ট্রাম্পের বাড়ি থেকে ১১ হাজারের বেশি সরকারি নথি পেয়েছে এফবিআই

যে ১১ হাজারের বেশি নথি ও ছবি মিলেছে, তার ১৮টির লেবেল ‘টপ সিক্রেট’ ও ৫৪টির ‘সিক্রেট’ছিল।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Sept 2022, 09:56 AM
Updated : 3 Sept 2022, 09:56 AM

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ফ্লোরিডার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এফবিআই ১১ হাজারের বেশি সরকারি নথি ও আলোকচিত্র এবং ‘গোপনীয়’ লেখা ৪৮টি খালি ফোল্ডার উদ্ধার করেছে।

শুক্রবার প্রকাশিত আদালতের নথি থেকে এসব জানা গেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, অগাস্টের শুরুতে ওই বাড়ি থেকে জব্দ জিনিসপত্র পর্যালোচনায় বিশেষ কাউকে নিয়োগ দিতে ট্রাম্পের আবেদনের বিষয়ে তার অ্যাটর্নি ও আইন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ দুই কাউন্টারইন্টিলিজেন্স কৌঁসুলির মৌখিক যুক্তিতর্ক শোনার পরদিন ওয়েস্ট পাম বিচের বিচারক অ্যালিক ক্যাননের মাধ্যমে আদালতের এসব নথি প্রকাশিত হয়েছে।

বিশেষ কাউকে নিয়োগ দেওয়া বিষয়ক রায় মুলতুবি রাখলেও ক্যানন যুক্তরাষ্ট্রের আইন মন্ত্রণালয়ের জমা দেওয়া দুইটি নথি প্রকাশে রাজি হয়েছিলেন।

এদিকে ট্রাম্পের আমলে নিয়োগ পাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার নথিপত্র পর্যালোচনায় বিশেষ কাউকে নিয়োগ দেওয়ার উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

“আমার মনে হয় এই পর্যায়ে, যেখানে এফবিআই নথিপত্র নিয়ে এতখানি এগিয়ে গেছে, আমার মনে হয় এ ধরনের কোনো নিয়োগ হবে সময়ের অপচয়,” ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছেন তিনি।

২০২০ সালে হওয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে, ট্রাম্পের এমন দাবির পক্ষে অবস্থান নিতে অসম্মতি জানিয়ে ওই বছরের ডিসেম্বরের শেষদিকে অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন বার।

নথিপত্রগুলো ‘গোপনীয়’ হলে ট্রাম্পের সেগুলো ফ্লোরিডার বাড়ি নিয়ে রাখার ‘আইনি যৌক্তিকতাও’ দেখছেন না বলে সাক্ষাৎকারে বলেছেন তিনি।

“তিনি যেভাবে বলেন যে ‘আমি সব গোপনীয় নয় শ্রেণিভুক্ত করেছি’ এই দাবির বিষয়েও আমি সন্দিহান। এটা মোটামুটি অসম্ভব আর তিনি যদি ভেতরে কী আছে তা পুরোপুরি না জেনেই এই পরিমাণ বাক্স নিয়ে থাকেন এবং বলেন, ‘আমি এখানকার সব নথি গোপনীয় নয় শ্রেণিভুক্ত করলাম’ তাহলে তা এতো বেশি ক্ষমতার অপব্যবহার হবে, এতটা বেপরোয়া কাজ হবে যে নথিগুলো বাড়ি নিয়ে যাওয়ার চেয়েও তা বাজে হয়ে দাঁড়াবে,” বলেছেন তিনি।

শুক্রবার প্রকাশিত নথির একটিতে এফবিআই ট্রাম্পের বাড়ি মার-আ-লগো থেকে যে ৩৩টি বাক্স ও অন্যান্য জিনিস পেয়েছিল, সেগুলোর কিছুটা বিবরণ আছে।

ট্রাম্প বেআইনিভাবে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন কিনা এবং তদন্তে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কিনা, তা নিয়ে এফবিআইয়ের চলমান ফৌজদারি তদন্তের অংশ হিসেবে ফ্লোরিডার ওই বাড়িতে গত ৮ অগাস্ট তল্লাশি চালানো হয়েছিল।

আদালতের এ নথিতে বলা হয়েছে, এফবিআই কর্মকর্তারা ‘গোপনীয়’ লেখা নথিপত্রগুলোকে বই, ম্যাগাজিন, খবরের কাগজের ক্লিপিংয়ের সঙ্গে মিশ্রিত অবস্থায় পেয়েছেন।

কর্মকর্তারা উল্লেখ করা হয়নি এমন উপহার ও পোশাকও পেয়েছেন বলে নথিতে বলা হয়েছে।

যে ১১ হাজারের বেশি নথি ও ছবি মিলেছে, তার ১৮টিতে লেবেল ‘টপ সিক্রেট’, ৫৪টির ‘সিক্রেট’ আর ৩১টির ‘কনফিডেন্সিয়াল’ ছিল বলে সরকারি তালিকা থেকে বের করেছে রয়টার্স।

এর মধ্যে ‘টপ সিক্রেট’ হচ্ছে গোপনীয়তার সর্বোচ্চ স্তর।

ট্রাম্পের ওই বাড়ি থেকে ৯০টি খালি ফোল্ডারও উদ্ধার করা হয়েছে, যার ৪৮টি ‘গোপনীয়’ হিসেবে চিহ্নিত করা ছিল। বাকিগুলোতেও এমন লেবেলিং ছিল যার অর্থ দাঁড়ায়, সেগুলো স্টাফ সেক্রেটারি বা সামরিক কর্মকর্তাদের কাছে ফেরত পাঠানো উচিত।

ওই ফোল্ডারগুলো খালি ছিল কেন কিংবা কোনো নথি খোঁয়া গিয়েছে কিনা, তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি।

বাকি যে নথিটি প্রকাশে আদালতের অনুমতি মিলেছিল, সেটি হচ্ছে আইন মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তিন পৃষ্ঠার একটি বিবরণী, যেখানে ট্রাম্পের বাড়ি থেকে জব্দ নথিপত্র নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাদের পর্যালোচনা কোন পর্যায়ে আছে সে বিষয়ে আদালতকে অবহিত করা হয়েছে।

৩০ অগাস্ট জমা দেওয়া ওই নথিতে বলা হয়েছে, তদন্তকারীরা জব্দ জিনিসপত্রের প্রাথমিক পর্যালোচনা শেষ করেছেন। তারা এখন এগুলো আরও বিস্তৃতভাবে খতিয়ে দেখবেন এবং আরও সাক্ষীর জবানবন্দি নেবেন।

বিচারক ক্যানন যদি ট্রাম্পের আবেদন গ্রহণ করে জব্দ নথিপত্র স্বাধীনভাবে পর্যালোচনায় বিশেষ কাউকে নিয়োগ দেন তাহলে আইন মন্ত্রণালয়ের তদন্তে সাময়িক বিরতি পড়তে পারে।

বৃহস্পতিবারের শুনানিতে ক্যানন অবশ্য বিশেষ কাউকে নিয়োগ দেওয়া হলেও তার পাশাপাশি মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদেরকেও ওইসব নথিপত্রের পর্যালোচনা চালিয়ে যেতে অনুমতি দিয়ে রাখার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

আরও পড়ুন:

Also Read: কট্টর ট্রাম্প সমর্থকরা মার্কিন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি: বাইডেন