদরের অনুসারিদের সঙ্গে ইরানপন্থি মিলিশিয়াদের সংঘর্ষ শুরু হয়। গ্রিন জোনের ভেতরেই উভয়পক্ষ পরস্পরের দিকে পাথর নিক্ষেপ করতে শুরু করে, এরপর রাত নামলে শুরু হয় সশস্ত্র লড়াই।

পুলিশ ও চিকিৎসা কর্মীরা জানিয়েছেন, অন্তত ১৭ জন নিহত ও বহু আহত হয়েছে।

ইরাকের সামরিক বাহিনী অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করে বিক্ষোভকারীদের গ্রিন জোন ছেড়ে যেতে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

প্রত্যেকটি শিয়া শিবির এ সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে নতুন করে গৃহবিবাদ ছড়িয়ে পড়তে পারে, এমন সম্ভাবনায় উদ্বিগ্ন ইরাকের বহু মানুষ।