দুই দশক পুরনো নির্যাতনের মামলা, অর্থ দিয়ে মিটমাট করল এক্সনমোবিল

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, তারা এক্সনমোবিলের ভাড়া করা ইন্দোনেশীয় সেনাদের হাতে নির্যাতন, যৌন নিপীড়ন ও মারধরের শিকার হয়েছিলেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2023, 12:36 PM
Updated : 16 May 2023, 12:36 PM

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল কোম্পানি এক্সনমোবিলের সঙ্গে গোপন এক আর্থিক সমঝোতায় পৌঁছেছে ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের ১১ গ্রামবাসী।

তারা মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ নিয়ে দুই দশক ধরে চলা একটি আইনি লড়াইয়ের কেন্দ্রে ছিলেন, জানিয়েছে বিবিসি।

এই ১১ গ্রামবাসীর অভিযোগ, তারা এক্সনমোবিলের ভাড়া করা ইন্দোনেশীয় সেনাদের হাতে নির্যাতন, যৌন নিপীড়ন ও মারধরের শিকার হয়েছিলেন।

এক্সনমোবিল বলেছে, তারা ইন্দোনেশীয় সেনাদের বিরুদ্ধে মামলা করা ব্যক্তিসহ যাদের ওপর যে ধরনের নিপীড়ন হয়েছে, সব ধরনের নিপীড়নের নিন্দা জানাচ্ছে।

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ওই সেনারা যৌন নিপীড়ন করার আগে গর্ভবতী নারীদের লাফাতে বাধ্য করেছিল, পুরুষদের বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার পাশাপাশি গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল; এমনকী ছুরি দিয়ে শরীরের পেছনের অংশে গ্রাফিতিও এঁকেছিল নির্যাতকরা।

কেবল তাই নয়, প্রিয়জনদের গুলিবিদ্ধ হতে দেখার কথাও অভিযোগে বলেছেন গ্রামবাসীরা।

এ প্রসঙ্গে তেল কোম্পানিটি তাদের বিবৃতিতে বলেছে, “এটা মনে রাখা দরকার যে, আমাদের কোনো কর্মী ভুক্তভোগীদের সরাসরি ক্ষতি করেছে, এমন কোনো অভিযোগ নেই। তবে সব পক্ষই এখন আপোস-মীমাংসায় পৌঁছেছে।

“আমরা ক্ষতির শিকার লোকজন ও পরিবারগুলোর প্রতি সহমর্মিতা জানাচ্ছি।”

অভিযোগকারীদের ভাষ্য অনুযায়ী, নর্থ আচেহ-র অরুণ গ্যাসক্ষেত্রে এক্সনমোবিলের কার্যক্রম চলার সময় ওই নির্যাতন-নিপীড়ন হয়েছিল।

বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম এই প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্রটিকে এক্সনমোবিলের ‘মুকুটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রত্ন’ বলা হতো।

ইন্দোনেশীয় গ্রামবাসীদের এসব অভিযোগ নিয়ে করা মামলার বিচার চলতি মাসের শেষদিকে ওয়াশিংটনে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুই পক্ষের সমঝোতা হয়ে যাওয়ায় এখন আর তা হবে না।

নিরাপত্তা বিবেচনায় অভিযোগকারীদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি; তবে তারা এক্সনমোবিলের সঙ্গে আর্থিক সমঝোতায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

“কিছুই যখন আমার স্বামীকে ফিরিয়ে আনবে না, তখন এই বিজয়ই ন্যায়বিচার, যার জন্য দুই দশক ধরে লড়েছি এবং এটি আমার ও আমার পরিবারের জীবন বদলে দেবে,” বলেছেন এক গ্রামবাসী।

তাদের আইনজীবী বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও সবচেয়ে লাভজনক একটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ায় মক্কেলদের সাহসের প্রশংসা করেছেন।

“এই সমঝোতার পর গ্রামবাসীরা খানিকটা শান্তি পাবে জেনে আমি আনন্দিত। জবাবদিহিতা আদায়ে দুই দশক ধরে তাদের যে নিষ্ঠা ও অঙ্গীকার ছিল, তা অনুপ্রেরণাদায়ক,” বলেছেন ইন্টারন্যাশনাল রাইটস অ্যাডভোকেটসের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক টেরেন্স কলিংসওর্থ। ২০০১ সালে তিনিই ১১ গ্রামবাসীর হয়ে মামলাটি করেছিলেন।

নাম পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক বাদীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে আর্থিক সমঝোতার বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।

ইন্দোনেশিয়ার মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, আইনি লড়াইয়ের ইতি ঘটলেও ভুক্তভোগীরা যে গভীর মানসিক ক্ষতের ভেতর দিয়ে গেছে আপোস-মীমাংসায় সেটির দিকে নজর দেওয়া হয়নি।

অবশ্য আর্থিক সমঝোতার মাধ্যমে হলেও বর্বরতার এই অভিযোগ বিশ্বের মনোযোগ কেড়ে নেওয়ায় এর গুরুত্বও কম নয়, বলছেন তারা।