কট্টর ট্রাম্প সমর্থকরা মার্কিন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি: বাইডেন

“মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন বাহিনী দেশকে পেছনপানে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর,” পেনসিলভানিয়ায় দেওয়া বক্তৃতায় বলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2022, 06:45 AM
Updated : 2 Sept 2022, 06:45 AM

ডনাল্ড ট্রাম্পের ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ এজেন্ডার সমর্থকরা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

“মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন বাহিনী দেশকে পেছনপানে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর,” পেনসিলভানিয়ায় দেওয়া এক বক্তৃতায় তিনি এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

মূল্যস্ফীতি মোকাবেলা, ইউক্রেইন যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত থাকা বাইডেনকে এখন দুই মাস পর হতে যাওয়া মধ্যবর্তী নির্বাচনের দিকে নজর ফেরাতে দেখা যাচ্ছে।

ওয়াশিংটনের ক্ষমতার ভারসাম্য কোন দিকে হেলে থাকবে, তা মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফলেই নির্ধারিত হবে।

বৃহস্পতিবার রাতে ফিলাডেলফিয়ার ইন্ডিপেন্ডেন্স হলে দেওয়া বক্তৃতায় বাইডেন তার ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময়কার ‘মার্কিন চেতনা পুনরুদ্ধারের’ থিমই বেছে নেন।

তিনি বলেন, ‍দুই বছর আগে ট্রাম্পকে ভোট দেওয়া ৭ কোটি ৪০ লাখ ভোটারের সবাইকে দোষারোপ করছেন না তিনি।

“সব রিপাবলিকানকেও নয়, কেননা রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশও মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইনের পক্ষের লোক নয়।

“কিন্তু রিপাবলিকান পার্টিতে যে আজ ডনাল্ড ট্রাম্প ও এই মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইনপন্থিদের আধিপত্য, এবং তাদের দ্বারাই পার্টিটি পরিচালিত ও প্রভাবিত হচ্ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই,” বলেছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, গত বছর মার্কিন ক্যাপিটলে হানা দেওয়া উন্মত্তদেরকে ট্রাম্পের সমর্থকরা অভ্যুত্থানকারী না ভেবে দেশপ্রেমিক ভাবছে।

“দীর্ঘদিন আমরা নিজেদেরকে বলেছি, যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র সুরক্ষিত। কিন্তু তা নয়। আমাদের এটিকে রক্ষাকে করতে হবে। বাঁচাতে হবে। এর জন্য লড়তে হবে। আমাদের প্রত্যেককে লড়তে হবে,” বলেছেন তিনি।

তার বক্তৃতা চলাকালে একজনকে হ্যান্ড মাইক বাজিয়ে ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপাত্মক শব্দ করতে শোনা যায় বলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিবিসির প্রতিবেদক জানিয়েছেন।

বাইডেন দুইবার ওই বিঘ্নকারীর প্রসঙ্গ টানেন। দ্বিতীয়বার বলেন, “তাদের আপত্তি জানানোর অধিকার আছে। এটাই গণতন্ত্র।”

দেশকে একতাবদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসা বাইডেন সম্প্রতি ট্রাম্পের সমর্থকদের বিরুদ্ধে আক্রমণের মাত্রা তীব্র করেছেন।

কয়েকদিন আগে তিনি ‘উগ্র’ রিপাবলিকানদের সঙ্গে ‘আধা ফ্যাসিবাদের’ যোগসাজশ টেনেছেন।

তার এসব কড়া কড়া মন্তব্যের পাল্টায় রিপাবলিকান নেতারাও ছেড়ে কথা বলছেন না।

বাইডেনের বক্তৃতার কিছুক্ষণ আগে তার জন্মস্থান পেনসিলভানিয়ার স্ক্র্যানটনে দেওয়া এক বক্তৃতায় প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান নেতা কেভিন ম্যাককার্থি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আমেরিকানদের বিভক্ত, হেয় ও অপমান করার পথ বেছে নিয়েছেন।

“কেন? তার নীতির সঙ্গে তারা একমত হতে পারেনি বলে। এটা নেতৃত্ব নয়,” বলেন তিনি। রিপাবলিকান এই নেতা ট্রাম্পকে ভোট দেওয়া কোটি কোটি মার্কিনিকে ‘ফ্যাসিস্ট’ বলায় বাইডেনকে ক্ষমা চাইতেও বলেন।

বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, সীমান্ত উন্মুক্ত রাখা, কোভিডকালে স্কুল বন্ধ রেখে শিশুদের শিক্ষার ক্ষতি, আফগানিস্তান থেকে ‘তালগোল’ পাকিয়ে সেনা প্রত্যাহারে এবং দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অপরাধ ও সন্ত্রাসসহ নানান কিছুতে ভুগছে, বলেছেন ম্যাককার্থি।

“গত দুই বছর ধরে জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের চেতনা, এর জনগণ, আইন ও পবিত্র মূল্যবোধে আঘাত হেনে যাচ্ছেন। তিনি ‍আমাদের গণতন্ত্রকে আক্রমণ করছেন। তার নীতি যুক্তরাষ্ট্রের চেতনাকে ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে,” বলেছেন তিনি।

নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে কোনো ব্যালটেই ট্রাম্পের নাম না থাকলেও রিপাবলিকান নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের ওপর তার প্রভাব প্রবলভাবেই বিদ্যমান।

দিনকয়েকের মধ্যেই স্ক্র্যানটনে একটি সমাবেশে ট্রাম্পের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে; সাবেক এ প্রেসিডেন্টের সমর্থনের জোরেই পেনসিলভানিয়ার অনেক রিপাবলিকান প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন জিতে নিয়েছেন।