যুক্তরাষ্ট্র পথ না বদলালে সংঘাত বাধবে, হুঁশিয়ারি চীনের

যুক্তরাষ্ট্র ন্যায্য বা নিয়মতান্ত্রিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার বদলে চীনকে দমন এবং নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছে বেইজিং।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 March 2023, 10:15 AM
Updated : 7 March 2023, 10:15 AM

ইউক্রেইন সংকট নিরসনে আলোচনায় জোর দেওয়ার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিন গ্যাং বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত চীন নিয়ে তাদের সাম্প্রতিক ভুল নীতিগুলো বদলানো, নাহলে ‘সংঘাত ও সংঘর্ষ’ বেঁধে যাবে।

ন্যায্য বা নিয়মতান্ত্রিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার বদলে যুক্তরাষ্ট্র চীনকে দমন এবং নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

বেইজিংয়ে পার্লামেন্টের বার্ষিক অধিবেশনের ফাঁকে এক সংবাদ সম্মেলনে ছিন এ অভিযোগ করেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

“চীনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গিতে ভয়াবহ গলদ আছে। তারা মনে করে চীন তাদের প্রধান শত্রু এবং সবচেয়ে বড় ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। এটা শার্টের প্রথম বোতাম ভুলভাবে লাগানোর মতোই,” বলেছেন তিনি।

তাইওয়ান, বাণিজ্য ও ইউক্রেইনে যুদ্ধর মতো ইস্যু নিয়ে গত কয়েকবছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্র ও চীন, এই দুই পরাশক্তির মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েন বাড়ছিল; সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে দেখা দেওয়া এক বেলুনকে ঘিরে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থান পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, চীনা ওই বেলুনটি আদতে নজরদারি বেলুন, যে কারণে তারা গত মাসে সেটিকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে।

অন্যদিকে চীনের ভাষ্য, বেলুনটি আবহাওয়া পরিমাপের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছিল এবং সেটি পথভ্রষ্ট হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে ঢুকে পড়েছিল।

ওয়াশিংটন বলছে, তারা চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে গার্ডরেইল (রেললাইনের পাশে বেড়া) দিচ্ছে এবং তারা কোনো সংঘাত চাইছে না। 

কিন্তু এর অর্থ কার্যত এই যে অপবাদের শিকার বা আক্রমণ হলেও চীন কথায় বা কাজে এর প্রত্যুত্তর দিতে পারবে না, বলেছেন ছিন।

“এটা অসম্ভব। যুক্তরাষ্ট্র যদি ব্রেক না চাপে এবং ধারাবাহিকভাবে ভুল পথে দ্রুতগতিতে চলতে থাকে, তাহলে কোনো গার্ডরেইলই তাদের লাইনচ্যুতি ঠেকাতে পারবে না, যার মানে হচ্ছে সংঘাত ও সংঘর্ষ বাঁধবে। কারা এই ভয়াবহ পরিণতির দায় নেবে?,” জিজ্ঞাসা চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর।

একই সংবাদ সম্মেলনে ছিন বলেছেন, অদৃশ্য এক হাত ইউক্রেইন যুদ্ধের উত্তেজনা আরও বাড়াতে চাপ দিয়ে যাচ্ছে।

Also Read: ইউক্রেইন সংকট চলছে ‘অদৃশ্য হাতের’ ইশারায়: চীন

তবে এই ‘অদৃশ্য হাত’ বলতে তিনি কাকে বুঝিয়েছেন, তা খোলাসা করেননি ছিন।

“এই অদৃশ্য হাত ইউক্রেইন সংকটকে কাজে লাগাচ্ছে সুনির্দিষ্ট ভূরাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে,” সংকট নিরসনে আলোচনার ওপর জোর দেওয়া চীনের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন ছিন।

চীন ইউক্রেইন নিয়ে তার অবস্থানে অটল থাকলেও ইউক্রেইনে হামলার জন্য রাশিয়াকে ‘আগ্রাসনকারী’ না বলায় পশ্চিমাদের তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছে।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া যখন তার দক্ষিণপশ্চিমের প্রতিবেশী দেশে সেনা পাঠায়, তারপর থেকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার কথা বললেও এখন পর্যন্ত ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলেননি।

এটা চীনের নিরপেক্ষ থাকার দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে গত মাসে ইউক্রেইন যুদ্ধের বর্ষপূর্তিতে বলেছিলেন বেইজিংয়ে নিয়োজিত কিইভের শীর্ষ দূত।

চীন রাশিয়াকে মারণাস্ত্র দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে- ওয়াশিংটনের এমন অভিযোগও দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করছে বেইজিং।

তবে ছিন বলেছেন, বিশ্ব দিনদিন আরও উত্তাল হয়ে ওঠায় চীনকে অবশ্যই রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হবে।

চীনের এবারের পার্লামেন্ট অধিবেশন শেষে শি রাশিয়া সফরে যাবেন কিনা, এমন প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর দেননি চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

চীনা পার্লামেন্টের এই বার্ষিক অধিবেশন এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলে।

চীন ও রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মার্কিন ডলার ও ইউরোকে ছুড়ে ফেলতে পারে, এমন সম্ভাবনা কতটুকু এমন প্রশ্নের জবাবে ছিন বলেন, দেশগুলোর উচিত যেই মুদ্রা কার্যকর, নিরাপদ ও বিশ্বাসযোগ্য, সেই মুদ্রাতেই লেনদেন করা।

“মুদ্রা একতরফা নিষেধাজ্ঞার তুরুপের তাস, ধমক বা জোরজবরদস্তির ছদ্মবেশ হতে পারে না,” বলেছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র একতরফা নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ‘গুণ্ডামি’ করছে বলে চীন প্রায়ই অভিযোগ করে এসেছে।